সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
নদী দূষণ রোধ, সন্ত্রাসবাদ ও সীমান্তে চোরাকারবার বন্ধসহ প্রায় এক ডজন ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত। মেঘালয়ের শিলংয়ের একটি হোটেলে দুই দেশের জেলা প্রশাসক পর্যায়ের দিনব্যাপী সম্মেলনে মঙ্গলবার এসব ব্যাপারে ঐকমত্য প্রকাশ করেন কর্মকর্তারা।
সম্মেলনে বন্যা নিয়ন্ত্রণে তাৎক্ষণিক তথ্য সরবরাহে সম্মত হন উভয় দেশের কর্মকর্তারা।
সম্মেলনকালে বৈঠকে মেঘালয়ের সঙ্গে সীমান্ত সংলগ্ন বাংলাদেশের সাত জেলার প্রশাসকসহ (ডিসি) ৫২ সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধি দল অংশ নেন। অপরদিকে মেঘালয় রাজ্যের সাত জেলার ডেপুটি কমিশনারসহ (ডিএম) ৩২ সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধি দল উপস্থিত ছিলেন। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন জামালপুরের ডিসি আহমেদ কবীর এবং ভারতের পক্ষে ছিলেন ইস্ট খাসি হিলর্সের ডিএম মতসিডর ওয়ার নংব্রি।
চার ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে সীমান্ত সংক্রান্ত নানা ইস্যুতে আলোচনা হয়। সম্মেলন শেষে দুই দলনেতা জানান, বেশিরভাগ ইস্যুতেই একমত হয়েছেন কর্মকর্তারা। জামালপুরের ডিসি কবীর জানান, সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে সীমান্ত সংশ্লিষ্ট সমস্যা ও অন্যান্য বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। প্রতি বছরই যাতে এ ধরনের সভা করা যায়- সে বিষয়ে উভয় দেশের মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানোর বিষয়েও একমত হয়েছেন কর্মকর্তারা।
বৈঠকে সুনামগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা ও শেরপুরের ডিসি উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সাত জেলার পুলিশ সুপার, বিজিবি কর্মকর্তা, ম্যাজিস্ট্রেটসহ সরকারি বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা অংশ নেন। অপরদিকে মেঘালয় রাজ্যের সাত জেলার ডিএম ছাড়াও বিএসএফ কর্মকর্তা, পুলিশ সুপারসহ রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ভারতের প্রতিনিধি দলের প্রধান ইস্ট খাসি হিলর্সের ডিএম নংব্রি বলেন, যে সব বিষয় বৈঠকে উঠেছে দ্রুত সময়ের মধ্যে তা সমাধানে দুই দেশ উদ্যোগ নেবে বলে আশা করছি।
সম্মেলনে সিলেট সীমান্ত অঞ্চলের নদীগুলোর দূষণ বন্ধে কার্যকর উদ্যোগের আহ্বান জানালে দ্রুত তা করার আশ্বাস দেন ভারতীয় কর্মকর্তারা। চুক্তি অনুযায়ী বর্ডার হাট কার্যকর, গরু চোরাচালান বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার দাবি ওঠে সম্মেলনে। সিলেটের ডিসি এম কাজী এমদাদুল ইসলাম বলেন, মেঘালয়ে খোলা আকাশের নিচে কয়লা আহরণের ফলে ডাউকি ও সারি গোয়াইন নদী (বাংলাদেশে গোয়াইন নদী নামে পরিচিত) ভারি ধাতু হ্রাস, জনস্বাস্থ্য এবং মৎস্য স¤পদের ক্ষেত্রে হুমকি হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন ভারতীয় কর্মকর্তারা। এছাড়া মিয়ানমার থেকে ভারত হয়ে বাংলাদেশে ইয়াবার চালান ঢুকছে- এমন প্রমাণ দিয়ে তা বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে।
ভারতের পক্ষ থেকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখার আশ্বাস দেয়া হয়েছে।
সুনামগঞ্জের ডিসি আবদুল আহাদ বলেন, ভারত গরু চোরাচালানের বিষয়টি ওঠালে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, আমাদের স্থানীয় পর্যায়ে গরুর উৎপাদন বেড়েছে, যা দেশের চাহিদা মেটাতে সক্ষম। দেশের মোট জিডিপির ২ দশমিক ৫ শতাংশ পশু পালন থেকেই আসে। কিন্তু ভারতে কম দামে গরু বিক্রির কারণে কিছু গরু বাংলাদেশে ঢুকছে। এর দায় বেশিরভাগ ভারতের ওপরই বর্তায়। এছাড়া কিছু অসংলগ্নতার কারণে বর্ডার হাটের সুফল বাংলাদেশের মানুষ পুরোপুরি পাচ্ছে না।