সাজ্জাদ হোসেন শাহ্ ::
তাহিরপুর উপজেলার ৫নং বাদাঘাট ইউনিয়নের সীমান্ত নদী যাদুকাটায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন থামছে না। অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে পড়ে নদীতীরের স্থাপনা। নদীতীরবর্তী গ্রাম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ফসলি জমি, রাস্তাঘাট বিলীনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, নদী থেকে এবং তীর কেটে বালু উত্তোলন বন্ধে উপজেলা প্রশাসন মাঝে মাঝে অভিযান পরিচালনা করলেও অধরা থেকে যাচ্ছে বালুখেকো সিন্ডিকেটের মূলহোতারা। স্থানীয়রা জানান, নদীতে উপজেলা প্রশাসনের অভিযানকালে মাঝে মধ্যে যারা আটক হয় তারা নিতান্তই দিনমজুর ও খেটে-খাওয়া শ্রমিক। মূলহোতারা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ হবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজনের সাথে কথা বলে আরও জানা যায়, স্থানীয় থানা পুলিশের সোর্স পরিচয় দেয় এমন কয়েকজনকে ম্যানেজ করেই রাতের গভীরে চলে নদীর তীর কেটে বালু উত্তোলন।
অনুসন্ধানে জানাযায়, যাদুকাটার দু’তীরের বিভিন্ন অংশ কেটে বালু ও পাথর উত্তোলন করে চলছে স্থানীয় প্রভাবশালী চক্র। প্রতি রাতেই চলে বালুখেকোদের এমন তাণ্ডব। বছরের পর বছর ধরে চলা বালুখেকোদের এমন তাণ্ডবে যাদুকাটার সেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য আজ বিলীনের পথে। একই সাথে হুমকির মুখে পড়েছে নদীতীরবর্তী স্থাপনাসহ ফসিল জমি। বালুখেকো চক্রটি রাতের আঁধারে নদীর উভয় তীরের গ্রাম ঘাগটিয়া, বড়টেক, গড়কাটি, ঘাগড়া, রাজারগাঁও, লাউড়েরগড়, বিন্নাকুলি, মাহারাম, মানিগাঁও, পাঠানপাড়া, কুনাটছড়া, পিরিজিপুরসহ অর্ধশতাধিক গ্রাম সংলগ্ন নদীর তীর কেটে বালু উত্তোলন করছে।
এদিকে যাদুকাটা নদী ভাঙনের প্রভাব পড়েছে এর শাখা নদী বৌলাইতেও। এ ভাঙনের ফলে উপজেলার মানচিত্র ক্রমশই ছোট হয়ে আসছে। ইতোমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। হুমকির মুখে রয়েছে সোহালা, পিরিজপুর, দক্ষিণকূল, নোয়াহাট, পাতারী, তিওরজালাল, বালিজুড়ি, মাহমুদপুর, বারুঙ্কাসহ শতাধিক গ্রাম।
বছরের পর বছর ধরে নদীতে বালুখেকোদের আগ্রাসনে উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে উত্তর বড়দল, বাদাঘাট ও বালিজুড়ি ইউনিয়নের মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা বলেন, যাদুকাটা নদীর পরিবেশ বিপর্যয় ও তীর কাটা রোধে আমরা দীর্ঘদিন থেকে দাবি জানিয়ে আসছি। বিভিন্ন সময় পুলিশ অভিযান চালিয়ে নৌকা আটক করে আবার ছেড়ে দেয়। দুই তিন দিন বন্ধ থাকার পর আবারও শুরু করে তীর কাটা। নৌকা আটক করার পর ছেড়ে দিলে হবে না। প্রশাসনকে আরও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। তীরকাটা রোধে স্থায়ী সমাধানের কথা ভাবতে হবে। যেহেতু এটি সীমান্তবর্তী এলাকা এবং থানা থেকে অনেক দূরে তাই বিজিবিকে এখানে দায়িত্ব দিলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। একই সাথে বালির বস্তা ও পাকা ব্লক দিয়ে নদীর তীর সংরক্ষণ করারও দাবি জানাই।
তাহিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল লতিফ তরফদার বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তা সঠিক নয়। আর আমি যোগদান করে, পূর্বের সব তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে নদীর তীর কাটা বন্ধে ও নদী তীরবর্তী স্থাপনা রক্ষার্থে জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করে যাচ্ছি। অভিযানকালে শুধুমাত্র নিরীহ শ্রমিকরা আটক হচ্ছে মূলহোতারা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোয়ার বাইরে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অভিযান পরিচালনাকালে যাদেরকে স্পটে পাওয়া যাচ্ছে তাদেরকে আটক করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন, এ ব্যাপারে আমরা আরও কঠোর হয়ে অভিযান পরিচালনা করবো।