বিশেষ প্রতিনিধি ::
দোয়ারাবাজারে ‘প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে’ লন্ডনিবাড়ির এক গৃহকর্মীকে রাতের অন্ধকারে খুনের পর ‘উপরের নির্দেশে’ সকালে মাথায় কালোকাপড় বেঁধে শোক প্রকাশ করেও শেষ রক্ষা হয়নি খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত ‘শোকার্তদের’!
গৃহকর্মী খুনের ঘটনার সাথে জড়িত জড়িত থাকার অভিযোগ আটকের পর হত্যা মামলা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। আর ‘উপরে থাকা’ যে ব্যক্তির পরামর্শে শোক প্রকাশের অভিনয় করছিলেন তারা, সেই যুক্তরাজ্য প্রবাসীকেও খুনের হুকুমদাতা করা হয়েছে মামলায়।
মঙ্গলবার রাতে দোয়ারাবাজার উপজেলার গোরেশপুর গ্রামে দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হন যুক্তরাজ্য প্রবাসী কামরান আব্দুল হাইয়ের বাড়ির গৃহকর্মী আব্দুস সালাম (৩৮)। সালাম উপজেলার সদর ইউনিয়নের নৈনগাঁও গ্রামের মুমশ্বর আলীর ছেলে। গত ২০ বছর ধরে ওই বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কর্মরত ছিলেন সালাম।
পুলিশ জানায়, সোমবার রাত ৭টার দিকে প্রবাসী কামরান আব্দুল হাইয়ের মামাতো ভাই মছদ আলী গৃহকর্মী সালামকে কাজের কথা বলে ডেকে নিয়ে যান। অনেক রাত পরও বাড়িতে না ফেরায় খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন প্রতিবেশীরা। ভোরে প্রতিপক্ষ প্রতিবেশীর ধানক্ষেতে লাশ ‘দেখতে পান’ কামরানের মামাতো ভাইয়েরা।
পুলিশ জানায়, দেশীয় অস্ত্র দিয়ে গৃহকর্মী সালামকে হত্যার পর ধানক্ষেতে লাশ পড়ে আছে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে দোয়ারাবাজার থানাপুলিশ। আসার পর দেখতে পায় প্রবাসী কামরানের মামাতো ভাই জয়নাল আবেদীন, আব্দুল ওদুদ, মছদ আলীসহ স্বজনরা মাথায় কালোকাপড় বেঁধে গৃহকর্মীর মৃতুত্যে ‘শোক প্রকাশ’ করছেন। পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও তাদের অসংলগ্ন আচরণে পুলিশের সন্দেহ হলে তিনভাইসহ প্রবাসীর পাঁচ আত্মীয় ও একজন গৃহপরিচারিকাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
দোয়ারাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজির আলম বলেন, খবর পেয়ে সকালে দ্রুত ঘটনাস্থলে আসার পর দেখতে পাই বাড়ির মালিকের স্বজনরা মাথায় কালোকাপড় বেঁধে আছেন। জানতে চাইলে জানান, উপরের নির্দেশে আমরা শোক প্রকাশ করছি। তাদের এমন সংলগ্ন আচরণ দেখে আমাদের সন্দেহ হয়।
তিনি আরও বলেন, প্রবাসীর পাঁচ আত্মীয়সহ ছয়জনকে আটকের পর থানায় নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করে হলে তাদের একজনের কথার সাথে অন্যজনের কথার মিল পাওয়া যায়নি। গ্রামে এমনিতেই দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে চরম বিরোধ ছিল। মনে হয়েছে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার রাতে নিহতের স্ত্রী লাভলী বেগম বাড়ির মালিক, মামাতো ভাই, মামাতো ভাইয়ের ছেলে-সহ ৮ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন।
আসামিরা হলেন- মৃত আব্দুল খালিকের ছেলে যুক্তরাজ্য প্রবাসী কামরান আব্দুল হাই, মৃত জাফর আলীর ছেলে মছদ আলী, জয়নাল আবেদীন, ওজুদ আলী, ইছাক আলীর ছেলে সোহেল মিয়া, অজুদ আলীর ছেলে সামলাম হোসেন ও এমরান হোসেন এবং মৃত আরজদ আলীর ছেলে তাজুল ইসলাম।
মামলার এজাহারে সালামের স্ত্রী দাবি করেন, নিখোঁজের পর খোঁজাখুঁজি করে তার স্বামীর সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। এমন সময় যুক্তরাজ্য থেকে বাড়ির মালিক কামরান তাকে ফোনে জানতে চান তার স্বামীর কী হয়েছে। রাত ১০ টার দিকে আবার ফোন করে বলেন, তুমি মন শক্ত কর। যা হবার সকালে হবে। আমি তোমার ছেলে-মেয়ের দায়িত্ব নেব।
উল্লেখ্য, দোয়ারাবাজার উপজেলার গোরেশপুর (পশ্চিমপাড়া) গ্রামে মসজিদের ক্যাশ ও অধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রবাসী কামরানের মামাতো ভাই এবং ইউপি সদস্য আলী হোসেন গংদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। কামরান হাইয়ের মাতাতো ভাই জয়নাল তার কাছে গচ্ছিত মসজিদের টাকা সুদে লগ্নি করেছেন এমন অভিযোগে ‘একঘরে’ করে রাখা হয় জয়নাল-সহ তার স্বজনদের। এ নিয়ে কয়েক দফা সংঘর্ষও হয়। এই ঘটনায় মামাতো ভাইয়ের পক্ষ নেন কামরান। এছাড়া গ্রামের একটি রাস্তা নির্মাণ নিয়েও ইউপি সদস্য আলী হোসেনের সাথে বিরোধ ছিল প্রবাসী কামরান আব্দুল হাইয়ের।