শহীদনূর আহমেদ ::
এনেসথেসিওলজিস্টসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পদগুলো প্রায় শূন্য থাকায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে রোগীর অপারেশন বন্ধ রয়েছে। এছাড়া ২৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে ডাক্তার, নার্সসহ অন্যান্য পদে লোকবল সংকটের কারণে জনগণ কাক্সিক্ষত চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাদের এই বঞ্চনার বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা ওয়াকিফহাল হলেও সংকট উত্তরণে কার্যকর উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত এ নিয়ে বার বার আলোচনা-সমালোচনা হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
সম্প্রতি জাতীয় সংসদে সুনামগঞ্জ হাসপাতালে ডাক্তার সংকট ও চিকিৎসা সেবার মান নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন বিরোধী দলের হুইপ ও সদর আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ। সকল সমস্যা নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগী হওয়ার দাবি জানান তিনি।
এদিকে, সদর হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ পদে লোকবল না থাকা ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অভাবে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। এনেসথেসিওলজিস্ট-সহ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় এক মাসের বেশি সময় ধরে কোন প্রকার অপারেশন হচ্ছে না হাসপাতালটিতে। এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাফি, ইসিজিসহ গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হয় না লোকবল না থাকায়। এসব কারণে হাসপাতালে প্রত্যন্ত এলাকা থেকে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সাধ্যের বাইরে প্রাইভেট ক্লিনিকে কিংবা জেলার বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করাতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। যাদের সামর্থ্য নেই তারা রোগের সাথে লড়াই করে ধুঁকে ধুঁকে সময় পার করছেন।
সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে ৫৯ জন ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ১৬ জন। এনেসথেসিওলজিস্ট, রেডিওলজিস্টসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে ডাক্তার না থাকায় রোগ নির্ণয়সহ অপারেশন করা সম্ভব হচ্ছে না। ইএনটি অপারেশন ও গাইনি বিভাগের অপারেশনও বন্ধ রয়েছে ডাক্তারের অভাবে। ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা রোগী এবং তাদের স্বজনরা। উন্নত চিকিৎসার জন্যে তাদের অন্যত্র যেতে হচ্ছে। অনেক সময় রোগীকে নিয়ে সিলেটে যাওয়ার পথে ঘটছে মৃত্যুর ঘটনা।
জেলার প্রধান হাসপাতালের এমন অবস্থায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীসহ সচেতন মহল। স্বাস্থ্যখাতের এই অচলাবস্থা নিরসনে অচিরেই এনেসথেসিওলজিস্টসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে লোকবল নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন তারা।
সমাজসেবক সুবিমল চক্রবর্তী চন্দন বলেন, আমি সোমবার একজন রিকসাচালককে নিয়ে ছোটখাটো একটি অপারেশন করানোর জন্য সদর হাসপাতালে নিয়ে যাই। হাসপাতালে কর্তব্যরতরা জানালেন এনেসথেসিওলজিস্ট না থাকায় কোনো অপারেশন হচ্ছে না। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জেলার প্রধান হাসপাতালের এমন অবস্থা কিছুতেই মানা যায় না। এই অচলাবস্থা নিরসনে জেলাবাসী দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. রফিকুল ইমলাম বলেন, এক মাস সময় ধরে সদর হাসপাতালে রোগীদের মেজর অপারেশন করা যাচ্ছে না। হাসপাতালে এনেসথেসিওলজিস্টের দায়িত্বে থাকা ডা. জয়ন্ত কুমার অবসরে পাওয়ার পর বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. শাকিলকে হাসপাতালে ডেপুটেশনে নিয়ে আসা হয়। কিছুদিনের মধ্যে তিনিও বদলি হয়ে ঢাকায় চলে যান। তারপর থেকে হাসপাতালের এনেসথেসিওলজিস্টের পদটি শূন্য রয়েছে। ফলে অপারেশন করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ পদে ডাক্তার শূন্য রয়েছে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডা. শামস উদ্দিন বলেন, আমি কিছুদিন হলো নিয়োগ পেয়েছি। নিয়োগ পাওয়ার পর হাসপাতালের লোকবল সংকটের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। একদিন আগেও পরিকল্পনামন্ত্রী মহোদয়ের সাথে এ নিয়ে কথা হয়েছে। ডাক্তার নিয়োগের জন্যে মন্ত্রী মহোদয় ও স্থানীয় সংসদ সদস্য মন্ত্রণালয়ে ডিও লেটার পাঠিয়েছেন।