স্টাফ রিপোর্টার ::
সংস্কারের অভাবে কার্যত যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে প্রায় সাড়ে ১১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট পাথারিয়া ভায়া ভাটিপাড়া বাংলাবাজার সড়ক। যাতায়াতের একমাত্র সড়কটি বেহাল অবস্থায় পড়ে থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তিনটি উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ। ভোগান্তি লাঘবে সাবমার্জেবল এই সড়কটি বারো মাস ব্যবহারের উপযোগী করে নির্মাণের দাবি এলাকাবাসীর।
জানা যায়, প্রত্যন্ত হাওর এলাকাকে সড়ক যোগাযোগের আওতায় নিয়ে আসার ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ২০০৩ সালে পাকা করা হয় পাথারিয়া ভায়া ভাটিপাড়া বাংলাবাজার সড়ক। শুরুর দিকে সাবমার্জেবল এই সড়কটি কেবল হেমন্ত মৌসুমে ব্যবহারে উপযোগী করে নির্মাণ করা হয়।
সড়কটি পাকাকরণের ফলে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার শিমুলবাঁক, দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া, রফিনগর ও রাজানগর ইউনিয়ন এবং নেত্রকোণা জেলার খালিয়াজুড়ি উপজেলার একাংশের মানুষের চলাচলে সুবিধা হয়। কিন্তু বছরের পর বছর বর্ষা মৌসুমে পানির নিচে তলিয়ে থাকায় সড়কের আরসিসি ঢালাই ক্রমেই নষ্ট হয়ে যেতে শুরু করে। বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দে ভরে যায় পুরো সড়ক। এতে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে সড়কটি।
স্থানীয়রা জানান, বছরের পর বছর ধরে সংস্কারের উদ্যোগ না নেওয়ায় ক্রমেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে এই সড়ক। বর্ষায় পানির নিচে তলিয়ে থাকার কারণে একদিকে যেমন এই সড়কের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন মানুষ, অপরদিকে হেমন্ত মৌসুমে পুরো সড়ক খানাখন্দে ভরপুর থাকায় কার্যত কাজে আসছে সেটি। বিকল্প না থাকায় এলাকার লক্ষাধিক মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন। প্রায়ই ঘটছে কোন না কোন দুর্ঘটনা।
ভাটিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান কাজী বলেন, বর্তমান সরকার উন্নয়নের সরকার। কিন্তু আমাদের যাতায়াতের একমাত্র রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। রাস্তাটি ভাঙাচুরা থাকার কারণে প্রতিনিয়ত আমরা নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা গ্রামকে শহর করার যে পদক্ষেপ নিয়েছেন তারই অংশ হিসেবে এই রাস্তাটি সব মৌসুমে ব্যবহারের উপযোগী করে নির্মাণ করে দেওয়া হলে আমরা আরো উন্নত জীবনযাপন করতে পারবো।
তিনি বলেন, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এই অঞ্চল শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পাথারিয়া থেকে ভাটিপাড়া হয়ে বাংলাবাজার পর্যন্ত নির্মিত সাবমার্জেবল সড়কটিতে কিছু দূর পর পর ছোটবড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। অনেক স্থানে আরসিসি ঢালাই উঠে রড বেরিয়ে গেছে। কোথাও ভেঙে পুরো ঢালাই ভেঙে গিয়ে বেরিয়ে গেছে মাটি। চলাচলের প্রায় অনুপযোগী সড়ক দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে সিএনজি অটোরিকসা, লেগুনা, পিকআপসহ অন্যান্য যানবাহন। কোথাও কোথাও ভাঙা অংশ পাশ কাটিয়ে সড়কের পাশ দিয়ে চলাচল করছে যানবাহন।
উর্ধনপুর গ্রামের পিকআপ চালক আয়াজ আলী বলেন, রাস্তার অবস্থা তো বেহাল। আরসিসি ঢালাই ভেঙে রড বেরিয়ে রয়েছে, সেগুলো টায়ারে ঢুকে পাংচার হয়ে যাচ্ছে। পুরো রাস্তার একই দশা।
সিএনজি চালক মুজাহিদ আলম বলেন, রাস্তার কারণে চালকদের দুর্গতি, যাত্রীদের দুর্গতি পোহাতে হয়। রাস্তা ভাঙা থাকায় ঘন ঘন গাড়ি নষ্ট হয়। মেরামতের ব্যয় বেশি আসে। অসুস্থ রোগী নিয়ে যাওয়ার পথে অনেক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।
সুনামগঞ্জ স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ইকবাল আহমদ বলেন, পাথারিয়া ভায়া ভাটিপাড়া বাংলাবাজার সড়কের পাথারিয়া থেকে ভাটিপাড়া পর্যন্ত অংশ পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত সুবিধা রেখে বারো মাস ব্যবহারের উপযোগী করে নির্মাণের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। এ ব্যাপারে সম্ভাব্যতা যাচাই করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ভাটিপাড়া থেকে বাংলাবাজার পর্যন্ত অংশ পুরো হাওরের মধ্যে হওয়ায় সেখানে ডুবন্ত সড়কই রাখতে হবে। সড়কের খানাখন্দ সংস্কারে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।