বিশেষ প্রতিনিধি ::
মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভায় কমিটিতে জায়গা না পাওয়া নিয়ে যে ‘ক্ষোভ প্রকাশ’ করেছিলেন পৌর মেয়র নাদের বখত এবং তার বক্তব্যের জবাবে ‘অতীত স্মরণ’ করিয়ে দিয়েছিলেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুট। ভরা মজলিসে এই দুই নেতার এমন কথার লড়াই ক্ষমতাসীন দলের আগামীর রাজনীতিতে কিসের ইঙ্গিত বহন করছে – তারই চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।
সুনামগঞ্জ জেলা সদরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ‘অপরিহার্য’ দুটি পরিবারের এই দুই প্রভাবশালী নেতার এমন পাল্টাপাল্টি বক্তব্য গতিপ্রকৃতিকে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। এই দ্বন্দ্ব জেলা সদরের রাজনৈতিক সহাবস্থান ও স্থিতিশীলতা নষ্টের কারণ হতে পারে বলেও আশঙ্কা তাদের। সেইসাথে আগামী পৌর নির্বাচনেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রতিনিধি সভায় পৌর মেয়র নাদের বখত বলেছিলেন, এই মঞ্চে অনেকই আছেন, যারা ৭৫ পরবর্তী ছাত্রলীগের সভাপতি সম্পাদক। তাঁদের কেউই জেলা আওয়ামী লীগের কোনো পদে জায়গা পাননি। যারা কোনোদিন আওয়ামী লীগ করেন নাই, বিএনপি, জাতীয় পার্টি করেছেন তাদের এবং যারা কমিটি করেছেন, তাঁরা তাঁদের ভাই, বোন, আত্মীয় স্বজনকে নিয়ে ৭৫ সদস্যের কমিটি তৈরি করেছেন। বিদেশে অবস্থান করেন এমন লোককেও কমিটিতে ঢোকানো হয়েছে। এই কমিটির মাধ্যমে আমরা কীভাবে আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করব। কীভাবে সুনামগঞ্জ-৪ আসনে নৌকা প্রতীক পাব।
তিনি আরো বলেছিলেন, দুই বছর হলো পৌর মেয়র নির্বাচিত হয়েছি, কিন্তু আমি কিংবা আমার পরিবারের কাউকে আওয়ামী লীগের কোন পদ দেওয়া হয়নি। জেলা আওয়ামী লীগে ভাই-ভাই, মামা-ভাগ্না, পিতা-পুত্র জায়গা পেয়েছেন। কিন্তু তিন সন্তান নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক আমার পিতার সন্তানরা বঞ্চিত হয়েছেন।
মেয়র নাদের বখত যখন এই বক্তব্য দেন তখন মঞ্চে তাঁর পাশের চেয়ারে বসা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এনামুল কবির ইমন। ৭৫ সদস্যের জেলা কমিটিতে তিনিসহ তাঁর তিন ভাই জায়গা পেয়েছেন। আর ছেলেসহ কমিটিতে থাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ মতিউর রহমান অসুস্থতাজনিত কারণে সভায় উপস্থিত ছিলেন না।
পৌর মেয়র নাদের বখতের এই বক্তব্যের জবাব দিতে কালক্ষেপণ করেননি জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুট।
সভাপতির বক্তৃতায় তিনি বলেন, মেয়র নাদের বখত ভুলে গেছেন যে, তিনি আওয়ামী লীগের নৌকা নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তাকে বিজয়ী জন্য গোটা দল খেটেছে। তার প্রয়াত ভাই আয়ূব বখত জগলুল ছিলেন আওয়ামী লীগে জাতীয় কমিটির সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি।
নূরুল হুদা মুকুট দৈনিক সুনামকণ্ঠকে বলেন, প্রতিনিধি সভায় নাদের যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটা ভিত্তিহীন ছিল। তাই আমি তার বক্তব্যের জবাবে বলেছি আওয়ামী লীগ তাকে ও তার পরিবারকে অনেক কিছু দিয়েছে, বঞ্চিত করেনি।
প্রতিনিধি সভা শেষ হওয়ার পর নূরুল হুদা মুকুট ও নাদের বখতের কথার লড়াই নেতাকর্মীদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। তাদের কেউ নূরুল হুদা মুকুটের জবাব, আবার কেউ নাদের বখতের ক্ষোভ প্রকাশকে যথার্থ মনে করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি প্রতিক্রিয়া দেখান অনেকে। নিরপেক্ষভাবে কেউ কেউ এই কথার লড়াইয়ের সুদূরপ্রসারী পরিণতি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আফতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের নেতা আয়ূব বখত জগলুলের আকস্মিক মৃত্যুর কারণে জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতির ব্যালেন্স নষ্ট হয়ে গেছে। অস্বীকার করে লাভ নেই, আমাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব গ্রুপিং রয়েছে এবং সেটা হাইকমান্ডের হস্তক্ষেপে দ্রুত মিটমাট করতে হবে। অন্যথায় আগামীর রাজনীতি মোটেই ভালোর দিকে যাবে না।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার বিকেলে জেলা শিল্পকলা একাডেমির হাসনরাজা মিলনায়তনে জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন সুনামগঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন শফিক। যেসব নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত চলমান আগামীতে পদে আসবেন না বলে সভায় ঘোষণা দেন তিনি।