1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৩০ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

বোরো আবাদে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষক

  • আপডেট সময় শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯

মাসুম হেলাল ::
এক মণ ধানের বাজার দর বছরের এই সময়টাতে এসে যেখানে সর্বোচ্চ সাতশ টাকা, সেখানে এই ধান উৎপাদনের জন্য এক কেজি বীজ কিনতে কৃষককে ব্যয় করতে হচ্ছে সাড়ে তিনশ টাকা। এর সাথে বীজতলা তৈরি, জমি চাষ, সেচ, আগাছা বাছাই, সার প্রয়োগ, ধান কাটা – সব হিসেব এক করলে বোরো ধান চাষ করে একজন কৃষকের লাভবান হওয়ার সুযোগ খুব একটা থাকে না।
উৎপাদন খরচের তুলনায় উৎপাদিত ফসলের দাম কম হওয়ায় ক্রমেই বোরো আবাদে আগ্রহ হারাচ্ছেন জেলার কৃষকরা। যে কারণে বিপুল আয়তনের জমি অনাবাদী হিসেবে পড়ে থাকার শঙ্কা রয়েছে।
বোরো চাষীদের ব্যাপক প্রণোদনা, বিনামূল্যে সার, বীজ, কীটনাশক ও বিনাসুদে কৃষিঋণ এবং মৌসুম শেষে সরকারের তরফ থেকে ন্যায্য মূল্যে কৃষকের চাহিদা মাফিক ধান-চাল ক্রয় করা হলে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, সুনামগঞ্জ জেলায় এবারো প্রায় সোয়া দুই লাখ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ৯ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এবার।
অথচ, গত মৌসুমে কৃষকদের কাছ থেকে মাত্র ১৭ হাজার ৮২৩ মেট্রিক টন ধান এবং মিলারদের কাছে থেকে ৩১ হাজার ৯৭৪ মেট্রিক টন চাল সরকারিভাবে ক্রয় করা হয়েছে, যা মোট উৎপাদিত ফসলের তুলনায় একেবারে নগণ্য।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সফর উদ্দিন বলেন, বোরো চাষের জন্য কৃষকদের সরকারের পক্ষ থেকে সরাসরি কোনোও প্রণোদনা দেওয়া হয় না। তবে কৃষকের সুবিধার কথা বিবেচানা করে সরকার সারের দাম প্রতি কেজিতে ৯ টাকা করে কমিয়েছে।
কৃষকরা জানান, বছরের এই সময়ে এসে বোরো আবাদের জন্য বীজতলা তৈরি করে বীজ বুনেন তারা। কিন্তু বছরের একটিমাত্র ফসলের উপর নির্ভরশীল এই কৃষকরা ধান কাটার পর পর সেগুলো প্রয়োজন মেটাতে পানির দামে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। ফলে নতুন করে ফসল উৎপাদনের জন্য যে পরিমাণ টাকার প্রয়োজন সেটা সংকুলানের সামর্থ্য খুব কম কৃষকেরই রয়েছে। পাশাপাশি ফসল উৎপাদন করে বিগত বছরগুলোর ন্যায় আগামীতেও ফসলের ন্যায্য মূল্য পাবেন কি না সেই আত্মবিশ্বাসও নেই কৃষকদের মাঝে। যে কারণে বোরো আবাদে বছর বছর আগ্রহে ভাটা পড়ছে কৃষদের মাঝে। অনেক হাওরে বোরো জমি আনাবাদী থাকার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে, ধানের উৎপাদন খরচ বেশি ও বিক্রয়মূল্য কম হওয়া বর্গাচাষী ও জমি বর্গা দেওয়া গৃহস্থ দুই শ্রেণিই পড়েছেন বিপাকে। লাভ না হওয়ার বর্গাচাষীরা জমি বর্গা নিতে উৎসাহ দেখাচ্ছেন না খুব একটা। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে হাওরের প্রান্তিক ও গৃহস্থ পরিবারগুলোর ওপর।
সরেজমিন দিরাই উপজেলার ঘিলটিয়ার হাওরে গিয়ে দেখা যায়, কোনো কোনো কৃষক বোরো ধান চাষের জন্য বীজতলা তৈরি করছেন, চাষ করছেন, কেউ বীজ বুনছেন, আবার কেউ জমিতে সেচের কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। তারা কী অবস্থায় রয়েছেন এই বিষয়ে জানতে চাইলে, হতাশাই বেরিয়ে আসে তাদের কথাবার্তায়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সাথে ধান-চালের দামের সামঞ্জস্য না থাকায় তৃণমূল পর্যায়ের এই প্রান্তিক মানুষের অর্থনৈতিকভাবে ভেঙে পড়ার কথা জানালেন। বছরের একবার উৎপাদিত বোরো ধানের ন্যায্যমূল্য পাওয়া না পাওয়ার উপর ভাল থাকা না থাকা নির্ভর করছে তাদের। বিষয়টির ওপর সরকারের আশু দৃষ্টি দেওয়ার দাবি তাদের।
নিজের বীজতলায় হাতে সেচ দিচ্ছিলেন দুর্গাপুর গ্রামের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কৃষক জয় সেন সরকার। কেমন চলছে জানতে চাইলে, জানালেন, ধানের দাম না থাকায় আমরার অবস্থা ডাইল। ধান ৪শ থাকি বেচা শুরু করছিলাম, অনে সর্বোচ্চ ৬ থাকি সাড়ে ৬শ। ধান বেচিয়াই তো আমরা নয়া কইরা হালচাষ করতাম। ধানের দাম না ফাইলে কেমনে কিতা করমু। আর জিনিসপত্রের যে দাম, ইটাও আমরার লাগি সমস্যা। ২০ টেখার পিঁয়াজ কিনা লাগের আড়াই শ টেখায়।
তিনি বলেন, আমরারে বাঁচাইতে অইলে পয়লা কথা অইল ধানের ন্যায্য নাম দিতে অইব। পরে চাষের লাগি সার, বীজ, কীটনাশক বিনামূল্যে দেওয়া লাগব। এ ছাড়া আর কোনো গতি নাই।
অপর দুর্গাপুর গ্রামের অপর কৃষক কৃপাসিন্ধু দাস জানান, এক কিয়ার (৩০ শতক) জমি রমজমা (বর্গা) আনি চার হাজার টাকায়। ধান লাগাইতে গিয়া আরও খরচ অয় দুই থাকি আড়াই হাজার। পরে দেখা যায় যে টেখা খরচ খরছি ই টেখাই উঠে না। কৃষক মানুষ ধান ছাড়া আমরার তো আর কোনো অবলম্বন নাই।
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি অ্যাড. বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু বলেন, হাওরের কৃষি ও কৃষককে বাঁচিয়ে রাখতে কৃষক পর্যায় থেকে সরকার ন্যায্যমূল্যে ব্যাপকহারে ধান-চাল যেন ক্রয় করে, সেই দাবি আমরা জানিয়ে আসছি। সেইসাথে কৃষকদের প্রণোদনা দিয়ে উৎপাদনে উৎসাহিত করার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। অন্যথায় বোরোচাষীরা চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন, যেটা এই জেলার অর্থনীতির উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, বোরো চাষীদের সুবিধার জন্য বিশেষ কোনও প্রণোদনা প্যাকেজের প্রয়োজন হলে বিষয়টি আমরা সরকারকে জানাবো।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com