‘পৌরসভার ড্রেনের উপর কোন ব্যক্তি দেয়াল তোলতে পারেন না। আমরা সেটি খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারি তিনি অবৈধভাবে ড্রেনটির উপর দেয়াল ও বাথরুম নির্মাণ করেছেন। তাই সেটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এমন কাজের পুনরাবৃত্তি হলে তাকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।’ কথাটি বলেছেন আমাদের সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত। এই বক্তব্য তেমন আহামরি কোনও কীছু একটা নয়, যে-কারও তা মনে হতেই পারে এবং এমনকি কেউ হয় তো ভাবতে পারেন যে, মেয়র মানুষের কাছে প্রিয় হওয়ার জন্যে এমন বলেছেন। কিন্তু আসলে ব্যাপারটি এই যে, এই অবৈধদখল উচ্ছেদ করে ইতোমধ্যে মেয়র নাদের বখত পৌরবাসীর মন কেড়ে নিয়েছেন, তিনি আরও প্রিয়, আরও অধিক গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছেন পৌরবাসীর কাছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কারণ কারও না কারও কর্তৃত্বের সময় এই অন্যায়টি সংঘটিত হয়েছিল এবং তাঁর (নাদের বখত) কর্তৃত্বের সময়ে উচ্ছেদ ঘটেছে, এই সহজ সত্যটি কাউকে বুঝিয়ে দেওয়ার কোনও দরকার আছে বলে মনে হয় না। যিনি পৌরপিতার আসনে বসে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবেন না, যিনি ন্যায়ের পক্ষে থাকবেন তাঁকেই পৌরবাসী ভালোবাসবেন।
আসলে এই উচ্ছেদের অন্য একটি তাৎপর্য আছে। তাৎপর্যটির বিভিন্ন দিক আছে। এই উচ্ছেদ প্রমাণ করেছে অন্যায়ের প্রতিকার কোনও না কোনও সময় হয়, এর কোনও অন্যথা হয় না। পৌরসভা প্রশাসনের পক্ষে সব সময় চোখ বুজে অন্যায়কে মেনে নেওয়া কিংবা সমর্থন করার, তা যে-কোনও স্বার্থেই হোক না কেন, কোনও অর্থ হতে পারে না। কোনও না কোনও সময় অন্যায়ের প্রতিকার হবেই এবং শেষ পর্যন্ত অন্যায়কারী ও অন্যায়ের প্রশ্রয়দাতাকে ধিক্কার জানাবেই, একটু সময়ের অপেক্ষা মাত্র। তাছাড়া পৌরবাসীর কাছে এটি একটি পরিষ্কার বার্তা বহন করে নিয়ে গেছে। সে-বার্তাটি হলো পৌরসভার কোনও জায়গাজমি অবৈধদখলে রাখার অধিকার কারও নেই এবং সেটা করে দেখানোর সাহসও যেনো আর কেউ না করেন।
সংশ্লিষ্ট দখলটি ৫০টি পরিবারের ১৫ বছর ধরে প্রতিকারহীন ভোগান্তির কারণ হয়ে বিরাজ করেছিল। বিপরীতে ১৫ বছর ধরে একজন ধনাঢ্য ব্যক্তির অন্যায় ও অবৈধ দখল লালসাকে চরিতার্থ করার পক্ষে অনুগত ছিল পৌরসভা। নাদের বখত অবৈধ দখলকে উচ্ছেদ ও অন্যায়কে প্রশ্রয় না দেওয়ার বিচক্ষণতা প্রদর্শন করে পৌরসভাকে প্রভাবশালী ও ধনীলোকের প্রতি অন্যায় আনুগত্য প্রদর্শনের লজ্জা থেকে রক্ষা করেছেন এবং সেই সঙ্গে প্রমাণ করেছেন তিনি আয়ূব বখত জগলুলের যোগ্য উত্তরসূরি। আমরা তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। এই সঙ্গে ধন্যবাদ জানাই আমাদের প্রিয় পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানকে, তিনি এই অবৈধ ও অন্যায় দখলের উচ্ছেদ আবেদনে সুপারিশ করেছিলেন।