রাত পোহালেই ঈদ। অথচ ঈদের সেই চিরচেনা সুর যেন বাজছেই না। ঘরবন্দী মানুষের ঈদ আর কেমনইবা হবে। এসব ভাবতেই চোখের কোণ গলে বৃষ্টি মতো ঝরছে অশ্রু। একদিন এই পৃথিবী তাবত কিছু নিয়ন্ত্রণ ছিলো মানুষের। আজও আছে হয়তো। কিন্তু তবুও যে মানুষ কতোটা অসহায় তা এই করোনাকাল মনে করিয়ে দিলো। প্রকৃতি মানুষকে চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিলো, তোমরা যা কিছু করতে পারো আর যা কিছু করতে পারো না। তা এখন ভাবার সময় এসেছে। কোনো এক কবির কবিতা আওড়াচ্ছে নিতু– “স্বপ্নচুরি হতে দিও না, ধুলো হয়ে উড়ে যাবে জীবনের চাওয়া-পাওয়া।”
অবশ্য কবির নামটা তার মনে আসছে না। কিন্তু যা কিছু তার মনে আসছে তাই সে তার খাতায় লিপিবদ্ধ করছে। কেননা, সে জানে না কালকে ঈদের মাঠে কয়জন মানুষে সমাগম হবে। কতোজন মানুষ স্বজনহারা হয়ে এতিম হিসেবে ঈদগাহ ময়দানে হাজির হবে। মোনাজাতে তার চোখে কি মৃতদের কথা ভেবে একফোঁটা জল গড়াবে। গড়াতেই পারে। না গড়ানোটা অসম্ভব কিছুই নয়। এমন তো আগেও হয়েছে। ইমাম সাহেব মোনাজাতে কান্না করছে নিতু হাসছে খিলখিল করে। পাশে থাকা অন্যরা তাকে সাবধান করে দিচ্ছে। যাই হোক এমন গভীর রাতে জানালায় বসে নিতু শুধু এসবই ভাবছে আজ। ভাবারই কথা, সিগারেটতো এমনি এমনি পোড়ে না, তাতে আগুন দিতে হয়ে। চোরতো আর মেইন গেট দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে চুরি চিন্তা করবে না। যা এসব কি আজগবি চিন্তা তার মাথায় আসছে। ছি ছি ছি।
একটু পরেই আঁধারের বুক চিরে বেরুবে একমুঠো দীর্ঘশ্বাস। আঁধারকে ভেদ করে আসবে ভিটামিন সূর্য। পৃথিবীটা আলোকিত হবে নতুন আনন্দ নিয়ে। এই আনন্দে নিতুর মতো করে অনেকেই অতীত স্মৃতির জাবর কেটে কেটে ক্লান্ত হয় ঘুমিয়ে পড়বে। ঘুম ভেঙে গেলে দেখবে পৃথিবীতে মানুষ মাত্র ক্ষণিকের জন্য ঈদের আনন্দ পায়। এই স্বল্প আনন্দের জন্যই পৃথিবীর সকল আনন্দকেই নিজের মুঠোতে বন্দী করে পৃথিবীর প্রতিদিনের ঈদকে ধ্বংস করে দেয়।
গতোবছরও আজকের এই রাতে নিতুর রাতের সঙ্গী ছিলো প্রিয়তমা রুপা। সারারাত কতো গল্প আর ভ্রমণের নকশা কষে এই রাত কেটেছে। অথচ, আজ শুধু স্মৃতি। এই স্মৃতিও সে বহন করতে অক্ষম। অথচ চোখের কোণ বেয়ে এখনো আসে আগামীর কয়েক দশকের নকশা করা কতো স্বপ্ন…