২০১৭ সালে আগাম বন্যায় তলিয়ে যায় সুনামগঞ্জ জেলার আবাদকৃত শতভাগ বোরো ফসল। জেলার ৬০-৭০ ভাগ মানুষের জীবন-জীবিকা চলে এই একটিমাত্র ফসলের উপর নির্ভর করে। সেদিন প্রান্তিক কৃষকের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে হাওরের আসমান-জমিন।
জানা কথা, সেবারের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মূলত আগ্রাসী রূপ নেয় কিছু মানুষের লোভের কারণে। তারা ‘হাওরের মাটি কলম দিয়ে কাটার’ যাবতীয় বন্দোবস্ত করেছিলেন। এমন এক বাস্তবতায় কৃষকের অধিকারের পক্ষে নানা শ্রেণিপেশার মানুষ এক হয়ে গড়ে তুলেছিলেন একটি সংগঠন, যার নাম ‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’।
সেই থেকে অদ্যাবধি হাওরবাসীর অধিকারের পক্ষে ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ করে যাচ্ছেন এই সংগঠনের সদস্যরা। হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম, দুর্নীতি ও গাফিলতির বিরুদ্ধে তাঁরাই দৃশ্যমান প্রতিবাদ করে আসছেন। বাঁধে বাঁধে গিয়ে কাজের গুণগত মান পর্যবেক্ষণ করছেন। অনিয়মের বিরুদ্ধে সভা, সমাবেশ মানববন্ধনের করছেন রাজপথে দাঁড়িয়ে। স্মারকলিপির মাধ্যমে সজাগ করছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।
বলা চলে, ভাসানপানি আন্দোলনের পর সুনামগঞ্জে কৃষক শ্রেণির অধিকারের পক্ষে সফল কোনো আন্দোলন গড়ে ওঠে থাকলে সেটা হচ্ছে হাওর বাঁচাও আন্দোলন।
জেনে রাখুন, এই সংগঠনের সদস্যরা কারো বেতনভুক্ত কর্মচারী নন। নিজেদের শত সীমাবদ্ধতার মাঝেও বঞ্চিত হাওরবাসীর কল্যাণের কথা বিবেচনা করে পকেটের পয়সা খরচ করে সাধ্যমাফিক তাদের পক্ষে কথা কথা বলার প্রয়াস চালাচ্ছেন, এখানে কোন ধান্ধা-ফিকির কেউ করছেন না। এবং সেটা কেউ প্রমাণও করতে পারবেন না।
চলতি মৌসুমেও বাঁধের নির্মাণকাজ শুরুর পর থেকে অদ্যাবধি এই আন্দোলনের পক্ষ থেকে কতগুলো কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে সেটার সাক্ষী জেলাবাসী। এই আন্দোলনের কর্মকাণ্ড কোন ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠীর কাছে পর্যাপ্ত মনে না হলে হাওরবাসীর অধিকারের পক্ষে একটি সংগঠন দাঁড় করানোর সুযোগ তাঁদের রয়েছে। তাঁদেরকে স্বাগত জানাই, সুযোগ দিলে সহযোগীও হতে চাই।