মোসাইদ রাহাত ::
দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত তিনজন রোগী শনাক্ত হওয়ার পর কারো মাঝে এই রোগের লক্ষণ দেখা দিলে কিংবা আক্রান্ত হলে, তাদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য সুনামগঞ্জ জেলার দুটি হাসপাতালে বিশেষ ইউনিট প্রস্তুত করা হয়েছে। সদর হাসপাতাল ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০০টি বিশেষায়িত শয্যায় (আইসোলেশন) চিকিৎসা দেওয়া হবে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ও রোগের লক্ষণ দেখা দেওয়া ব্যক্তিদের।
করোনা ভাইরাস নিয়ে জনগণকে আতঙ্কিত না হয়ে এই ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করতে সর্বসাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, করোনা ভাইরাস সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে এবং এই রোগ মোকাবেলা করতে প্রচার-প্রচারণার জন্য জেলার সকল উপজেলায় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এমন রোগী শনাক্ত হলে কিংবা এই রোগের লক্ষণ দেখা দিলে সদর হাসপাতালের পুরাতন ভবনের দ্বিতীয় তলায় ৫০টি শয্যা সমন্বয়ে তৈরি করা হয়েছে আইসোলেশন ইউনিট। দুটি ওয়ার্ডের একটিতে রাখা হবে পুরুষ রোগীদের, অপরটিতে মহিলা রোগীদের। পরিস্থিতি আরো অবনতি হলে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় নবনির্মিত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আরো ৫০ শয্যার বিশেষায়িত ইউনিটে চিকিৎসা দেওয়া হবে আক্রান্ত রোগীদের। তাছাড়া বিদেশ ফেরতদের জন্য আলাদা কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করা না হলেও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের। তাছাড়া আবহাওয়া পরিবর্তন হওয়ার দরুন হঠাৎ জ্বর, সর্দি ও কাশিতে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে। সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের পুরাতন ভবনের অন্য একটি কক্ষে চিকিৎসা দেওয়া এইসব রোগীদের। আক্রান্ত রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য জেলা পর্যায়ে কাজ কাজ করবেন ১০ জন ডাক্তার।
সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানায়, রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলেও কোরনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি সনাক্ত করতে এই রোগের লক্ষণ দেখা দেওয়া ব্যক্তিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর দেওয়া হট লাইনে ফোন করতে হবে। তাদের লোকজন গিয়ে লক্ষণ দেখা দেওয়া ব্যক্তির কাছ থেকে ভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে আসবেন।
সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুটকে উপদেষ্টা এবং জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদকে সভাপতি ও সিভিল সার্জন ডা. শামস উদ্দিনকে সদস্য সচিব করে ১১ সদস্যবিশিষ্ট করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের পুরাতন ভবনের দ্বিতীয় তলায় সাবেক শিশু ওয়ার্ডকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা প্রদানের জন্য তৈরি করা হয়েছে।
সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। সদর হাসপাতালের পুরাতন ভবনটিকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহভাজন ও আক্রান্ত রোগীদের আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা প্রদান করা হবে। এই রোগ মোকাবেলায় সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত রয়েছে।
সিভিল সার্জন ডা. শামস উদ্দিন বলেন, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে আমাদের শতভাগ প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। জেলার দুটি হাসপাতালে ১০০টি শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে। রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের কলা-কৌশল শেখাতে চিকিৎসক ও নার্সদের নিয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হবে।