মোসাইদ রাহাত ::
বর্ণাঢ্য আয়োজনে সুনামগঞ্জ মুক্ত দিবস পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে জেলা প্রশাসন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের উদ্যোগে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন সংগঠন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে।
জেলা প্রশাসনের আয়োজনে মাসব্যাপী মহান বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে সুনামগঞ্জ মুক্ত দিবসে বুধবার সকাল ৯টায় বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সুনামগঞ্জ জেলা ইউনিট কমান্ডের প্রশাসক ও জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এসময় সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহান, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সুনামগঞ্জ জেলা ইউনিট কমান্ডের সাবেক কমান্ডার হাজী নুরুল মোমেনসহ বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ উপস্থিত ছিলেন।
সকাল ১১টায় বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সুনামগঞ্জ জেলা ইউনিট কমান্ডের প্রশাসক ও জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম সুনামগঞ্জ কেন্দ্রীয়
শহীদ মিনারে পু®পস্তবক অর্পণ করেন। এছাড়া শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সুনামগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আয়ূব বখত জগলুল, সুনামগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ, জেলা ছাত্রলীগ, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড, সুশীল সমাজ, খেলাঘর, প্রথম আলো বন্ধুসভাসহ বিভিন্ন সংগঠন।
অপরদিকে, সুনামগঞ্জ মুক্ত দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সুনামগঞ্জ জেলা ইউনিট কমান্ডের প্রশাসক ও জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলামের নেতৃত্বে শহরে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শহীদ আবুল হোসেন মিলনায়তনে আলোচনা সভায় মিলিত হয়।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সুনামগঞ্জ জেলা ইউনিট কমান্ডের প্রশাসক ও জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) বিশ্বজিৎ দেব-এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খান, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডের প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহান, বাংলাদেশ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সুনামগঞ্জ জেলা ইউনিট কমান্ডের সাবেক কমান্ডার হাজী নুরুল মোমেন, আ.লীগ নেতা আজিজুস সামাদ ডন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান, আলী আমজদ, আব্দুল হাসিম, হাজী মুজাহিদ উদ্দিন আহমেদ, আবু সুফিয়ান প্রমুখ।
জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, দেশের উন্নয়নে বর্তমান সরকার নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। তার মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ অন্যতম। আমাদের সরকারের স্বপ্ন আছে ২০৪১ সাল নাগাদ সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন। এই সোনার বাংলাতে কেউ দরিদ্র্য থাকবে না। প্রত্যেকের বাসস্থান থাকবে, প্রত্যেকের ঘর থাকবে। বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে।
তিনি আরো বলেন, আজকে সরকার একটা কর্মসূচি নিয়েছে যে সকল মুক্তিযোদ্ধার নিজেদের ঘর নাই, একদিকে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে তাদের ঘরের জন্যে একটা তালিকা করে তাদের জন্য ঘর তৈরি করে দেওয়ার জন্য নাম পাঠাচ্ছি। এর বাইরেও সরকারের আরেকটি প্রকল্প আছে। যাদের একেবারে ভূমি নেই, তাদের খাস জমি বিতরণের জন্য। তারা যদি নিজেরা একটি আবেদন উপজেলা পর্যায়গুলোতে জমা দেন আমরা খাস জমি দেখে আবাসন ও আশ্রায়ন প্রকল্পে তাদের জন্য একটা ব্যবস্থা করব। সরকারের সহায়তায় গৃহহীন মুক্তিযোদ্ধাদের ঘর তৈরি করে দেওয়া হবে।
সাবিরুল ইসলাম আরো বলেন, সুনামগঞ্জ বাংলাদেশের একমাত্র জায়গা যে জায়গাটাতে তিন তিনটা স্বাধীনতা উপত্যকা আছে। সেইখানে পাকবাহিনী একদিনের জন্যে আসলে যেতে পারেনি। এই কথাটা আমরা সারা বিশ্বকে জানিয়ে দিতে চাই। এই কারণে আমরা ট্যাকেরঘাটে স্বাধীনতা উপত্যকা করছি, ডলুরা স্বাধীনতা উপত্যকা হচ্ছে, বাঁশতলা স্বাধীনতা উপত্যকা হচ্ছে। এই স্বাধীনতা উপত্যকা ঘোষণার পরে সেই জায়গাগুলোতে ইতিমধ্যে ট্যাকেরঘাটে ২ একর জায়গা দেওয়ার প্রস্তাবনা দিয়েছি। কারণ আমরা ট্যুরিস্ট স্পট করব। আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস জানার জন্য মানুষ এখানে আসবে এবং প্রত্যেক উপত্যকায় একটি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও লাইব্রেরি হবে। তাছাড়া আমাদের আরেকটি উদ্যোগ চলমান আছে প্রত্যেক উপজেলায় ও ইউনিয়নে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও লাইব্রেরি হবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম বলেন, আমার আপনাদের কাছে একটা অনুরোধÑ আপনারা আপনাদের স্মৃতিটুকু দিয়ে আমাদের আগামী তরুণ প্রজন্মকে জানার সুযোগ করে দিবেন। জেলা প্রশাসক জানান, আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের কবর বাধানোর কাজ হাতে নিয়েছি। ইতিমধ্যে ডলুরায় কাজ চলছে। সুনামগঞ্জে যতগুলো বধ্যভূমি আছে যেখানে আমাদের যোদ্ধাদের মেরে ফেলা হয়েছিল তাদের নাম যদি কেউ জানেন তাহলে আমরা তাদের নামগুলো ঐ জায়গাগুলোতে লিখে দিতে পারব।
জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম আরো বলেন, বর্তমান প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দীক্ষিত হতে হবে। স্বাধীনতার চেতনাকে লালন করতে হবে। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জ্বীবিত হয়ে দেশের জন্য, দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করতে হবে।
আলোচনা সভা শেষে দেশাত্মবোধক ও মুক্তিযুদ্ধের গান পরিবেশন করেন জেলা শিল্পকলা একাডেমির শিল্পবৃন্দ।