1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৫৫ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

বিরল রত্ন হোসেন বখত : ম ফ র ফোরকান

  • আপডেট সময় বুধবার, ১৩ জুন, ২০১৮

আমার গর্ব হচ্ছে, আমি কোনো রাজাকারকে নিয়ে লিখতে কলম ধরিনি। কলম ধরিনি স্বাধীনতাবিরোধী শান্তি কমিটির সভাপতি কিংবা সে সময়কার মানবহিতৈষীর ভেখধারী কোন রাজনীতিবিদদের প্রশস্তি গাইতে। আমি কলম ধরিনি এমন কোন ধুরন্ধর রাজনীতিবিদকে উপলক্ষ করে যিনি জনসেবার নামে জনসম্পদ গ্রাস করেছেন, অবৈধ সম্পদ থেকে অর্জিত টাকায় জীবনযাপন করেছেন রাজকীয় কায়দায়।
কবি ইকবাল কাগজী আমাকে অনুরোধ করেছেন এমন এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে লিখতে যিনি সুনামগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গনের প্রবাদপ্রতিম পুরুষ। তাঁর কর্মময় জীবনের শেষ পর্বে তিনি যখন একজন মহৎ রাজনীতিবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত তখন আমি এক বালক মাত্র। প্রচারবিমুখ এ মানুষটি সম্পর্কে যতটুকু জানি তার সবটুকুই জন-মানুষের কাছে শোনা। আর আমার কাছে মনে হয়েছে তিনি এক অবাক করা কিংবদন্তি।
বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে শুধুমাত্র প্রচারণার জোরে খ্যাতির শীর্ষে ওঠেছেন অনেক কুখ্যাত ব্যক্তি। একমাত্র, শুধু একমাত্র প্রচারণার রথে চড়ে অনেক অনেক দুর্নীতিবাজ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে নিয়েছেন জননন্দিত প্রতিনিধির আসনে। আবার এদেরই কেউ কেউ কিংবা তাদের পূর্বসূরিরা কখনো সরকারি ভূসম্পত্তিকে নিজেদের করায়ত্ত করে দিব্যি রাজারহালে জীবন কাটিয়েছেন। সরকারি সম্পদ গ্রাসে তাদের বিবেকে এতটুকু বাধেনি। এসব ভূমি তারা বিক্রিও করেছেন নিজেদের মৌরসী সম্পত্তি হিসেবে। কখনোবা নিলামে কেনা সম্পত্তি দাবি করে। সাধারণ মানুষ এসব জায়গা-জমি কিনে দু’তলা তিন তলা বাড়ি বানিয়ে আজ মহাফ্যাসাদে পড়েছেন। প্রতারক বিক্রেতারা দলিল করে দিচ্ছেন না। পিছু পিছু ঘুরাচ্ছেন যুগের পর যুগ ধরে। আবার যারা গায়ের রক্ত ঘাম আর শ্রমে ‘স্বনামধন্য’ প্রতারকদের পিছু পিছু ঘুরে যাওবা দলিল আদায় করতে সমর্থ হয়েছেন, সরকারি কর্তৃপক্ষ অবগত হওয়া মাত্র ক্ষেত্র বিশেষে তাও বাতিল করে দিয়েছেন। শহরের নতুনপাড়া, বুলচান্দ স্কুল সংলগ্ন কলেজ মাঠ ও হাছননগরে এর ভুরি ভুরি প্রমাণ বিদ্যমান। সরকার কখনো উচ্ছেদ অভিযান শুরু করলে একমাত্র নতুনপাড়াতেই কয়েক’শ পরিবার বাস্তুহারায় পরিণত হবে বলে অনেকের ধারণা। তারা নিজেদের জয়ডঙ্কা বাজানোর জন্য একদঙ্গল মোসাহেব পোষতেন। উচ্ছিষ্টভোগী মোসাহেব দলের কলমবাজী আর ক্যামেরাগিরিতে হোয়াইট কালার ক্রিমিনালরাই সমাজে শেষপর্যন্ত প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। পরিচিতি পেয়েছেন জননন্দিত নেতা হিসেবে। অথচ যারা ছিলেন প্রকৃতপক্ষেই স্বচ্ছ মানুষ, মানবকল্যাণে যাঁরা নিজের জীবনকে তুচ্ছজ্ঞান করেছেন তাঁরা রয়ে গেছেন লোকচক্ষুর আড়ালে। বলতে গেলে অন্ধকারে। এমনই এক মহান ব্যক্তিত্ব, অতুলনীয় নেতা ছিলেন হোসেন বখত।
সুনামগঞ্জ শহরের অনেক মুখোশধারী রাজনীতিক নিজেদের অবৈধ সম্পদের পাহাড় আগলে রাখার প্রয়োজনে যখন যে গাছে ওঠা দরকার সে গাছে ওঠতে কুণ্ঠাবোধ করেননি। সেখান থেকে তারা ফুল-ফল-রস সংগ্রহ করেছেন নির্লজ্জভাবে। নিজেরা হয়েছেন আরো হৃষ্টপুষ্ট। অথচ সুনামগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হোসেন বখত যখন ছিলেন বাস্তুহারার মতো, পাক হানাদার বাহিনী বাড়িঘর ভেঙে দেয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছিলেন, ঠিক তখনও এ নির্লোভ ব্যক্তিটি কোনোরূপ সরকারি সহায়তা নেননি। ভারত-ফেরত বহু রাজনীতিবিদ সরকারি টিন দিয়ে নিজের ঘর মেরামত করার প্রয়াস পেলেও হোসেন বখত পালন করেন বিপরীত ভূমিকা। তিনি সরকারি মালামাল বিতরণকারীদের বারবারই ফিরিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, আমার চেয়ে আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত আছে, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ যাদের পথে বসিয়ে দিয়েছে, আপনারা তাদের পাশে দাঁড়ান। তাদেরকে সহায়তা করুন। আমার জন্য চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। শুধু কি তাই? শুনলে অবিশ্বাস্য ঠেকে যে, হোসেন বখতকে সরকারি সাহায্য-সহযোগিতা সমঝাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন খোদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। যার ফলস্বরূপ বঙ্গবন্ধু একবার গর্ব করে বলতে বাধ্য হয়েছিলেন, ‘বাংলাদেশের সবগুলো মহকুমায় যদি একজন করে হোসেন বখত পেতাম তবে আমি এ দেশটাকে বদলে দিতাম।’ সরকারি সাহায্য প্রাপ্তির আশায় বঙ্গবন্ধুর কাছে আসা অসংখ্য মানুষকে দেখিয়ে তিনি হোসেন বখতকে বলেছিলেন- ‘দেখ্, ওরা সবাই এসেছে আমার কাছে সাহায্যের আশায়। এটা চাই, ওটা চাই, শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা। আর আমি যেখানে নিজ থেকে তোর (হোসেন বখত) বাড়ির জন্য মিরপুরে (ঢাকা) জায়গা দিতে চাচ্ছি, তুই নিতে চাচ্ছিস না! বলছিস, তোর চেয়েও আরো গরিব আছে দেশে।’
হোসেন বখত সম্পর্কে এ কথাগুলো আমি তন্ময় হয়ে শুনছিলাম। বলছিলেন হোসেন বখত-এরই এক মেয়ের জামাতা। শুনছিলাম আর মনে মনে ভাবছিলাম, হায়! একি শুনছি। এটাও কি বিশ্বাস করতে হবে আমাকে? এমন বিরল ব্যক্তিত্বও কি ছিলেন সুনামগঞ্জে? ধন্য রত্নগর্ভা সুনামগঞ্জ, ধন্য।
হোসেন বখত’র মৃত্যুর সামান্য কিছুদিন আগের কথা। ১৯৭৩ সাল। দেশে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। স্বাধীনতা পরবর্তী প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বরের বাড়ির সামনে প্রার্থী-সমর্থকদের উপচেপড়া ভিড় লেগেই আছে। জন-মানুষের একদিনের ভিড়ে হোসেন বখতও। সকালে বঙ্গবন্ধু বেরিয়ে যাচ্ছেন অফিসে। সবাই চেয়ে চেয়ে দেখছে। জনারণ্য পেরিয়ে হঠাৎ থেমে গেল বঙ্গবন্ধুর গাড়িবহর। গাড়ি থেকে নেমে পড়লেন স্বয়ং বঙ্গবন্ধু। দীপ্তপদে এগোতে লাগলেন অপেক্ষমাণ জনতার দিকে। কাছে এসেই বললেন- ‘হোসেন বখত! তুই এখানে? ঢাকায় কবে এসেছিস?’ তারপর বিকেলে বাসায় আসার কথা বললেন লুঙ্গি পরিহিত হোসেন বখতকে। হোসেন বখত বলেছিলেন, ‘এত ভিড়। কীভাবে আসব আপনার বাসায়?’ উত্তরে শেখ মুজিব বললেন, ‘সে চিন্তা তোর না। গেটে এসে শুধু নামটুকু বললেই চলবে।’ উপস্থিত সবাই হতবাক। সবাই ঘিরে ধরলো হোসেন বখতকে। বিস্ময়াভিভূত নানাজনের নানা প্রশ্নে জর্জরিত হোসেন বখত।
হোসেন বখত ১৯৭১’র স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় অনেক ঘটনার সাথে ছিলেন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। উল্লেখযোগ্য একটি স্মৃতি বর্ণনা করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মালেক হুসেন পীর। তিনি জানান, মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে ভারতের বালাট থেকে প্রথম ব্যাচে ২২ যুবককে পাঠানো হয়েছিল ইকো-১ ট্রেনিং ক্যাম্পে। উক্ত বীর যুবকদের ডাউকি ক্যাম্প পর্যন্ত সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হোসেন বখত।
হোসেন বখত প্রসঙ্গে আলাপ হচ্ছিল রাজনীতিবিদ নজির হোসেনের সঙ্গে। তাঁর দৃষ্টিতে হোসেন বখত যেমন ছিলেন অকুতোভয়, তেমনি ছিলেন দায়িত্ববান ও অত্যন্ত নির্ভরশীল রাজনীতিক এবং তীক্ষè বুদ্ধিসম্পন্ন স্পষ্টবাদী ন্যায়পরায়ণ এক অনন্য বিচারক। বিচারানুষ্ঠানে তিনি কথা বলতেন খুবই কম। পক্ষ-বিপক্ষের অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ শুনতেন গভীর মনোযোগ সহকারে। তারপর যে সিদ্ধান্তটি বেরুতো তাঁর মুখ থেকে তাকে বলা যায় ‘ম্যাজিক সমাধান’। সবারই মনমত হতো, সকলেই সন্তুষ্ট হতো এতে। কে খুশি হলো, কারা বেজার হতে পারে, এ নিয়ে কোন ভ্রূক্ষেপ ছিল না তাঁর।
পারিবারিক সূত্রে জানাযায়, মৃত্যুর কিছু কাল আগে চিকিৎসা ও পরিবার-পরিজনের ভরণপোষণের জন্য বেশ ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন হোসেন বখত। ওই সময় তাঁর ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় ১৪ হাজার টাকা। তখন এ টাকা পরিশোধের সামর্থ্য ছিল না তাঁর। পরবর্তীকালে তাঁর সন্তানরা বিদেশ থেকে রোজগার করে এ ঋণ শোধ করেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষে হোসেন বখত একটি জরাজীর্ণ বাড়িতে থাকতেন। আগেই বলা হয়েছে পাকিস্তানি হায়েনারা তাঁর নিজস্ব বসতঘরটি ধ্বংস করে দিয়েছিল। ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১-এ সুনামগঞ্জ মুক্ত হলে পরিবার-পরিজন নিয়ে এসে তিনি যে বাড়িতে ওঠেন, সেখানে কোনো চৌকি কিংবা খাট ছিল না। তাঁর কষ্টের কথা চিন্তা করে প্রতিবেশীরা একটি খাট জোগাড় করে দেন। ফলে হোসেন বখত খাটে শোবার সুযোগ পান। অন্যরা থাকতেন যথারীতি মাটিতে বিছানা পেতে।
পাকিস্তান আমলে মুসলিম লীগের দুঃশাসনকালে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে হোসেন বখত ছিলেন দেবতুল্য। তাদের যে কোন আপদে-বিপদে হিমালয়-দৃঢ়তায় পাশে দাঁড়াতেন তিনি। প্রখ্যাত কমিউনিস্ট নেতা কমরেড বরুণ রায়ের মা হোসেন বখতকে গণ্য করতেন ধর্মপুত্র বলে। কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ থাকাকালে গোপন রাজনীতিতে জড়িত পুত্রের সঙ্গে দেখা করতে বরুণ রায়ের মা মাঝেমধ্যে আসতেন হোসেন বখতের বাড়িতে।
‘রক্তমাখা কথামালা’ বইয়ে জননেতা হোসেন বখত সম্পর্কে মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান লিখেছেন, ‘তিনি সভাপতি না হয়েও সভাপতি, মন্ত্রী না হয়েও মন্ত্রী, স¤্রাট না হয়েও মানুষের হৃদয়ের স¤্রাট ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁকে স¤্রাট বলে সম্বোধন করতেন।’ লেখকের মতে, ‘শিক্ষা-দীক্ষায় অনগ্রসর হয়েও জ্ঞান-বুদ্ধি, সাহস, অভিজ্ঞতা, কর্মকৌশল, ত্যাগ-তিতিক্ষায় তিনি প্রখর ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়ে ওঠেছিলেন। সুনামগঞ্জের সাধারণ মানুষ তাঁকে আপনজন হিসেবে মনে করতো। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে একজন দক্ষ সংগঠক হিসেবে তিনি সারা মহকুমায় ব্যাপক পরিচিত লাভ করেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে তিনি ছিলেন এ অঞ্চলের অন্যতম সফল নেতা, জনপ্রিয় সংগঠক ও যোদ্ধা। তাঁর স্মৃতি ও কর্মময় জীবন আজো সুনামগঞ্জবাসীর কাছে অম্লান।’
পিতার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সুনামগঞ্জ পৌরসভার অকাল প্রয়াত মেয়র আয়ূব বখত জগলুল বলেছিলেন, সেবার (১৯৭৩) বাবা (হোসেন বখত) বঙ্গবন্ধুর কাছে গিয়েছিলেন এক অবিশ্বাস্য পরিকল্পনা নিয়ে। সুনামগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের নতুন এক এমপি প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করতে। দেখা হওয়ার পর বাবা বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন, ‘আপনি যখন আমাকে আওয়ামী লীগে টেনে আনেন তখন আমি কিন্তু বলেছিলাম আমি জমিদারবিরোধী, শোষকবিরোধী। প্রত্যুত্তরে আপনিও বলেছিলেন, আমিও। আমি শোষিতের পক্ষে, কৃষক-প্রজার পক্ষের লোক। সেই সুবাদে আজ আমি কৃষকের পক্ষের, কৃষকেরই এক সৎ সন্তানকে আপনার কাছে নিয়ে এসেছি। সুনামগঞ্জ-৪ আসনে তার মনোনয়ন চাই। এটাই আমার দাবি।’ গভীর চিন্তার মেঘে ঢাকা পড়ে গেল বঙ্গবন্ধুর মুখ। নীরব হয়ে রইলেন অনেকক্ষণ। এক সময় চোখ তুললেন। বললেন, ‘পারবি তো? পাস করিয়ে আনতে?’ আবেগাপ্লুত হয়ে পড়লেন বাবা। পায়ে ধরে সালাম করলেন বঙ্গবন্ধুকে। বললেন, ‘ইনশাল্লাহ। আপনি শুধু দোয়া করবেন।’ বাবা ফিরে এলেন সুনামগঞ্জ। ক’দিনের মধ্যেই সারাদেশের আওয়ামী লীগ মনোনীত এমপি প্রার্থীদের নামের তালিকা প্রকাশ শুরু হলো। সুনামগঞ্জ-৪ আসনের ক্ষেত্রে দেখা গেল, তালিকায় নেই সাবেক এমএনএ দেওয়ান ওবায়দুর রেজা চৌধুরী’র নাম। সেখানে মনোনয়ন পেয়েছেন আব্দুজ জহুর। যাঁর বাড়ি সুনামগঞ্জ শহরে নয়, তাহিরপুরের বিন্নাকুলী গ্রামের বাসিন্দা তিনি। আর এ আব্দুজ জহুরের মনোনয়নের দাবিতেই চরম অসুস্থ ও ভগ্ন শরীরে সেদিন বঙ্গবন্ধুর কাছে গিয়েছিলেন আমার বাবা হোসেন বখত।
হোসেন বখত-এর আবদার উপেক্ষা করতে পারেননি বঙ্গবন্ধু। মনোনয়ন দিয়েছিলেন আব্দুজ জহুরকেই। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, আব্দুজ জহুরের বিজয় হোসেন বখত স্বচক্ষে দেখে যেতে পারেননি। জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ৭ মার্চ ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে আর নির্বাচনের মাত্র ক’দিন বাকি থাকতেই ২ মার্চ মৃত্যুমুখে পতিত হন ক্ষণজন্মা এ রাজনীতিবিদ। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত এ নির্বাচন নিয়ে তিনি ছিলেন অস্থির। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, শুভাকাক্সক্ষীদের সিলেট মেডিকেল হাসপাতালের শয্যাপাশে দেখামাত্র তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে উঠতেন। কঠোর নির্দেশে পাঠিয়ে দিতেন সবাইকে সুনামগঞ্জে। তাগিদ দিতেন নির্বাচনী মাঠে সর্বশক্তি নিয়োগের। বলতেন, ‘আমি বঙ্গবন্ধুকে কথা দিয়ে এসেছি। আব্দুজ জহুরকে পাস করাতেই হবে।’ শেষ পর্যন্ত হলে বিস্ময়কর সুসংবাদ। পাস করেছেন হোসেন বখত-এরই পছন্দের প্রার্থী আব্দুজ জহুর।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com