1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৫ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

ওপারে ভালো থাকিস শিবু…

  • আপডেট সময় রবিবার, ২৩ আগস্ট, ২০২০

:: বিজন সেন রায় ::
ইদানিং ফেসবুক খুলতে কেমন যেন ভয় লাগে। প্রতিদিন কারো না কারো মৃত্যু সংবাদ ভেসে ওঠে মোবাইল স্ক্রিনে। প্রিয় মানুষ হারানোর বেদনা খুবই কষ্টের, খুবই নির্মম। বুধবার (১৯ আগস্ট ২০২০) সকালে ঘুম থেকে ওঠে ফেসবুক খুলেই দেখি আমার বন্ধু অ্যাডভোকেট দিগ্বিজয় শর্ম্মা চৌধুরীর মৃত্যু খবর। মুহূর্তেই আমার চারপাশ যেন থমকে দাঁড়ালো। কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে সংবাদটি মিথ্যা নয়। তবে এই অনাকাঙ্ক্ষিত সংবাদের জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না, দিগ্বিজয় চৌধুরী শিবু’র এভাবে চলে যাওয়া মানতে পারছিলাম না কিছুতেই। তবে মনকে শান্ত রাখার চেষ্টা করলাম। আমার মানসপটে ভেসে উঠতে থাকলো শিবুর সাথে স্মৃতিময় মুহূর্তগুলো।
দিগ্বিজয় চৌধুরী শিবু আমার বন্ধু, আমার স্বজন, আমার সুহৃদ। তাঁদের পরিবারের সাথে আমাদের পরিবারের আত্মীয়তার বন্ধন। সেই সুবাদে সে আমার ভাতিজা। কিন্তু সেই সম্পর্ক ছাপিয়ে শিবু আমার বন্ধু। কাকা-ভাতিজা সম্পর্ক লুপ্তই ছিল।
সুনামগঞ্জ শহরের মল্লিকপুর এলাকায় পাশাপাশি ছিল আমাদের বাস। ১৯৭২ সালে আমরা একসাথে সুনামগঞ্জ কলেজে ভর্তি হই। ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতি তখন তুঙ্গে। আমি ও দিগ্বিজয় ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দিলাম। জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুট, আব্দুল মতিন, ফারুক আহমদ, সেলিম রেজাসহ আমরা আরও অনেকেই ছিলাম ছাত্র ইউনিয়নের একঝাঁক তরুণ কর্মী। দিগ্বিজয় এবং সাব্বির আহমেদ সোহেল ছিল আমাদের গানের পাখি। সারাক্ষণ কলেজ ক্যাম্পাস গানে-কথায় মাতিয়ে রাখতো। আর আমরা ছিলাম তাঁদের গানের ভক্ত। গান-আড্ডা-রাজনীতিই হয়ে ওঠেছিল আমাদের জীবনের সঙ্গী।
একবার দিগ্বিজয় আমাকে নিয়ে আসল জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে। উদ্দেশ্য- গান শেখার তালিম নিবে। তখন শিল্পকলার ওস্তাদ ছিলেন শ্রদ্ধেয় গোপাল দত্ত। দিগ্বিজয় গান শেখার জন্য তাঁর নামের সাথে আমার নামটিও লিখিয়ে নিল। পরে ওস্তাদজি গোপাল দত্তের কাছে নিয়ে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললো- আমার বন্ধু বিজন সেন, সেও গান শিখবে। আমি বললাম- ওস্তাদজি আমার সুর ভাল না। আমাকে দিয়ে গান হবে না। ওস্তাদজি বললেন- সব ঠিক হয়ে যাবে, শুধু লেগে থাকতে হবে। আমি আর শিবু ওস্তাদজিকে প্রণাম জানিয়ে চলে আসলাম। বাইরে এসে শিবুকে বললাম- আমি গান গাইতে পারবো না। কিন্তু শিবু নাছোড়বান্দা। আমাকে সে গায়ক বানিয়েই ছাড়বে। পরদিন আমাকে জোর করে নিয়ে আসল শিল্পকলায় গানের ক্লাসে। এভাবে সপ্তাহখানেক আসার পর আমি ফাঁকি দিয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। তবে দিগ্বিজয় ঠিকই গানের সাধনায় মগ্ন ছিল এবং শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হল।
একদিন দিগ্বিজয় আমাকে জানালো সিলেট বেতারে তাঁর গান প্রচার হবে, রাত ৮টায়। এই খবর জানতে পেরে আমাদের বন্ধুমহলে খুশির জোয়ার। আমরা বেশ ক’জন মিলে সন্ধ্যা ৭টা থেকেই রেডিও ঘিরে বসে রইলাম। রাত ৮টা যেন বাজতেই চায় না। সবার মধ্যে একটা চাপা উত্তেজনা। ঠিক রাত ৮টায় সিলেট বেতার থেকে ঘোষণা করা হল- এবারে গান গাইবেন শিল্পী দিগ্বিজয় শর্ম্মা চৌধুরী। গান শুরু হল, আমরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তার গান শুনলাম। আহা কী মিষ্টি আওয়াজ, কী মায়াবী সুর…।
জেলা শিল্পকলা একাডেমির নির্বাচন হবে। দিগ্বিজয় আমাকে ডেকে পাঠালো। বললো- আমরা প্যানেল দিব। আমি সাধারণ সম্পাদক পদে আর তোকে সহ-সভাপতি পদে লড়তে হবে। আমি রাজি হলাম। পরবর্তীতে আমাদের পুরো প্যানেল বিজয় হল। অ্যাডভোকেট গোলাম রব্বানীর প্যানেলের কেই বিজয়ী হতে পারলেন না।
এভাবেই জীবনের নানা পরতে পরতে শিবু আমার সাথে জড়িয়ে ছিল অথবা আমি জড়িয়ে ছিলাম শিবুর সাথে। ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে তাঁর সাথে আমার কত-শত স্মৃতি তা লিখে শেষ করা যাবে না। শিবুর এভাবে চলে যাওয়া আমি মানতে পারছি না কিছুতেই। বন্ধু… তোর হাসিমাখা মায়াবী মুখ কখনো ভুলতে পারবো না। ভুলতো পারবো না- সুরমা নদীর তীরে বা কলেজ ক্যাম্পাসে প্রাণখোলা আড্ডায় তোর দরদভরা গান।
আমি যতই লিখতে চাচ্ছি প্রতিটি মুহূর্তে কলম আটকে যাচ্ছে। চোখের কোণে জল খুব বাড়ন্ত। আর লেখা সম্ভব নয়। শুধু বলি- বিদায় বন্ধু, আবার দেখা হবে- সেই অচিন দেশে, অচিন গাঁয়ে। ওপারে ভালো থাকিস শিবু…।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com