হোসাইন আহমদ ::
আধুনিক চাষবাস বিষয়ে ধারণা নেই কৃষকের। তারা পূর্বপুরুষের প্রদত্ত ঐতিহ্যনির্ভর শিক্ষা থেকেই কৃষিকাজ করে থাকেন। দেশের সর্ববৃহৎ বোরো ভা-ারখ্যাত হাওরের কৃষক আধুনিক পদ্ধতির বদলে সনাতন পদ্ধতিতেই জমি চাষ করে থাকে। ঐতিহ্যনির্ভর এই পদ্ধতির সঙ্গে বিজ্ঞানবিষয়ক পরামর্শ পেলে ফলন আরো বাড়বে বলে মনে করেন অভিজ্ঞজন।
জানা গেছে, সরকার কৃষিতে অধিক ফলনের জন্য ঐতিহ্যনির্ভর শিক্ষার সঙ্গে আধুনিকতার সমন্বয় ঘটিয়ে নানা যন্ত্রপাতির ব্যবহারে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে। সরকারিভাবে বিনামূল্যে এবং কিস্তিতেই সেই সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি অধিক ফলনের জন্য বীজ, সারসহ নানা প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে কৃষিকাজে নিয়োজিত কৃষিবিভাগের লোকজন কৃষকদের সরাসরি মাঠে গিয়ে পরামর্শ না দেওয়ায় তারা বঞ্চিতই থেকে যাচ্ছে। কৃষকদের বেশিরভাগই নিরক্ষর থাকায় কৃষিতে আধুনিক শিক্ষাগ্রহণেও তারা অনাগ্রহী। তাছাড়া গ্রামের অভিজ্ঞ কৃষকদেরও জ্ঞান কাজে লাগানোর সুযোগ না থাকায় অন্যান্য কৃষকরাও বঞ্চিত হচ্ছে।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার ছোট বড় প্রায় ২৩টি হাওর রয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস ও মাঠ পর্যায়ে উপ সহকারি কৃষি অফিসারদের পর্যবেক্ষণ, কৃষি পরামর্শ ও কৃষকদের মধ্য বোরো ধান চাষাবাদে পরামর্শ দেওয়ার কথা। সরকার প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের তৈরি করলেও প্রশিক্ষণলব্ধ সেই জ্ঞান কৃষকদের কাজে লাগছেনা। জনবল সংকট ও দায়িত্ব অবহেলার কারণে আধুনিক চাষাবাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে হাওরের কৃষকেরা।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বিগত বোরো মৌসুমে প্রায় ২৩ হাজার ১ শত হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু সরকারি পর্যায়ে চলতি বছরে এখনো কোন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়নি। এ উপজেলায় মোট ৩২ হাজার কৃষক পরিবার রয়েছে এবং সরকারি ভর্তুকির আওতায় আছে ২৯ হাজার ২ শত ২৭টি কৃষি পরিবার। চলতি বছরে হাওরাঞ্চলের কৃষকদের বোরো ধানের বীজতলা তৈরির কাজ করছে কৃষকরা। সরকার প্রদত্ত চলতি বছর আগাম জাতের বোরো মৌসুমে ধান যেমন-ব্রি-ধান-২৮, ব্রি-ধান-২৯, ব্রি-ধান-হাইব্রিড এস.এল-৮এইচ ও উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান আবাদে কৃষক বীজতলা ও চাষাবাদের জমি তৈরির কাজ করছেন। তাদের অভিযোগ ক্ষেতে নামার পর নানা সমস্যা দেখা দিলেও সেই সমস্যা কাটিয়ে ওঠতে কোন সুপরামর্শ পাচ্ছেনা তারা।
কৃষকদের অভিযোগ, মাঠপর্যায়ে উপ-সহকারি কৃষি অফিসার ও কৃষি বিভাগ পর্যাপ্ত পর্যবেক্ষণের অভাবে এবং চারা গজানো থেকে শুরু করে পাকা পর্যন্ত নানা রোগে আক্রান্ত হয় ধানগাছ। এই সময়ে অসহায় কৃষক কোন পরামর্শ পাননা। তখন সনাতন নির্ভর জ্ঞানেই তারা সমস্যা কাটিয়ে ওঠতে চেষ্টা করেন।
কৃষকদের মতে এই অঞ্চলের কৃষি প্রকৃতির উপরই নির্ভরশীল। প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা শিলাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টির কারণে বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। তাছাড়া বোরো ধান চাষাবাদে কৃষি উপকরণ ক্রয়, কৃষি শ্রমিকের মজুরি এবং শেষ মুহূর্তে সেচের যোগান দিতে গিয়ে আর্থিকভাবে সর্বস্বান্ত হতে হয়েছে। বাজার অনুযায়ী কাক্সিক্ষত মূল্য না পাওয়ায়ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার আব্দুল মজিদ কলেজের প্রভাষক নুর হোসেন জানান, সরকার কৃষকদের ভাগ্যের উন্নয়নে প্রতি বছরই ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করে। কিন্তু স্থানীয় পর্যায়ে কৃষকদের সুপরামর্শ ও অধিক ফলন লাভের জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদানের মতো কোন লোক আছে বলে আমার মনে হয় না। সরকারের কৃষি অধিদপ্তর কৃষকদের উন্নয়নে কাজ করলেও মাঠ পর্যায়ে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড ভিত্তিক উঠান বৈঠকসহ গ্রামীণ কৃষকদের উন্নয়নে তেমন উদ্যোগ নেই। দায়িত্বপ্রাপ্তদেরও উদাসীনতা আছে।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. জাহেদুল হক বলেন, কৃষকদের প্রতি বছরই আমরা নানা প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। সরকার অনেক যন্ত্রপাতিও দিচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগ পদই শূন্য। যে কারণে মাঠপর্যায়ে কৃষকদের সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।