1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৪৪ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

১০ জানুয়ারির ভাবনা : ব্রজেন্দ্র কুমার দাস

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী, ২০২০

মোবাইলটা বেজে উঠলো। অনুজপ্রতীম বিজন সেনের কণ্ঠ- ‘দাদা, ১০ জানুয়ারি নিয়ে একটা কিছু লিখুন না!’ বড়ই ভাবনার বিষয়। চিন্তার বিষয়। একেবারেই সীমিত জ্ঞান বুদ্ধি নিয়ে এতো বড়ো বিশাল বিষয় নিয়ে কলম ধরা চাট্টিখানি কথা নয়। এ নিয়ে ভাবতে ভাবতে হঠাৎ চোখে পড়ল ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখের দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার একটি সচিত্র প্রতিবেদনের দিকে। সেটি হলো- “বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধুর লাশ পড়ে থাকল এতো নেতা কোথায় ছিল”। রাজধানীর আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ৪৯তম বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুঃখভারাক্রান্ত চিত্তে বলেছেন- “আমার মাঝে মাঝে অবাক লাগে সেই ৯টা মাস একাকী তিনি (জাতির পিতা) পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী। একটি বৈরী পরিবেশ, বৈরী আবহাওয়া। সেখানে যেমন গরম, তেমন শীত। তাকে কীভাবে রেখেছিল? কী খেতে দিয়েছিল? যাকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করতে চেয়েছিল, তাকে তারা কত কষ্ট দিতে পারে, সেটা কল্পনাও করা যায় না। আপনারা একবার চিন্তা করে দেখেন। তাঁর ভিতর যে আত্মবিশ্বাস ছিল, সেই আত্মবিশ্বাসই তাঁকে দৃঢ় করে রেখেছিল। সেই কারণে এতো কষ্টের পরও বেঁচে ছিলেন। এরপর তিনি ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বাংলার মাটিতে এসে ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রূপরেখা ঘোষণা করেছিলেন”।
বঙ্গবন্ধুর কন্যার চোখের জলে সিক্ত এই কয়েকটি কথা থেকেই সহজে অনুধাবন করা যায় বাংলাদেশের ইতিহাসে ১০ই জানুয়ারির অবস্থান কোথায়। এটা ঐতিহাসিক সত্য যে ৮ জানুয়ারি ভারত, সোভিয়েত ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক চাপের মুখে বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তানিরা। যে কুখ্যাত জুলফিকার আলী ভুট্টো মনেপ্রাণে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু কামনা করছিল সেই ভুট্টোই বঙ্গবন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন এবং সেই দিনই বঙ্গবন্ধুকে ঢাকার উদ্দেশ্যে লন্ডন পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। ৯ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ হয় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হীথের। ঢাকা আসার পথে বঙ্গবন্ধু দিল্লিতে যাত্রা বিরতি করেন এবং সেখানে তৎকালীন ভারতের রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি ও বঙ্গবন্ধু তথা বাংলাদেশের একান্ত সুহৃদ ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধুকে স্বাগত জানান।
১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু ঢাকায় পৌঁছলে তাঁকে রক্তস্নাত বাংলাদেশের মানুষ অবিস্মরণীয় সংবর্ধনা জ্ঞাপন করেন। বিমানবন্দর থেকে সরাসরি তিনি জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। ভাষণের এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, তোমরা (পাকিস্তানিরা) আমাকে মেরে ফেলো তাতে কোন আপত্তি নাই কিন্তু আমার মৃত্যুর পর আমার লাশটা আমার বাংলার মানুষের কাছে পাঠিয়ে দিও। বাঙালির সৌভাগ্য আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত বঙ্গবন্ধুকে ফিরে পেয়েছি। বঙ্গবন্ধুকে ফিরে না পেলে বাংলার ইতিহাস কি হতো তা কল্পনা করা যায় না। আর বঙ্গবন্ধুকে ফিরে পাবার জন্য আমরা চিরকৃতজ্ঞ মহীয়সী নারী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীসহ বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছে। বিশেষ করে ইন্দিরা গান্ধীর ঋণ বাঙালি জাতির কাছে পরিশোধ যোগ্য নয়। এর মধ্যে অনেকেই অনেক রকম রাজনীতি খুঁজে বেড়ান কিন্তু সেখানে কোন রাজনীতি ছিল না। ছিল মাতৃহৃদয়ের পূর্ণ প্রকাশ। প্রকাশ অকৃত্রিম বন্ধুত্ব ও বিশ্বাসের। যদি তাই না হতো বঙ্গবন্ধুর অনুরোধের সাথে সাথেই কি ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যেতো? তাই আমরা অকপটে বলতে পারি- ইন্দিরা-মুজিবের পারস্পরিক বিশ্বাস ছিলো রাজনীতির ঊর্ধ্বে।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু যখন ঢাকা বিমান বন্দরে পা রাখেন তখন যে দৃশ্যের অবতারণা হয়েছিল তা আজো ভীষণ মনে পড়ে। সেদিন বঙ্গবন্ধুকে বরণ করতে নেতাদের যে ভিড় ছিল তা তো ভুলে যাবার কথা নয়। সেই সব তুখোড় নেতাদের অনেকেই হয়তো আজ বেঁচে নেই। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত তো অধিকাংশই বেঁচে ছিলেন এবং ভালোভাবেই বেঁচে ছিলেন। বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধু কন্যা যে বলেছেন- “বঙ্গবন্ধুর লাশ পড়ে থাকল এত নেতা কোথায় ছিলেন?” এই প্রশ্নের উত্তর কে দেবেন? সেই সময়ের সেই সব নেতা যারা এখনো বেঁচে আছেন তারা এর সঠিক উত্তর দিতে পারবেন কিনা তারাই জানেন। তবে বঙ্গবন্ধুর সত্যিকার অনুচর সেই চার জাতীয় নেতা বঙ্গবন্ধুর সাথে লাশ হয়েছিলেন এটাই জাতির সান্ত্বনা। আর এটাও সান্ত্বনা যে, বঙ্গবন্ধুকে যারা শারীরিকভাবে “লাশ” হয়তো বানাতে পেরেছে কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সেই কুলাঙ্গারের দল ‘লাশ’ বানাতে পারেনি। তাই আমরা বলতেই পারি- বঙ্গবন্ধু মরে নাই বেঁচে আছেন।
বঙ্গবন্ধু ফিরে এলেন ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে। অন্য আদলে ফিরেছেন ১৭ই মে ১৯৮১ সালে। এ যেন সেই ১০ই জানুয়ারি। এ যেন বঙ্গবন্ধুর সেই বিদেহী আত্মা, বঙ্গবন্ধুর সেই সাহসী মুখ, সাহসী রক্ত, বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি। বাংলার মানুষ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার মাঝে বঙ্গবন্ধুকেই খুঁজে পেলো। ১৯৮১ সালের ১৭ই মে-এর মাঝে বঙ্গবন্ধুর বাংলার মানুষ, ‘ভায়েরা আমার’ খুঁজে পেল ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি। জয়বাংলা ধ্বনিতে মুখরিত হলো বাংলার আকাশ-বাতাস। এক হয়ে গেলো ১০ই জানুয়ারি আর ১৭ই মে। জয় বাংলা।
[লেখক : মুক্তিযোদ্ধা, কলামিস্ট, সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা]

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com