বিশেষ প্রতিনিধি ::
বিক্রি করতে না পেরে সুনামগঞ্জ, জগন্নাথপুর ও দিরাইয়ে ১ হাজার ৩৭৩টি চামড়া মাটিচাপা ও হাওরে ফেলে দিয়েছেন মাদরাসা কর্তৃপক্ষ। ঈদের দ্বিতীয় দিন প্রাথমিক প্রক্রিয়াকরণ শেষে ক্রেতা না পাওয়ায় হতাশ হয়ে তারা এই সিদ্ধান্ত নেন। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন বিভিন্ন এলাকা থেকে ‘গরিব ফান্ডে’র জন্য বিনামূল্যে এসব চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছিল। চামড়া বিক্রির আয়েই মাদরাসার গরিব ফান্ডের টাকায় ছাত্রদের থাকা-খাওয়া, বই-পুস্তকসহ কাপড়-চোপড় কিনে দেওয়া হতো। এদিকে চামড়ার দাম না থাকায় জেলার মওসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরাও চামড়া ক্রয় করেনি। যার ফলে বিভিন্ন এলাকায় চামড়া পুতে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন সংশ্লিষ্টরা।
জগন্নাথপুর উপজেলার সৈয়দপুর শাহারপাড়া ইউনিয়নের সৈয়দপুর হোসাইনিয়া হাফিজিয়া আরাবিয়া দারুল হাদিস মাদরাসা কর্তৃপক্ষ কোরবানি উপলক্ষে প্রায় ৯০০টি চামড়া সংগ্রহ করে। মাদরাসার ছাত্রদের বাড়ি বাড়ি পাঠিয়ে বিনামূল্যে এসব চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছিল। সংগৃহিত চামড়ার মধ্যে ৮০০ পিস গরুর ও ১০০পিস খাসি ও ছাগলের চামড়া ছিল। এগুলো সংগ্রহের পর লবণসহ প্রক্রিয়ার আনুষঙ্গিক উপকরণ কিনে সংশ্লিষ্টরা প্রাথমিক প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করেছিলেন। কিন্তু ঈদের পরদিন বিকেল ৩টা পর্যন্ত সেগুলো কেউ কিনতে না আসায় বাধ্য হয়ে সংশ্লিষ্টরা মাদরাসা আঙিনায় মাটিতে চামড়াগুলো পুতে দেন।
মাদরাসার পরিচালক হাফেজ মাওলানা সৈয়দ ফখরুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও আমাদের মাদরাসার পক্ষ থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কোরবানিদাতাদের নিকট থেকে প্রায় ৯০০ চামড়া সংগ্রহ করা হয়। ঈদের পরদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করেও কোন ক্রেতা না আসায় বাধ্য হয়ে এগুলো মাটিতে পুতে দিয়েছি। এতে আমাদের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। শ্রম দিতে হয়েছে।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার হাসননগর আসআদিয়া মাদরাসা কর্তৃপক্ষও বাড়ি বাড়ি ছাত্র পাঠিয়ে বরাবরের মতো ৩০০টি চামড়া সংগ্রহ করেছিল। এই চামড়া প্রাথমিক প্রক্রিয়াকরণ শেষে বিক্রির জন্য অপেক্ষা করা হয়েছিল। কিন্তু কোন ক্রেতা যাননি। বিক্রি না করতে পারে সংশ্লিষ্টরা স্থানীয় মুসল্লিদের বিনামূল্যে এগুলো দান করার কথা বললেও তারাও গ্রহণ করেনি। শেষমেষ মঙ্গলবার বিকেলে বুড়িস্থল এলাকায় নিয়ে চামড়াগুলো মাটিতে পুতে ফেলা হয়েছে।
মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ শামসুল ইসলাম বলেন, ছাত্ররা বাড়ি বাড়ি গিয়ে কষ্ট করে চামড়াগুলো সংগ্রহ করেছিল। কিন্তু ক্রেতা না পেয়ে আমরা পরদিন মাটিতে পুতে দিয়েছি। এতে টাকা ও শ্রমের ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে দিরাইয়ের পৌর সদরের ঐতিহ্যবাহী চান্দিপুর (চন্ডিপুর) ইসলামিয়া মাদরাসা কর্তৃপক্ষও ১৭৩টি সংগৃহিত চামড়া মাটিতে পুতে ফেলেছে। চামড়াগুলো মাদ্রাসার এতিমখানার জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংগ্রহ করে নৌকা ভাড়া করে পার্শ্ববর্তী কিশোরগঞ্জ পাঠানো হয়েছিল। সেখানেও ক্রেতা পাওয়া যায়নি। দুর্গন্ধ ছড়ানোয় ফেরার পথে মিঠামইন হাওরে সবগুলো চামড়া ফেলে দেন কর্তৃপক্ষ।
মাদরাসার পরিচালক মাওলানা নুর উদ্দিন বলেন, আমরা আলোচনা করে প্রতিটি চামড়া ১৭০ টাকা দর নির্ধারণ করে কিশোরগঞ্জ পাঠিয়েছিলাম। সেখানে যাওয়ার পর তারাও কিনতে চায়নি। শেষ পর্যন্ত হাওরেই ফেলে দেওয়া হয়েছে আমাদের সংগৃহিত চামড়াগুলো।
সুনামগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স সূত্রে জানা গেছে, জেলায় স্থায়ী কোন চামড়া ব্যবসায়ী নেই। মওসুমে ঈদ উপলক্ষে কিছু অস্থায়ী ব্যবসায়ী চামড়া সংগ্রহ করেন। তাছাড়া মাদরাসা কর্তৃপক্ষও সংগ্রহের পাশাপাশি বিক্রির জন্য চামড়া সংগ্রহ করেন। এবার মাদরাসা কর্তৃপক্ষ সংগৃহিত চামড়াই বিক্রি করতে পারেনি। তারা এবার ক্রয়ও করেনি। তাছাড়া মওসুমি ব্যবসায়ীরাও দাম না থাকায় এবার ক্রয় করেনি। যার ফলে চামড়া বিক্রি নিয়ে এই সংকট দেখা দিয়েছে।