মো. আমিনুল ইসলাম ::
৬ ডিসেম্বর সকাল। ১৯৭১ সালের এ দিনে হানাদার মুক্ত হয়েছিল সুনামগঞ্জ। গতকাল বুধবার এ দিনটি বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদযাপন করেন সুনামগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষ। সুনামগঞ্জ মুক্ত দিবসকে ঘিরে কর্মসূচি ছিল জেলা পুলিশ প্রশাসনেরও। ওইদিন সকালে জেলা পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খান-এর পরিকল্পনা অনুযায়ী নদীপথে যাত্রা করেন জেলা পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাবৃন্দ। সঙ্গে ছিলেন জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের বীর মুক্তিযোদ্ধারা। গন্তব্য ছিল মুক্তিযুদ্ধকালীন স্মৃতি বিজড়িত স্থান ডলুরা। সকাল ৭টা ৪৯মিনিটে স্পিডবোটযোগে ডলুরা এলাকায় পৌঁছান পুলিশ কর্মকর্তাবৃন্দ ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা। সেখানে ৪৮ শহীদের গণকবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তাঁরা। এসময় শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খান। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পূর্ব) সঞ্জয় সরকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হাবিবুল্লাহ, সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার তাপস রঞ্জন ঘোষ, সহকারি পুলিশ সুপার বিল্লাল হোসেন, সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ, ওসি (তদন্ত) আব্দুল্লাহ আল মামুন, জেলা গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন মৃধা, আব্দুল লতিফ, জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মকসুদ আলী, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার হাজী নুরুল মোমেনসহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ।
পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে পুলিশ সুপার মো. বকতুল্লাহ খানের নেতৃত্বে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে সালাম জানান পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তা ও সদস্যবৃন্দ। পাশাপাশি সালাম জানান অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধারাও। পরে যুদ্ধকালীন স্মৃতিচারণ করেন মুক্তিযোদ্ধারা। অনেকেই তাদের শহীদ সহযোদ্ধাদের স্মৃতিকথা উল্লেখ করে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। পরে জেলা পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খান ৪৮ শহীদের গণকবর এলাকা ঘুরে দেখেন।
গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খান বলেন, ‘আজকের বাংলাদেশ এবং আমাদের সুন্দর দিনগুলো বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অসামান্য আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত। আমরা কোনদিনও তাদের ঋণ শোধ করতে পারবো না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে শোষণমুক্তির জন্য বাংলার দামাল ছেলেরা তাদের জীবন বাজি রেখেছিল, অনেক নারীও এ যুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করেছিল বাঙালি মাথা নত করেনা। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করছি। দেশপ্রেমের ব্রত নিয়ে আমাদের তরুণ সমাজ ও নতুন প্রজন্মকে এ কাজে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারের চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করতে সুন্দরের পথে এগিয়ে যেতে হবে।
পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খান আরো বলেন, ‘আমরা মাদকমুক্ত-সন্ত্রাসমুক্ত এবং সুশিক্ষার আলোয় আলোকিত তারুণ্যের বাংলাদেশ চাই। যে বাংলাদেশে মুক্তিসেনাদের স্বপ্নের বাস্তবায়ন হবে, যেখানে থাকবে শান্তি আর সমৃদ্ধি।
৪৮ শহীদের গণকবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সকাল ১১টায় শহরে জেলা প্রশাসন আয়োজিত সুনামগঞ্জ মুক্ত দিবসের র্যালিতে অংশগ্রহণ করেন পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খান।