আমরা উন্নতি করি বা উন্নত হয়ে উঠি, মনে হচ্ছে কেউ কেউ তা চান না। জাতিগতভাবে উন্নয়নের স্বাপ্নিকদের তাঁরা কখনওই পছন্দ করেন না। বাঙালির জাতিগত উন্নতি চাইতেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর একটাই স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা গড়ার। বাঙালির পক্ষে এর চেয়ে বড় স্বপ্ন আর নেই। এই স্বপ্ন দেখতেন বলেই তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর স্মৃতির সঙ্গে বাংলাদেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন জড়িয়ে থাকে। তাই বাঙালি হিসেবে বাংলাদেশের উন্নয়নের একচুল সহায়ক হতে পারে এমন কাজের সঙ্গে জড়িতরা যখন সে কাজটিকে নিজের পকেটের একটুখানি স্ফিতি বাড়ানোর অপকর্মের কাছে বলি দিয়ে প্রকারান্তরে বাংলাদেশর উন্নয়নের বিরোধিতা করেন এবং বুঝেন না যে, এই বিরোধিতা বাংলাদেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার জাতির জনকের স্বপ্নের সঙ্গে বিশ্বসঘাতকতার নামান্তর। কিন্তু বিষয়টি অবশ্যই প্রতিটি বাঙালির বুঝা উচিত। বুঝা উচিত যে, আমরা প্রত্যেকে যদি নিজের স্বার্থটুকু ত্যাগ করে যা করার কেবল যদি তা করি যথাযথভাবে তবেই দেশের উন্নয়নের জোয়ার সুনামিতে পর্যবশিত হবে।
গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদশিরোনাম ছিল, “পোনা অবমুক্তির বরাদ্দ নয়ছয়ের অভিযোগ”। কয়েকটি টাকা পকেটে পুরার লোভ সামলে যথাযথ নিয়মে পোনা অবমুক্ত করলে লক্ষ কোটি গুণ হয়ে তা ফিরে আসতো জাতীয় আয়ের তহবিলে। জাতির উন্নতির পথে এভাবেই প্রত্যেকটি খাতে নয়ছয়, অনিয়ম, দুর্নীতি করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির কাজটি যে-কোনও বিবেচনায় জাতির পিতার সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নের প্রতিবন্ধক। এক শ্রেণির স্বার্থন্বেষী মানুষের এইরূপ কাজকে কীছুতেই বরদাস্ত করা উচিত নয়। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নের বিরোধিতা বাংলাদেশের মাটিতে আগামী প্রজন্মের মানুষেরা বরদাস্ত করবে না। মনে রাখবেন, তাঁরা শরীরে ও মনে দু’দিক থেকেই বাঙালি হবে, শরীরে বাঙালি ও মনে রাজাকার হবে না। আগামী প্রজন্মের কাছে জবাবদিহি এড়ানোর প্রয়োজনে হলেও অনিয়ম, দুর্নীতি করে দেশের উন্নয়নকে থামিয়ে দেওয়ার অনুশীলন এবার বন্ধ করুন। রাজাকারী সংস্কৃতি পরিহার করুন।
যারা বরাদ্দ নয়ছয় করে, কোনও না কোনওভাবে সরকারি কাজে ফাঁকি দিয়ে, কিংবা অনিয়ম দুর্নীতি করে দেশের উন্নয়নের কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তারা যে-কোনও বিবেচনায় দেশের শত্রু, দশের শত্রু, সোনার বাংলা গড়ে তোলার স্বপ্নের শত্রু। কারণ দেশের উন্নয়ন ব্যাহত হতে পারে এমন যে-কোনও কাজের প্রতি অবহেলা, অনিয়ম, দুর্নীতি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বিরোধিতাই কেবল নয় দেশোন্নয়নেরও বিরোধিতা। এমন বিরোধিতা সহ্য করা উচিত নয়।
বিশেষ করে সরকারি দায়িত্বে থেকে যে-সব কর্মকর্তারা নিজেদের উন্নতির চেয়ে দেশের উন্নতিকে ছোট করে দেখেন এবং নিজের স্বার্থ উদ্ধারে ব্যস্ত থেকে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেন, তাদেরকে বলি এবার একটু বদলান। এটা ব্রিটিশ আমল নয়, পাকিস্তান আমলও নয়। এখন সা¤্রাজ্যবাদী মনোভাব নিয়ে দেশকে, দেশের মানুষকে শোষণ করার দরকার নেই। বুঝতে হবে এই দেশটাকে উন্নত করতে হবে। উন্নত করলেই অনিয়ম, দুর্নীতি করে যে-টাকা পকেটে পুরা যায় তার সহ¯্রগুণ টাকা উন্নয়ন করে পকেটে পুরা যাবে এবং কেউ আপনাকে দুর্নীতিবাজ আমলা বলবে না, সম্মান করবে। আবার বলি, দিন বদলে যাচ্ছে। দেশের মানুষ আপনাকে কম দেয় না। সরকার যেটুকু দেশের মানুষকে দেয় সেটুকুর দিকে দয়া করে হাত বাড়াবেন না।