মোঃ শাহাদত হোসেন
বিশ্বকাপে যতগুলো দেশ খেলে তার মধ্যে নিজের দেশের বাইরে আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিলের সমর্থকই বেশি। বাংলাদেশেও ব্রাজিলের সমর্থক যদি থাকে ৪০%, তবে আর্জেন্টিনারও আছে ৪০% সমর্থক। আর এ সমর্থকরাই সারা মাস খেলাটাকে রাঙিয়ে রাখে।
এই বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার প্রথম ম্যাচ ছিল নবাগত আইসল্যান্ডের সাথে, ১৬ জুনে। সুনামগঞ্জে বিভিন্ন গ্রাম থেকে অনেক লোকজন ইজিবাইক রিজার্ভ করে শহরে আত্মীয়-স্বজনের বাসায় এসেছে বড় টিভিতে খেলা দেখার জন্যে। অনেক সমর্থকেরই ইচ্ছে ছিল খেলা শেষে মিছিল করবে। কিন্তু সে ম্যাচ আর্জেন্টিনা ১-১ গোলে ড্র করেছে। বিশেষ করে, স্বপ্নের নায়ক মেসি পেনাল্টি মিস করেছে। ফলে দূরের সমর্থকরা মাথা নিচু করে বাড়ি ফিরেছে, আর শহরের সমর্থকরা দরজা-জানালা বন্ধ করে চুপ করে থেকেছে।
বিশেষ করে, রোনালদো হ্যাট্রিক করার পর মেসির পারফরমেন্স তাদেরকে ব্যথিত করেছে। আজ কি মেসি যাদুতে সমর্থকরা উল্লসিত হতে পারবে? আজ রাত ১২টায় আর্জেন্টিনা নামবে ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে। এ মুহূর্তে আর্জেন্টিনা ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের পঞ্চম শক্তি, আর ক্রোয়েশিয়া কুড়িতম। আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জিতেছে দু’বার, রানার্স-আপ হয়েছে তিনবার, বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলেছে ১৬ বার। আর ক্রোয়েশিয়া বিশ্বকাপ খেলেছে মাত্র চারবার, তাদের সর্বোচ্চ সাফল্য হল ১৯৯৮ সালে, তাদের নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপে তৃতীয় স্থান অর্জন। এরপর ক্রোয়েশিয়া আর কখনো প্রথমপর্ব উতরাতে পারেনি। তবে এটাও মনে রাখতে হবে যে, প্রথম ম্যাচে আর্জেন্টিনা ড্র করেছে, আর ক্রোয়েশিয়া সুপার ঈগল নাইজেরিয়াকে ২-০ গোলে হারিয়েছে।
আজ আরো দুটো খেলা- ডেনমার্ক-অস্ট্রেলিয়া ও ফ্রান্স-পেরু ম্যাচ থাকলেও সবার দৃষ্টি থাকবে আর্জেন্টিনা-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচের দিকেই। কেননা, আজ যে আবার খেলবে মেসি। আসলে বিশ্বব্যাপী আর্জেন্টিনা ফুটবলের এই যে জনপ্রিয়তা, তার মূলে রয়েছে ডিয়াগো ম্যারাডোনা ও লিওনেল মেসি। আগের প্রজন্ম আর নতুন প্রজন্মের অনেকেই আর্জেন্টিনাকে সমর্থন করে ম্যারাডোনা আর মেসির খেলা ভাল লাগে বলেই।
ফুটবলের রাজা ম্যারাডোনা আশি ও নব্বইর দশকে ফুটবল প্রেমিদের মাতিয়ে রেখেছে। বার্সেলোনা আর ন্যাপোলিতে রয়েছে তাঁর বর্ণাঢ্য ফুটবল ক্যারিয়ার। অধিকন্তু ১৯৮৬ সালে তিনি আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নের শিরোপা এনে দিয়েছেন, ১৯৯০ সালে করেছেন রানার্স-আপ। তবে ডোপ টেস্টে পজেটিভ হওয়ায় ১৯৯৪ সালে বিশ্বকাপ চলা অবস্থায় তিনি ফুটবল থেকে বহিষ্কৃত হন। তা না হলে, ফুটবল বোদ্ধাদের মতে, ওই বিশ্বকাপটাও জিতে নিত আর্জেন্টিনা।
ম্যারাডোনার মত মেসিরও রয়েছে বর্ণাঢ্য ফুটবল ক্যারিয়ার। ফুটবলে তাঁর কৌশল দেখে অনেকে তাকে ভিনগ্রহের মানুষ হিসেবে ভাবেন। বিশ্ব ফুটবলে দলীয় যত রেকর্ড, তার বেশির ভাগই ব্রাজিল আর জার্মানির দখলে। কিন্তু ফুটবলে ব্যক্তিগত যত রেকর্ড আছে, সেখানে একচ্ছত্র আধিপত্য তাঁর। ক্লাব ফুটবলে অসাধারণ সাফল্য তাঁকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। নতুন নতুন রেকর্ড গড়েছেন, পুরাতন রেকর্ড ভেঙেছেন, নিজের রেকর্ড নিজেই ভেঙেছেন। কিন্তু এক জায়গায় তিনি যেন অসহায়। বিশ্বকাপ জেতা হয়নি। ২০০৬ সাল থেকেই আছেন বিশ্বকাপ দলে, নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশকে। কিন্তু বিশ^কাপ ছুঁয়ে দেখা হয়নি। ২০০৬ আর ২০১০ সালে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হয়েছে। ২০১৪ বিশ্বকাপে খেলেছেন ফাইনাল। কিন্তু জার্মানির কাছে হেরে (জার্মানি-১, আর্জেন্টিনা-০) রানার্স-আপ হয়েই দেশে ফিরতে হয়। ৩০ বছর বয়সী মেসির এটাই সম্ভবত শেষ সুযোগ। তাই আর্জেন্টিনার সমর্থকরা চাইছে, পাঁচবার (২বার চ্যাম্পিয়ন, ৩বার রানার্স-আপ) বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা আর্জেন্টিনাই জিতুক এবারের বিশ্বকাপ। আর সেটা করতে হলে ক্রোয়েশিয়া ও নাইজেরিয়াকে ধরাশায়ী করতে হবে আগে।