দৈনিক সুনামকণ্ঠের গতকালের একটি সংবাদশিরোনাম ছিল, “হাওর এলাকায় ৭০ শতাংশ ভর্তুকিতে কৃষিযন্ত্রপাতি”। সংবাদে প্রকাশ কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী সংসদে এক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে জানিয়েছেন যে, হাওর এলাকায় ৭০ শতাংশ ও হাওর এলাকা ব্যতীত অন্য এলাকায় ৫০ শতাংশ ভর্তুকি মূল্যে কৃষিযন্ত্রপাতি কৃষককে দেওয়া হচ্ছে। এই কৃষিবান্ধব কর্মসূচি কার্যকর করার জন্য তাঁকে অভিনন্দন জনাই।
এটা সর্বজন বিদিত যে, স্বাধীনোত্তর সময়ে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি এবং তখন দেশে বিপুল পরিমাণ খ্যাদ্যঘাটতি ছিল। পাকিস্তানিরা দেশের কৃষিনির্ভর পূর্বাঞ্চলের কৃষির উন্নতি করবে কি কোনও ক্ষেত্রেই কোনও উন্নয়ন কাজ করেনি, কেবল শোষণক্রিয়া বজায় রেখেছে। সবরকম সম্পদ দেশের পশ্চিমাঞ্চলে স্থানান্তর করেছে অবিরত । ফলে পূর্ববঙ্গে খাদ্যনিরাপত্তা বলে কীছু ছিল না। কিন্তু বর্তমানে তৎকালের তুলনায় লোকসংখ্যা দ্বিগণেরও অধিক কিন্তু দেশে খাদ্যঘাটতি নেই। স্বাধীনতার দুই বছর যেতে না যেতেই আক্ষরিক অর্থেই বিধ্বস্ত শিশুরাষ্ট্র বাংলাদেশ ১৯৭৪ সনে চরম দুর্ভিক্ষের কবলে পতিত হয়। এরপর বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে উত্তরোত্তর সাফল্য অর্জন করে বর্তমানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি দেশে পরিণত হয়েছে। এই স্বয়ম্ভরতার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান কৃষকের। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও কৃষক কিন্তু স্বয়ংসম্পূর্ণ এখনও হতে পরেনি। কৃষক এখনও দারিদ্যে মধ্যে ও আর্থনীতিক টানাপুরনের ভিতর দিয়ে তার জীবন নির্বাহ করে চলেছে। এবার ভর্তুকি মূল্যে কৃষিযন্ত্রপাতি ক্রয়ের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে কৃষককে। এটা কৃষকের জীবনকে স্বয়ম্ভরতামুখিন করবে বলে আশা করা যায়। সরকারের এই প্রয়াস অবশ্যই প্রশংসীয়।
তারপরেও কথা থেকে যায়। এসব যতকীছুই করা হোক না কেন, যদি কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের দাম, বিশেষ করে ধানের দাম, উৎপাদন মূল্যর অধিক নিশ্চিত করা ও তার সবটা কৃষকের হাতে জমা পড়ার ব্যবস্থা না করা গেলে কৃষকের জীবনমান কোনওভাবেই উন্নত করা যাবে না। কৃষক জাতির অর্থনীতির মেরুদ- হয়েও নিজে মেরুদ-হীন প্রাণী হয়েই থাকবে।