1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:০০ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

মনের দুঃখ কার কাছে জানাই? : সুখেন্দু সেন

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২২ মে, ২০২০

বাউলের মনপোড়া দীর্ঘশ্বাসে আম্ফানের আউলা ঝড়। ঘরপোড়া বাউল তবু গান গায়। বিমান বন্দরের সামনে মুখ থুবড়ে পড়ে লালন। খাঁচার ভিতর অচিন পাখি উড়ে যায়, তবু বাঙালিত্বের প্রাণে প্রাণে প্রাণের স্ফূরণে লালন থেকে যায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ওস্তাদ আলাউদ্দীন খা স্মৃতি যাদুঘর পুড়ে। সুরসম্রাটের ব্যবহৃত সরোদ, সেতার, তানপুরা ছাই হয়। লণ্ডভণ্ড হয় মহার্ঘ্য স্মৃতিসম্ভার। থেমে থাকে কি সুর। অসুরের বিরুদ্ধে ওস্তাদ আলাউদ্দীন খা’র সুরের ঝংকার আজো ঝংকৃত বিশ্বময়। বাউল শাহ আব্দুল করিমের বাড়িও আক্রান্ত হয়েছে কয়েকবার। আব্দুল করিমকে থামানো যায়নি। উজান ধল ভাটির সীমানা পেরিয়ে করিমের গান ঢেউ তুলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।
হায় হিংসার বিষ পুত্ররা, মতিঝিলে অবলা বলাকার গলায় রশি লাগালে। বিষময় ক্রোধে ভেঙ্গে ফেললে বগলার ঠ্যাং। সংস্কৃতির মুক্ত বলাকামন কি থেমে রয়। বাংলার নীলাকাশে ডানা মেলে ওড়ে। এক সময় হুমকি এসেছিলো অপরাজেয় বাংলা গুড়িয়ে দেয়ার। লেডি জাস্টিয়া লজ্জায় মুখ ঢেকে পালিয়ে গেলেও অপরাজেয় বাংলার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের পক্ষ থেকে প্রতিরোধের ডাক আসে। নিবৃত হয় অপশক্তিরা। তবুও সংগ্রাম আন্দোলনের শিল্পপ্রতীক ভাস্কর্যরা নিরাপদ নয়। সুযোগে আক্রান্ত হয়। বাদ পড়েনি বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যও।
বাঙালির চেতনার ঠিকানা ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সকল আন্দোলন সংগ্রামের আস্থার কেন্দ্রভূমি শহীদ মিনারও বার বার আক্রান্ত হয়েছে। প্রথম নির্মাণের কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানেই তা ভেঙে দিয়েছিল পাকিস্তানি পুলিশ, সেনারা। থেমে গিয়েছিল কি ভাষাকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ। ছাপ্পান্ন সালে আবার সেটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। মূল নকশা পূর্ণ বাস্তবায়ন না হলেও তেষট্টির একুশ ফেব্রুয়ারি আবার মাথা তুলে শহীদ মিনার। ভাষা আন্দোলনের এ শহীদ মিনারই পথ দেখায় স্বাধিকার আন্দোলনের। দেয় মুক্তির দিশা। একাত্তরের পঁচিশে মার্চ কালরাত্রিতে আবার গুড়িয়ে দেয়া হয় শহীদ মিনার। কিন্তু আটকে রাখা যায়নি বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম। রক্ত সাগর পেরিয়ে আসে স্বাধীনতা। একুশে ফেব্রুয়ারি হয়ে ওঠে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আর ঢাকার শহীদ মিনার বিশ্বের সকল ভাষাভাষী মানুষের মাতৃভাষার প্রতীক মিনার।
সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে আমাদের গর্বের জায়গাটিকে যারা আন্তর্জাতিক সীমানায় পৌঁছে দিয়েছেন রাধারমণ, হাছন রাজা, শাহ আব্দুল করিম, দূরবীন শাহ-রা গানে গানে হয়ে ওঠেন স্মারকস্তম্ভের মতোই আমাদের প্রাণপ্রতীক। তাদের সৃষ্টি আমাদের সাংস্কৃতিক গৌরবকে, আমাদের ঐতিহ্যকে পৌঁছে দেবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। আমাদের পরিচয়ে মিলেমিশে রয়ে গেছে হাছনের মরমীয়া, রাধারমণের ভাববিলাস, করিমের বাউলা। এ থেকে বিচ্যুত হলে জাতি হিসেবে আমাদের পরিচয়ের সংকট সৃষ্টি হয়। সেই শাহ আব্দুল করিমের ভাবশিষ্য রণেশ ঠাকুরের পোড়া দোতারার তার আমাদের সংস্কৃতির শিকড় ধরে টান দিয়ে যায়।
সংস্কৃতির উপর এমন আঘাতের পুনরাবৃত্তি ঘটেই চলছে। উদীচী’র সম্মলন, পহেলা বৈশাখে গ্রেনেড হামলাসহ তালিকা হয়তো অনেক দীর্ঘ হবে। কিন্তু প্রতিকারটা কি হচ্ছে? আমাদের ঐতিহ্যময় সংস্কৃতির উদার জমিন কি হয়ে যাবে শকুনের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র?

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com