পত্রিকায় লেখা হয়েছে, ‘পাবেল মিয়া গত মাসে মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে কথা বলায় তাকে মারধর করেছিল কারবারিরা।’ দেশের আর্থসামজিক অবস্থা এমন যে, এমন ঘটনা ঘটতেই পারে। এরচেয়ে গুরুতর ঘটনা যেখানে ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত। আসলে তেমন কিছু নয় বলে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়াই যায়। এই মাদকবিরোধিতার বিষয়টি বা মারধরের ঘটনার পেছনে একটি পশ্চাৎ পরিপ্রেক্ষিত বিছানো আছে, সেদিক থেকে বিবেচনায় ঘটনাটি একেবারে ফেলনা নয়, বরং তাৎপর্যপূর্ণ। পাবেলের জন্ম শাল্লা উপজেলার নারকিলা গ্রামে। শিক্ষা-স্বাস্থ্য-উন্নয়ন সব দিক থেকেই পশ্চাৎপদ রয়ে গেছে এই গ্রাম স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরেও। ভাবাই যায় না। এই পশ্চাৎপদতা কিংবা দারিদ্রতার সুযোগ নিয়ে এখানে মাদক উৎপাদনের ক্ষেত্র তৈরি করতে মাদকব্যবসায়ীদের তৎপরতা নতুন কোনও ব্যাপার নয়। পুঁজিবাদ সবসময়ই তার মুনাফার ক্ষেত্র তৈরি করতে ব্যস্ত থাকে এবং প্রকারান্তরে নারকিলার মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামকে অনুন্নত রাখার সকল প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে। যেমন সরকারি বা বেসরকারি কোনও কর্মসূচি বা জীবনমান উন্নয়নে কোনও প্রকল্প নেই গ্রামটিতে। পাবেলের প্রতিবাদটি একারণেই গুরুত্ববহ। এমন একটি গ্রাম থেকে পাবেল একমাত্র শিক্ষিত লোক যে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়েছে। এলাকায় পাবেলের শিক্ষিত হয়ে ওঠার এই ঘটনাটি সত্যিকার অর্থেই মানুষের কাছে একটি বিস্ময়কর বিষয়। পরীক্ষায় কৃতকার্যতার জন্য পাবেলকে অভিনন্দন।
পাবেলের পরিবারটি একটি হতদরিদ্র পরিবার। তার উচ্চশিক্ষার ব্যয়ভার বহন করার ক্ষমতা তার পরিবারের নেই। সুনামগঞ্জের সাবেক পুলিশ সুপার মো. হারুনুর রশিদ ও বর্তমান পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খানের আর্থিক সহায়তায় এ পর্যন্ত পাবেল তার শিক্ষাকার্যক্রম চালাতে সক্ষম হয়েছে। আমরা এই দুই কর্মকর্তাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই।
জানা কথা, আর্থিক সহায়তা না পেলে পাবেল আগামীতে তার শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে না। আমরা আশা করি, সমাজের সম্পন্ন মানুষেরা তার প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেবেন।