1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০১:২৫ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

চিন্তক এমএ মান্নান, প্রগতিশীল রাজনীতির প্রতীক : ইকবাল কাগজী

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৯

যদি কোথাও লেখা থাকে বা লেখা হয়, “[…] আসনের সংসদ সদস্য সজ্জন ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ।” তা হলে বিষয়টা নিয়ে ভাবনায় পড়ে যেতে পারেন যে-কোন সচেতন পাঠক। তাঁর মনে প্রথমেই সেই আসনে নির্বাচিত সাংসদের মুখটি ভেসে উঠবে বা তিনি মনে করতে চেষ্টা করবেন এবং তৎক্ষণাৎ অনেক অনেক অমীমাংসিত ও বিতর্কিত প্রশ্নের উদ্রেক হতে শুরু করবে মনের মধ্যে। তিনি কূলকিনারা হারিয়ে ফেলবেন এবং যদি ভাবনা সাগর সাঁতরে কিনারায় পৌঁছতে পারেন তবে ‘সজ্জন ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ’ বাক্যবন্ধের ‘সজ্জন ও পরিচ্ছন্ন’ শব্দ দু’টির অর্থ তাঁর চেতনায় নিরর্থক হয়ে উঠবে। এই শব্দ দু’টির সদর্থকতা প্রতিপন্ন করার কোনও রাজনীতিক বাস্তবতা প্রকৃতপ্রস্তাবে বাংলাদেশে বর্তমানে অনুপস্থিত। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে আপত্তি তোলা বা বিতর্ক করার কোনও অবকাশ নেই।
প্রশ্ন উঠতে পারে বাংলাদেশের সমাজবাস্তবতায় ‘সজ্জন ও পরিচ্ছন্ন’ এই শব্দ দু’টি ভাষিক দিক থেকে নির্দিষ্ট অর্থদ্যোতনা বা নিহিতার্থ কেন নিরর্থক হয়ে উঠেছে? এই কেনর উত্তর অনেক লম্বা। এখানে আলোচ্য নয়, কিন্তু বিষয়টা প্রসঙ্গক্রমে এসে পড়েছে, এড়ানো যাচ্ছে না। তো সংক্ষেপে এবং একশব্দে এই প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, অধঃপতন। অধঃপতনটা কী। অধঃপতনটার বর্ণনা দিতে গেলে চীনের বিপ্লবী লেখক লু সুনের শরণাগত হতে হয়। এখানেও প্রশ্ন উঠতে পারে, বাংলাদেশের ব্যাপার, চীনের প্রসঙ্গ কেন? চীনের প্রসঙ্গ এই জন্য যে, লু সুনের কালে চীনের সমাজবৈকল্যের অবস্থার সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমানকালের সমাজবৈকল্যের সামগ্রিক মিল পরিলক্ষিত হয়। লু সুন তাঁর প্রাকবিপ্লব অধঃপতিত দেশ চীন সম্পর্কে বলেছিলেন, “এই যে অবস্থা এর কারণÑ আমাদের কোন নতুন শ্রেয়োনীতি ও নতুন বিজ্ঞান নেই, আর আমাদের সকল চিন্তা ও কর্মই সেকেলেÑ বর্তমানের চাহিদা মেটতে অক্ষম।” তারপর তিনি তাঁর দেশ যে একটি অন্ধকারাচ্ছন কাল অতিক্রম করছে সে-কথা বলেছেন। আমরা আমাদের দেশের অধঃপতন পরিলক্ষিত করতে পারি শতসহ¯্র ছোটবড় রাজনীতিক, সামাজিক, অর্থনীতিক ঘটনাপ্রপঞ্চকে প্রত্যক্ষ করে। সেগুলো কী? সেগুলোকে প্রত্যক্ষ করা যায় আমাদের দেশের অজ¯্র গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও সম্প্রচারিত প্রতিদিনকার সংবাদগুলো পঠনপাঠনশ্রবণ করলেই। যেমন দৈনিক সুনামকণ্ঠের ৫ আগস্টের একটি সংবাদশিরোনাম ছিল, “১৬১ কোটি ৯১ লাখ টাকা আত্মসাৎ : রূপালী ব্যাংকের এমডিসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা।” এবংবিধ সংবাদের পাশেই হয় তো ছাপা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী ভাষণের সংবাদ, সেখানে তিনি দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শূন্যসহনশীলতা প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছেন। কিন্তু দুর্নীতি ও সন্ত্রাস বন্ধ হচ্ছে না। দেশের ভেতরে প্রতিনিয়ত ঘটেযাওয়া ঘটনাপ্রপঞ্চগুলোকে একটু বিশ্লেষণের কষ্টিপাথরে পরখ করে নিলেই অধঃপতনের বিভৎসতার সদন্তনখমূর্তিটা স্পষ্ট প্রতিভাত হয়। বিশেষ করে ১৯৭১-এর পর থেকে ঘটে যাওয়া ঘটনাপ্রপঞ্চ অর্থাৎ একটার পর একটা বড় বড় ঘটনা : বঙ্গবন্ধু হত্যা, চার নেতা হত্যা, গণতান্ত্রিকতার নামে গণতান্ত্রিকতার বিনাশ কিংবা প্রকারান্তরে শাসনতান্ত্রিকতার সামরিকায়ন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, জঙ্গিবাদের উত্থান, মৌলবাদী অর্থনীতির, পিলখানা হত্যাকা- ইত্যাদি এই অধঃপতন বিস্তারের প্রমাণ। এই অধঃপতনের পরাকাষ্ঠা পরিলক্ষিত হয় এই দেশে জাতির জনককে হত্যা করে দায়মুক্তির আইন প্রবর্তন করার ঘটনায় এবং সেটা করেন সাংসদরা এবং দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ করে যে-দেশ স্বাধীন করা হলো সে-দেশের রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী হয়ে পড়ে স্বাধীনতাবিরোধী চিহ্নিত রাজাকার কিংবা ধর্ষককে রাজনীতিক পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেন একজন রাজনীতিক দলের নেতা, সরকার ঘোষিত দামে কৃষক ধান বিক্রি করতে পারে না ফড়িয়াদের কারণে ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক অনেক কীছু। অবস্থাটা অনেকটা ‘সর্ব অঙ্গে ব্যথা অষুধ দেবো কোথা’ ধরনের। সবচেয়ে বড় কথা বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ রাজনীতিবিদরাই ছিলেন তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্রী। সুতরাং এইসব যতকীছু বিবেচনায় এনে নির্দ্বিধায় বলা যায়, বাংলাদেশে লু সুন কথিত অধঃপতন এদিক ওদিক অনেক রকমের ব্যতিক্রমসহ সংঘটিত হয়েছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
লু সুন কথিত অধঃপতনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থাটিকে হৃদয়ঙ্গম করা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। একেবারেই হালকাভাবে একটু চেষ্টা করা যাক। শাল্লার চোরেরগাঁওয়ের চোর গরু চুরি করে আর রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের চেয়ারে বসে মুৎসুদ্দিরা ঘুষ খায়। প্রকারান্তরে দু’টিই চুরি। আর ঢাকার পুঁজিপতিরা যখন ঋণখেলাপী হয়, সেটা দিনেদুপুরে ডাকাতির বাড়া। এ ছাড়া কোনও কোনও অর্থনীতিবিদের অভিমত এই যে, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে মধ্য আয়ের ফাঁদে আটকা পড়েছে। এখানে ধনীরা গরিবের শ্রম থেকে চুরি করে আরও ধনী হচ্ছে এবং উন্নয়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ধনবৈষম্য বাড়ছে। মধ্যআয়ের ফাঁদের আর্থনীতিক রহস্যটি অনেকটা এরকম, এর তাত্ত্বিক ব্যাখ্যাটা অর্থনীতিবিদরা ভালো বলতে পারবেন। গরু চুরি করা, ঘুষ খাওয়া, ঋণখেলাপি হওয়া, কৃষকের ধানের দাম উৎপাদন খরচের নিচে থাকা, অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন, মনোনয়নবাণিজ্য, সরকারের দেওয়া হাসপাতালের ঔষধ বাজারের ফার্মেসিতে বিক্রি হওয়া, অপ্রয়োজনে প্রসূতির পেট কেটে বাচ্চা বের করা, এসব কীছুই শেষ পর্যন্ত কোনও না কোনওভাবে সাধারণ মানুষকে আর্থনীতিকভাবে শোষণের উদাহরণ। এইভাবে শ্রমের উদ্বৃত্তমূল্য আত্মসাতের পদ্ধতি অব্যাহত থাকলে দেশ মধ্যআয়ের দেশ থেকে উন্নত দেশে উন্নীত হওয়ার পথে স্থায়ী প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে। বর্তমানে সমাজের আর্থসামাজিক বিন্যাস এই রকম একটি খতরনাক অবস্থায় পর্যবশিত হয়ে আছে। একটি সর্ববাদীসম্মত সত্য এই যে, সমাজের আর্থসামাজিক বিন্যাসের প্রকারভেদের উপর নির্ভর করে সে-সমাজের মানুষ কেমন হবে। তাই সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন, শোষণের উপর প্রতিষ্ঠিত (‘চুরির উপর প্রতিষ্ঠিত’ পাঠ করা যেতে পারে) মুক্তবাজার অর্থনীতিকে বজায় রেখে মানুষকে সৎ-মহৎ ও দুর্নীতিবিমুখ হওয়ার পরামর্শ দেওয়ার চেয়ে অবিমৃষ্যকারিতা আর হতে পারে না। এ মুক্তবাজারভিত্তিক সমাজ এতোটাই খতরনাক যে, মানুষের মনুষত্বকে হরণ করে মানুষকে অমানুষ বানয়ে টিকে থাকে, বিদ্যমান বস্তু অবস্তু সব কীছুকেই পণ্য বানায়।
একজন বিদগ্ধ শিবনারায়ণ রায় বলেছেন, “যে জগতে আমার বাস সেখানে প্রায় সর্বত্র দেখতে পাই একদিকে কায়ক্লেশে অর্ধাহারে অনাহারে বহু মানুষের টিকে থাকবার দুর্মর প্রয়াস, অন্যদিকে কিছু বিত্তবান মানুষের অপর্যাপ্ত ভোগবিলাস এবং সম্পদের অপচয়।” শ্রীরায়ের জীবনোপলব্ধির সঙ্গে বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থার ফারাক খুব বেশি একটা কীছু ছিল না। সম্প্রতি বাংলাদেশ উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় এমন একটি পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে যে, পৃথিবী বাংলাদেশের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। বলা হচ্ছে অগ্রগতির গতি বর্ধিত হলে বাংলাদেশ ২০৪০ সালে উন্নত দেশে পর্যবশিত হবে। এমতাবস্থায় মুক্তবাজার অর্থনীতির সকল অশুভ প্রবণতা সমাজের উপর একপ্রকার হামলে পড়েছে এবং মনে হচ্ছে এদেশে কোনও ভাল মানুষ বাস করে না। মাদ্রাসার কীছু উস্তাদ পর্যন্ত ধর্ষক হয়ে উঠেছে, চোর-বাটপারে ভরে গেছে দেশ। এবংবিধ খতরনাক আর্থসামাজিক বিন্যাস সাপেক্ষে একজন রাজনীতিবিদ সজ্জন ও পরিচ্ছন্ন হবেন তা ভাবাই যায় না। বিখ্যাত ইয়াবা ব্যবসায়ী কর্তৃক দেশের সাংসদের পদ অলঙ্কৃত হয়েছে, এই তথ্য কে না জনে। তারপরেও আপতিকতা বলে একটি কথা আছে। বকমধ্যে হংসের উপস্থিতি দৈবচক্রে সম্ভবব্যতার মাত্রা পেয়ে যেতেই পারে। সেটা একেবারে অসম্ভব নয়। এমন একটি আপতিক বিবেচনায় যে-কেউ নির্দ্বিধায় উপর্যুক্ত তৃতীয় বন্ধনীর ত্রিবিন্দুর পরিবর্তে সেখানে পাঠ করতে পারেন ‘সুনামগঞ্জÑ৩’, অর্থাৎ দক্ষিণ সুনামগঞ্জ এবং এই আসনটির নাম এলেই একজন সাংসদের নামোচ্চারণ অনিবার্য হয়ে উঠে। তিনি হলেন, সে-আসনটিতে টানা তিন বার নির্বাচিত সাংসদ – পরিকল্পনামন্ত্রী স্বনামধন্য এম এ মান্নান। তিনি অবশ্যই ব্যতিক্রম। বাংলাদেশের মতো আকণ্ঠ দুর্নীতির পঙ্কে নিমজ্জিত দেশে এমন হবার কথা নয়। সাংসদ ও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রতিমন্ত্রী, মন্ত্রী হিসেবে তাঁর সকল কর্মকা- নির্দ্বিধায় প্রমাণ করে যে, তিনি ব্যতিক্রম, তিনি পাঁকাল মাছের মতোন পাঁকের মধ্যে থাকেন, কিন্তু গতরে পাঁক লাগে না। দুর্নীতির পঙ্কে নিমজ্জিত থেকে দুর্নীতির পঙ্ক তাঁর গায়ে লাগে না। নির্মল থাকার এই শিক্ষা তিনি কোথায় পেয়েছেন জানি না। এ জন্যেই তিনি ব্যতিক্রমেরও ব্যতিক্রম, অনন্য এক পুরুষোত্তম।
অতিসম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রদত্ত এই মন্ত্রী মহোদয়ের একটি স্ট্যাটাস দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, অন্তত আমার। মনে হয়েছে লু সুন কথা বলছেন। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সেখানে লিখেছেন, “আমাদের যেসব শিক্ষকগণ ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, বায়োলজি, বিজ্ঞান, অঙ্ক পড়ান তাঁদের বেশিরভাগই প্রগতিশীল চিন্তা চেতনার অধিকারী নন। অথচ এই বিষয়গুলো প্রগতি, বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদিতা ডিমান্ড করে। তাঁরা এই বিষয়ে ঢুকে গবেষণাও করেন না। কিন্তু চিল্লাইয়া ধর্ম পালন করতে পছন্দ করেন, যদিও তাঁরা ধর্মের মূলমন্ত্র মানেন না।” বোধ করি একজন তাঁর অনুরাগী কেউ, এই স্ট্যাটাসের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে গিয়ে লিখেছেন, “আপনার প্রগতিশীল চিন্তাচেতনাও বিজ্ঞানমনস্কতার আপনাকে ভালোবাসি লিডার। […] আপনার দেখানো যুক্তি ও বিজ্ঞানের আলোর পথে আমরা পথ চলতে চাই।” এতো সহজ করে তাঁকে অনুসরণ করতে না পারলেও, এই অনুরাগীর মতো অনুসরণ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করতে পারবে না এই দেশের পশ্চাদপদ মানুষেরা। তাঁরা এতোটাই পশ্চাদপদ যে, তাঁরা একজন জনবান্ধব মন্ত্রীকে চিনবার অবস্থায় নেই। আসলে রাষ্ট্র এমন অবস্থায় উন্নীত হয়েছে যে, সাধারণ মানুষকে সে চেনে না। আর মন্ত্রীরা সেই রাষ্ট্রের পরিচালকদের পরিচালক। জনসাধারণকে শিক্ষায় পিছিয়ে রেখে তাঁদেরকে নিজেদের মঙ্গল হবে কীসে এই বোধ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখে দেশের উন্নয়ন হবে না। ভ- বুদ্ধিজীবী, হাইব্রিড রাজনীতিবিদ, অসাধু ব্যবসায়ী, ধর্মব্যবসায়ী দেশের সাধারণ মানুষকে ঠকাবেই। তাই বলি, এই দেশের মানুষকে যদি আপনার অভিমতানুসারে বিজ্ঞানমনস্ক করে তুলতে চান তবে সকল প্রকার উন্নয়নের সঙ্গে শিক্ষার প্রভূত উন্নয়নকে নিশ্চিত করতে হবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com