স্টাফ রিপোর্টার ::
ছাতক উপজেলার জাউয়াবাজারে প্রতিবাদ সমাবেশকে কেন্দ্র করে স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক ও ছাতক পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম চৌধুরীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জাউয়াবাজার পুলিশ ফাঁড়ি এলাকায় দু’পক্ষের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
ছাতক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল জানান, ২৬ রাউন্ড টিয়ারসেল ও ৫০ রাউন্ড ফাঁকাগুলি ছুঁড়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
জানা যায়, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সহসভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুটের বিরুদ্ধে সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকের করা ‘কটূক্তির’ প্রতিবাদে সমাবেশের ডাক দেন পৌর মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী ও শামীম আহমদ চৌধুরী’র নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। একই সময় মানিক সমর্থকরা পাল্টা সমাবেশ করতে চাইলে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।
জানা যায়, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক ও সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি নূরুল হুদা মুকুট কর্তৃক পরস্পরের বিরুদ্ধে করা মন্তব্যের জেরে গত দুই সপ্তাহ ধরে স্থানীয় আওয়ামী লীগে দুটি গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পক্ষে-বিপক্ষে সভা-সমাবেশ-মিছিল, মানববন্ধন করছেন উভয় গ্রুপের নেতাকর্মীরা। বৃহস্পতিবার বিকেলে খিদ্রাকাপন এলাকায় জাউয়াসহ ৫ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভা আহ্বান করে কালাম চৌধুরী ও শামীম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন গ্রুপ। এ সময় একটি মিছিল সভাস্থলে যাওয়ার পথে খিদ্রাকাপন এলাকাায় পৌঁছলে এমপি মানিক সমর্থকরা মিছিলকারীদের ওপর হামলা চালান। পরবর্তীতে মিছিলকারীরা সংঘবদ্ধ হয়ে পাল্টা ধাওয়া চালালে উভয়পক্ষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ ২৬ রাউন্ড টিয়ারসেল ও ৫০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সুনামগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের উপর সংঘর্ষ চলাকালে দুপক্ষেই পরস্পরকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। ধাওয়া – পাল্টা ধাওয়াও হয়। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। তারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
সংঘর্ষের সময় সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে টায়ারে আগুন জালিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে সংঘর্ষকারীরা। এতে সড়কের দুই দিকে শত শত গাড়ি আটকা পড়ে ভোগান্তিতে পড়েন হাজারো সাধারণ যাত্রী।
আহতদের মধ্যে আওয়ামী লীগ কর্মী আশরাফ, দুলন, আমিন, সৌরভ ও রুবেলকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহত শাহীন তালুকাদর, আজির উদ্দিন, আব্দুল আলিম মিলন তালুকদার, রিপন, সেবুল, এমরান, তারেক, কালা শাহ, আজিদ, ফজলে নুর, জামিল, আব্দুল খালিক, নুরুজ্জামান, রবি মিয়া, শিবুল, শিপন, জালালসহ অন্যান্য আহতদের স্থানীয় কৈতক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জাউয়াবাজার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজা মিয়া তালুকদার জানান, আওয়ামী লীগের শান্তিপূর্ণ মিছিলে অতর্কিত হামলা করেন মানিক সমর্থকরা। এতে আমাদের অর্ধ শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।
মানিক পক্ষের নেতা ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল আহমদ জানান, মিছিলকারীরা সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ স্লোগান দেয়ায় বাজারে উপস্থিত যুবলীগ নেতাকর্মীরা পাল্টা মিছিল বের করেন। এক পর্যায়ে উভয়ের মধ্যে সংষর্ষ বেধে যায়।
সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হায়াতুন্নবী জানান, সংঘর্ষের খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হয়। জাউয়া এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।