গত সোমবার (১৬ নভেম্বর ২০২০) জেলাপ্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ প্রতিরোধে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ নীতি কঠোরভাবে মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে এবং অভিজ্ঞ মহলের ধারণা, সে-আহ্বান কার্যত অকার্যকরতায় পর্যবশিত হবার সমূহ শঙ্কা আছে। তাঁরা মনে করেন, দেশের সাধারণ মানুষ বৈজ্ঞানিক ভাবনাচিন্তায় এতোটাই পশ্চাদপদ যে, তাঁরা কোভিড-১৯-এর মতো একটি অণু-অবয়বী জীবের প্রাণহর আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার কী পদ্ধতি অবলম্বন করবেন দূরে থাক, ভাইরাসটি সম্পর্কেই তাঁদের কোনও ধারণা নেই। এদিক থেকে বিবেচনায় সাধারণ জনগণ পুরোপুরি অরক্ষিত অবস্থায়ই আছেন বলা যায়। এই অরক্ষিত অবস্থায় পর্যুস্ত জনগণকে রক্ষার একমাত্র ভরসা রাষ্ট্র কর্তৃক অবলম্বিত ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থার মধ্যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার যারপরনাই দুর্বলতা ইতোমধ্যেই প্রকটিত হয়েছে। স্বাস্থ্যব্যবস্থাতে বরাদ্দ এমনিতেই কম তদুপরি, প্রমাণিত সত্য এই যে, প্রতিষ্ঠানটি আপাদমস্তক চূড়ান্ত মাত্রায় দুর্নীতিগ্রস্ত। এই কারণে প্রতিষ্ঠানটি করোনাভাইরাসের মতো একটি ভাইরাসের আক্রমণ প্রতিরোধে সক্ষম হতে পারে নি যেমন পেরেছে কেরলা, ভিয়েতনাম ও কিউবার প্রশাসন। অর্থাৎ আমাদের সাধারণ মানুষকে প্রথমেই চূড়ান্ত পর্যায়ে বৈজ্ঞানিক এবং প্রশাসনকে চূড়ান্তমাত্রায় মানবিক করে তুলতে হবে, মানুষকে যেমন হতে হবে বৈজ্ঞানিক উপায়ে স্বাস্থ্যসচেতন তেমনি প্রশাসনকে হতে হবে জনগণের স্বাস্থ্যসুরক্ষায় বদ্ধপরিকর। মোটকথা স্বাস্থ্যব্যবস্থাটিকে বাণিজ্যিক করে তুললে হবে না, সেটাকে হতে হবে মানবিকতাকে পরিপুষ্ট করতে সচেষ্ট সেবাপরায়ণতায় সমাবৃত, স্বাস্থ্যসেবা বিতরণে নেমে মুনাফার পেছনে ছুটলে হবে না।
সে যাই হোক, বিশ্বের প্রতিটি দেশেই নিজেদের মতো করে আসন্ন শীতে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ অর্থাৎ দ্বিতীয় দফা তীব্র আক্রমণের ধাক্কা সামলাতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এই তোড়জোড়ের সময়ে আমরা এখনও অসহায়ত্বের সীমা অতিক্রম করতে পারছি না, বলা হচ্ছে মাস্ক পরিধান করলে ৮০ শতাংশ সংক্রমণ প্রতিহত করা সম্ভব। এর চেয়ে সহজ আর কোনও উপায় আপাতত আমাদের হাতের কাছে নেই। আসুন অমরা সকলে মাস্ক পরি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি। কিন্তু যারা মাস্ক পরা ও ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ নিয়ম মানবেন না, তাঁদের জন্য প্রশাসন কী ব্যবস্থা নেবেন, আমার তার অপেক্ষায় আছি। এই নিয়ম না মানলে তো ৮০ ভাগ সংক্রমণ কার্যকর থাকবেই এবং প্রকারান্তরে বর্তমানের অতিমারি মহামারিতে পর্যবশিত হবে, আটকানো যাবে না।