স্টাফ রিপোর্টার ::
নিজেদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে নাগরিক সেবা বন্ধ করে কর্মসূচি পালনে নেমেছেন সুনামগঞ্জের চার পৌরসভার আড়াই শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। ফলে জেলার চারটি পৌরসভার নাগরিকরা সকল সেবা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় নাগরিকরা নানাভাবে ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন। জানা গেছে, সারাদেশের ন্যায় সুনামগঞ্জের চারটি পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাজস্ব খাত থেকে বেতন-ভাতাসহ সকল সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির দাবিতে এখন ঢাকায় কর্মসূচি পালন করছেন। যে কারণে পৌরসভা কর্মকর্তা-কর্মচারী শূন্য হয়ে পড়েছে। তালা ঝুলছে প্রতি শাখা দপ্তরের দরজায়। সপ্তাহের বেশি সময় ধরে নাগরিকরা ভোগান্তিতে পড়েছেন বলে জানা গেছে। নিজেদের দাবি আদায়ে সাধারণ মানুষকে সেবা বঞ্চিত করে দাবি আদায়কে অনৈতিক বলছেন সচেতন মহল।
জানা গেছে, বাংলাদেশ পৌরসভা সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের ডাকে সারাদেশের ন্যায় ৩২৮টির পৌরসভাসহ সুনামগঞ্জ, ছাতক, জগন্নাথপুর ও দিরাই পৌরসভার প্রায় আড়াইশ কর্মচারী গত ১৪ জুলাই থেকে ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনির্দিষ্টকালের অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন নেতৃবৃন্দ। এক পর্যায়ে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালনেরও হুঁশিয়ারি প্রদান করেছেন তাদের কেউ কেউ। যে কারণে চারটি পৌরসভা কর্মকর্তা-কর্মচারীশূন্য।
এদিকে নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দাবি আদায়ের আন্দোলনের কারণে সেবা বন্ধ করায় নাগরিকদের ভোগান্তি বেড়েছে। জরুরি অনেক সেবা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হওয়ায় নাগরিকরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
পৌর নাগরিকরা জানান, বন্যার কারণে শহর প্লাবিত হয়েছিল। এতে অনেক বর্জ্য রাস্তাঘাটসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নেমে এসে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। জরুরি এই সময়ে কর্মচারীরা আন্দোলনে ঢাকা চলে যাওয়ায় পৌর এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হচ্ছেনা। ময়লার স্তূপ জমে গন্ধ ছড়াচ্ছে। বিশেষ করে পানি, রাস্তায় বাতি সেবা বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন নাগরিকরা। জন্মনিবন্ধন, নাগরিক সনদ, মৃত্যুসনদ, ওয়ারিশান সনদ, লাইসেন্স সেবা বন্ধ থাকায় আর্থিক ক্ষতিসহ নানা ভোগান্তির মুখে পড়েছে নাগরিকরা।
সুনামগঞ্জ পৌর এলাকার পশ্চিমপাড়া এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী দুলাল মিয়া বলেন, আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। ব্যাংক থেকে ঋণ তোলার প্রয়োজনে লাইসেন্স নবায়ন প্রয়োজন। আমি তিন দিন পৌরসভায় গিয়েছি। সংশ্লিষ্ট শাখা বন্ধ থাকায় কাজের কাজ হলো না। কবে লাইসেন্স নবায়ন করতে পারবো জানি না।
উকিলপাড়ার বাসিন্দা সাহেল মিয়া বলেন, এ কেমন কথা। নিজেদের দাবি আদায় করতে গিয়ে সকল নাগরিক সেবা বন্ধ করে মানুষকে কষ্ট দেওয়া ঠিক না। সপ্তাহ সময় ধরে আমার ভাতিজার জন্মনিবন্ধন করার জন্যে পৌরসভায় যাচ্ছি। তালা বন্ধ থাকায় খালি হাতে ফিরে আসছি। এভাবে চলতে থাকলে মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে।
বাংলাদেশ পৌরসভা সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সিলেট বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কালি কৃষ্ণ পাল বলেন, আমরা পৌরসভার নাগরিকদের সেবা প্রদানে দিনরাত আন্তরিকভাবে কাজ করি। কিন্তু আমরা বেতন-ভাতা নিয়মিত পাইনা। ২ মাস থেকে ৬২ মাস পর্যন্ত বেতন বকেয়া আছে অনেক পৌরসভার কর্মচারীর। সারা জীবন নাগরিক সেবা প্রদান করলেও কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নেই। সরকারি সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি আমরা। রাজস্ব খাত থেকে বেতন-ভাতাসহ সরকারি সকল সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসলেও আমাদের দাবিকে আমলে নিচ্ছেনা কর্তৃপক্ষ। এখন আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করে যাবো। প্রয়োজনে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করবো। আন্দোলনের জন্যে ঢাকায় অবস্থান করায় পৌরসভার সকল নাগরিক সেবা বন্ধ থাকায় নাগরিকদের প্রতি দুঃখ প্রকাশ করেন এই নেতা।