মাসুম হেলাল ::
সুনামগঞ্জের বাজার থেকে বিপুল পরিমাণে দেদার ধান কিনে নিয়ে মজুদ করছেন বাইরের পুঁজিপতি ব্যবসায়ীরা। একমাস ধরে চলা এই পরিস্থিতি কয়েকগুণ গতি পেয়েছে বন্যা পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে। বানের পানি ধানের মিল ও ব্যবসায়ীদের গুদামে ঢুকার শঙ্কায় মজুদ ধান বাইরের জেলার ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রির পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় চালের বাজার স্থিতিশীল থাকলেও বিপুল পরিমাণ ধান জেলার বাইরে চলে গেলে স্থানীয়ভাবে ধান-চালের মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বন্যায় ঝুঁকিপূর্ণ মিলগুলো চিহ্নিত করে সেখানে মজুদ ধান-চাল সরকারিভাবে ক্রয় করে গুদামজাত করার পরামর্শ দিয়েছেন সুনামগঞ্জের ব্যবসায়ীরা।
প্রসঙ্গত, সুনামগঞ্জ জেলায় গত বোরো মৌসুমে প্রায় ১৩ লাখ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছে।
জানা যায়, সুনামগঞ্জ জেলায় প্রায় ৫ শতাধিক ছোট-বড় চালকল রয়েছে। বোরো মৌসুম শেষে মিল মালিক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এসব চালকলে বিপুল পরিমাণ ধান মজুদ করে রাখেন, যেগুলো ভাঙিয়ে পরবর্তীতে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা হয়। জেলার বৃহৎ ধানের মোকাম হিসেবে পরিচিত মধ্যনগর ও দিরাইয়েও মজুদ করা হয় বিপুল পরিমাণ ধান। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ধান স্থানীয় মিলে ভাঙিয়ে চাল বিক্রি করায় চালের বাজারমূল্য অনেকটাই কম থাকে। চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে এই স্থানীয় মিলে ভাঙানো চাল বড় ভূমিকা রাখে।
সূত্র জানায়, দুই দিন আগে জেলার বেশিরভাগ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়ায় স্থানীয় চালকল ও ব্যবসায়ীদের গুদামের কোনও কোনটিতে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। অনেকক্ষেত্রে পানি ঢুকার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে মিল মালিক ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মজুদ ধান-চাল বেশি পরিমাণে কিনে নিচ্ছেন বাইরের ব্যবসায়ীরা। বন্যা পরিস্থিতির মাঝেও জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে শত শত ট্রাক ও নৌকা বোঝাই ধান চলে যাচ্ছে বাইরের জেলায়।
সূত্রমতে, স্থানীয়ভাবে মজুদ ধান-চাল জেলার ভিতরে রাখতে না পারলে দ্রুতই এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে চালের খুচরা বাজারে। বর্তমান দামের তুলনায় বেশি দামে ক্রেতাকে চাল কিনতে হবে। আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে স্থানীয় চাহিদা মেটানোর জন্য দ্বিতীয় দফা পরিবহন ভাড়া দিয়ে নিয়ে আসতে হবে চাল।
সুনামগঞ্জের শহরের রাসেল অটো রাইস মিলের মালিক আলহাজ আবুল কালাম বলেন, বন্যা পরিস্থিতি শুরুর মাসখানেক আগ থেকেই বাইরের ব্যবসায়ীরা জেলা থেকে বাজারমূল্যের চেয়ে অধিক দামে ধান কিনতে শুরু করেছেন, যেটা রহস্যজনক। বানের পানি আসার পর থেকে এতে আরো গতি পেয়েছে। তিনি বলেন, তারা যে হারে ধান কিনছেন, তাদের তাদের উদ্দেশ্য ভাল বলে মনে হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে প্রশাসন যদি বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ না করে তবে আগামীতে চালের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা অটো রাইস এন্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সভাপতি মো. জিয়াউল হক বলেন, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ধান কিনে ভাঙিয়ে বিক্রি করার কারণে এখানকার ভোক্তারা তুলনামূলক কম দামে চাল কিনতে পারেন। কিন্তু এইবার বাইরের পুঁজিপতি ব্যবসায়ীরা যে হারে ধান কিনে নিয়ে যাচ্ছেন তাতে জেলার বাজারে শীঘ্রই চালের মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। জনস্বার্থের কথা বিবেচনা করে বিষয়টির দিকে প্রশাসনকে নজর দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, এ বিষয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করে বিস্তারিত জেনে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।