স্টাফ রিপোর্টার ::
সুনামগঞ্জের গবাদি পশু, হাঁস-মোরগের জন্য কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না লোকজন। অভিযোগ আছে বিনামূল্যের ভ্যাকসিন বাইরে বিক্রি করে দেন সংশ্লিষ্টরা। তাছাড়া খামারিদেরকে সরকার নানা উপকরণসহ গো-খাদ্য বরাদ্দ দিলেও তাও সুষ্ঠুভাবে বণ্টন হয় না। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাঠে গিয়ে গবাদিপশু ও হাঁস-মোরগসহ প্রাণিসম্পদের চিকিৎসা ও পরামর্শ দেবার কথা থাকলেও তাদের সঙ্গে সম্পর্ক নেই তৃণমূল মানুষের। তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন জনবল সংকটের কারণে জনগণকে কাক্সিক্ষত সেবা দেওয়া যাচ্ছে না।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এই অফিসের অধীনে উপসহকারি প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ৩টির পদ রয়েছে। এর মধ্যে একজন মাত্র কর্মরত আছেন। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার পদে একজনের মধ্যে একজন আছেন। তবে সার্জন পদে একজন থাকার কথা থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। ড্রেসার ও অফিস সহায়কের পদও শূন্য আছে। উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে সাতটিতে কৃত্রিম প্রজনন কর্মী (এআই) কর্মরত আছেন। তবে তাদের কোন বেতন না থাকায় কেউ মাঠে কাজ করেন না। যার ফলে মাঠ পর্যায়ের জনসাধারণের সঙ্গেও তাদের সম্পর্ক নেই।
জানা গেছে, প্রতি বছর খামারিদের মধ্যে ও গরিব কৃষকদের মধ্যে বিতরণের জন্য নানা উপকরণ বিনামূল্যে দেয় সরকার। দুর্যোগের সময় গোখাদ্যও দেওয়া হয়। এসব বরাদ্দ সুষ্ঠুভাবে বণ্টন হয় না বলে অভিযোগ আছে। জানা গেছে, সরকারিভাবে গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগীর মূল্যবান টিকা বিনামূল্যে দিয়ে থাকে সরকার। গ্রামের কৃষকরা এই বরাদ্দের বিষয়ে কিছু জানেন না। এই সুযোগে অফিসের সংশ্লিষ্টরা বিভিন্ন সময়ে বাইরে এই মূল্যবান ভ্যাকসিন বিক্রি করে দেন বলে অভিযোগ আছে। তাছাড়া কর্মকর্তারা মাঠে না গিয়ে অফিসে বসেই টাকার বিনিময়ে গবাদি পশুর চিকিৎসা দেন এমন অভিযোগ আছে।
এদিকে ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মরত কৃত্রিম প্রজনন কর্মী বাছাইয়েও অনিয়ম ও দুর্নীতি রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। অভিযোগ আছে পছন্দের লোকদেরকে বাছাই করে সাভারে তাদেরকে বিশেষ ট্রেনিং দিয়ে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু সরকার যে লক্ষ্যে তাদের ট্রেনিং দেয় সেই লক্ষ্য পূরণ হচ্ছেনা। সম্মানী ভাতা ছাড়া বেতনের ব্যবস্থা না থাকায় এই কর্মীরা মাঠে গিয়ে কাজ করার বদলে নিজেদের বাড়িতে সাইন বোর্ড টাঙিয়ে গবাদিপশুর চিকিৎসা করতে দেখা যায়।
জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়নের কালা মিয়া বলেন, মাঠ পর্যায়ের ভ্যাটেরিনারি কর্মীদের আমরা কেউ চিনি না। কোন সমস্যা নিয়ে গেলে হাসপাতালেও কাউকে পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলে টাকার বিনিময়ে সেবা নিতে হয়। তিনি বলেন, গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগীর ভ্যাকসিন খুব কম মানুষই পায়। অফিসের সঙ্গে যাদের সম্পর্ক ভালো তারা কিছু পায়। না হলে বাইরে বিক্রি করে দেওয়া হয়।
সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জাকির হোসেন বলেন, আমাদের অফিসে লোকবলের সংকট চরমে। অর্ধেকের বেশি পদ শূন্য আছে। এই সামান্য লোকবল নিয়েই আমাদের সেবা দিতে হচ্ছে। তবে ভ্যাকসিন ও অন্যান্য উপকরণ বিতরণে কোন অনিয়ম ও দুর্নীতি হয় না বলে জানান তিনি।