বাদল কৃষ্ণ দাস ::
গেল বছর ঠিক এই সময়ে প্রতি মণ ধানের দাম ছিল ৬শ থেকে সাড়ে ৬শ টাকা। আর ধানের গাছের ডগা থেকে প্রক্রিয়াজাত গো-খাদ্য হিসেবে খড়ের চাহিদাও তেমন তীব্র ছিল না। কিন্তু এবছর ধান-চাল এবং গো-খাদ্যের দাম আকাশ ছুঁতে চলেছে। হাওরাঞ্চলে এই সময়ে প্রতি মণ ধান ১৩শ থেকে ১৪শ টাকায়ও পাওয়া যাচ্ছে না। তবে গো-খাদ্য হিসেবে প্রচলিত প্রতি মণ খড়ের দামই উঠে এসেছে এলাকা ভেদে ৮শ থেকে ১ হাজার টাকায়। পাশাপাশি গবাদিপশুর স¤পূরক খাবার হিসেবে জেলার বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত রাইসমিল থেকে ধান-চালের সংমিশ্রণ থেকে আলাদাকৃত প্রতি ৫০ কেজি ভুষিগুড়া বিক্রি হচ্ছে ১২শ থেকে ১৩শ টাকায়।
রাইসমিল মালিকরা জানান, ধানের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ধান-চালের গুড়া ভুষির দামও বেড়েছে। হাওরাঞ্চলের লোকজন এসবের মূল্য বৃদ্ধির জন্য করোনার অজুহাত, কয়েক দফা বন্যা, বন্যায় রোপা আমন পচন এবং ব্যবসায়িক অস্থির দুষ্টচক্রকে দায়ী করছেন।
হাওরের সাধারণ লোকজন বলছেন, ধান-চালসহ সকল কৃষিজাত পণ্যের এরকম অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির জন্য মজুদদার চক্রই দায়ী। আর গো-খাদ্য সংকটের কারণ হিসেবে কয়েক দফা বন্যায় বহুলাংশে গো-খাদ্য পচন এবং রোপা আমন অনেকাংশে বিনষ্ট হওয়ায় গো-খাদ্যের আগাম মজুদকরণকে উল্লেখ করছেন। আর এতে কৃষিজাত পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির উত্তাপে তপ্ত হচ্ছেন কৃষিনির্ভর অসংখ্য পরিবার। যে কারণে বাধ্য হয়ে অপমূল্য দরে গবাদিপশু বিক্রির দিকে ঝুঁকে পড়েছেন অনেকেই।
জেলা প্রাণিস¤পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সারা জেলায় গৃহস্থ ঘরে আনুমানিক প্রায় সাড়ে ১১ লাখ গবাদিপশু পালিত হয়ে আসছে। এসব গবাদিপশুর বর্ষাকালীন খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং সংরক্ষণ বিষয়ে কৃষিবিভাগের উদ্যোগে কৃষকদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। কিন্তু প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর কেউই এই প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ অনুসরণ করেন না। যে কারণে হাওর অধ্যুষিত সুনামগঞ্জ অঞ্চলে বর্ষাকালীন গো-খাদ্যের সংকট দেখা দেয়।
জেলা প্রাণিস¤পদ কর্মকর্তা ডা. মো. হাবিবুর রহমান খান জানান, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ইরি-বোরো মৌসুমে জেলায় প্রায় ১২ লাখ টন গো-খাদ্য (খড়) উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু সুনামগঞ্জ অঞ্চলে গেল ইরি-বোরো মৌসুমে প্রাকৃতিক বৈপরীত্য ছাড়াও বর্ষায় কয়েক দফা বন্যায় অনেক খড় পঁচে নষ্ট হয়েছে। তবে ইরি-বোরো মৌসুমে ভেজা খড় সংরক্ষণে কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। কৃষকরা যদি আগাম সময় থেকে কৃষিবিভাগের এসব প্রযুক্তি অনুসরণ করেন তবে বর্ষাকালে গো-খাদ্যের সংকট অনেকাংশে হ্রাস পাবে।