সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
অনলাইনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অযথা সময় ব্যয় না করে মস্তিষ্ককে সঠিক কাজে লাগাতে শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানিয়েছেন লেখক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। শুক্রবার সকালে তথ্যপ্রযুক্তি উৎসব ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড’ এর তৃতীয় দিনের আসরে অধ্যাপক জাফর ইকবাল যোগ দিয়েছিলেন ‘চিলড্রেনস ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড’ শিরোনামের সেশনে।
স্কুলগামী তরুণদের ফেসবুক আসক্তিতে আশঙ্কা প্রকাশ করে উপস্থিত তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “তোমরা ফেসবুক ব্যবহার করো, টেকনোলজি ব্যবহার করো, কিন্তু টেকনোলজিকে তোমাকে ব্যবহার করতে দিও না। ফেসবুকে অযথা পোস্ট না দিয়ে পড়াশোনার কাজে ব্যবহার করো, সেখানে গ্রুপ স্টাডিও করতে পারো। খালি অযথা পোস্ট করা অন্যের পোস্টে লাইক দিয়ে সময় নষ্ট করো না।”
আসরে আসা একজন শিক্ষার্থী তখন জানায় জিপিএ-৫ এর বিড়ম্বনায় তারা প্রোগ্রামিংয়ে মনোযোগী হতে পারছে না। প্রোগ্রামিংয়ে মনোযোগী হলে তাদের সিলেবাসভিত্তিক পড়াশোনাও ‘ক্ষতিগ্রস্ত’ হচ্ছে।
তখন জাফর ইকবাল সবার উদ্দেশে বলেন, “প্রোগ্রামিং করা কিন্তু সাংঘাতিক জিনিস। ব্রেইনকে তাজা করতে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে পারে। প্রোগ্রামিং করতে গেলে বেশকিছু অ্যালগরিদম জানতে হয়, ম্যাথমেটিকস করতে হয়। এতে কিন্তু ব্রেইন তাজা থাকে। ব্রেইন তাজা থাকলে পড়াশোনাও ভালোভাবে হয়, রেজাল্টও ভালো হবে। আর রেজাল্ট ভালো করলে বাবা মা খুশি থাকবে। ”
অধ্যাপক জাফর ইকবাল জানান, তিনি অবসর পেলেই কোডিং করতে বসে পড়েন।
“যখন খুব টায়ার্ড লাগে, তখন আমি প্রোগ্রামিং করতে বসি অযথাই। সি++ (প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্হুয়েজ)… কয়েকটা স্টেটমেন্ট জানি। কখনো কোনো ভেরিয়েবল নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে আমাদের ছাত্রদের কল করি, ওরা বলে দেয় কোন ভেরিয়েবল ব্যবহার করব। কখনো শুধু শুধুই কোডিং করি ব্রেইনটাকে তাজা রাখতে।”
পরে তিনি জানান, সম্প্রতি একটি বাংলা লেখাকে স্ক্যান করে পরে তা অপটিক্যাল রিকগনাইজ করে ক্যারাক্টারগুলোকে বের করতে তিনি কোডিং করেছেন।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতে তরুণরা নানা উদ্ভাবনী প্রকল্প নিয়ে এগিয়ে আসায় আশাবাদী অধ্যাপক জাফর ইকবাল বলেন, “আমাদের দেশের এই তরুণরা কিন্তু চাইলে অনেক কিছু করে দেখাতে পারো। কোনো ব্যাকগ্রাউন্ড লাগে না। কোনো কিছুতে ভয় পাবে না তোমরা।”
তরুণদের কোচিং সেন্টার, গাইড বই নির্ভরতা কমিয়ে পাঠ্যবই বই ভালোভাবে পড়তে অনুরোধ জানানোর পর জিপিএ-৫ ইস্যুতেও কথা বলেন তিনি।
“এখন কেউ যদি এসে বলে, আমার ছেলেটা জিপিএ-৫ পেয়েছে, তাহলে আমি বলি আহারে আহারে! না জানি বাবা মা কত প্রেসার দিয়েছে, কোচিং করেছে বা গাইড বই পড়েছে। কিংবা বাবা মা রাত জেগে ফেসবুক থেকে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন ডাউনলোড করে ছেলেমেয়েকে সেটা পড়িয়েছে। তার চেয়ে কেউ যদি বলে তার সন্তান জিপিএ-৫ পায়নি, তখন আমি বাহবা দেই।”
পরে পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি গল্পের বই পড়তে দিতেও অভিভাবকদের অনুরোধ জানান লেখক জাফর ইকবাল।