1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
বৃহস্পতিবার, ০১ জুন ২০২৩, ০৭:৪৯ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

আইসিটি নিয়ে বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে তরুণদের প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৭

সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, দেশের মেধাবী তরুণ প্রজন্মই আইসিটি সেক্টরকে এগিয়ে নেয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশকে উন্নত দেশের কাতারে সামিল করার স্বপ্ন সার্থক করবে। সুন্দর আগামীর জন্য তরুণ প্রজন্মকে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা তরুণদের আধুনিক প্রযুক্তি শিক্ষায় দক্ষ করে গড়ে তুলছি। কাজেই সমগ্র বিশ্ব এখন তাদের হাতের মুঠোয় এবং আমি আশা করি এই তরুণরাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে জাতির জনকের উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নকে সার্থক করবে।
প্রধানমন্ত্রী বুধবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আইসিটি সেক্টরের মেগা ইভেন্ট চারদিন ব্যাপী ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১৭’র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
আইসিটি খাত ২০২১ সাল নাগাদ দেশের দেশের উন্নয়নের সবথেকে বড় অংশীদার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং আমরা আমাদের জিডিপিকে ৭ দশমিক ২৮ ভাগে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। রপ্তানিও আমাদের বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু আমি মনে করি, আইসিটি সেক্টরটাকে যদি আমরা আরো সুযোগ দেই তাহলে এখান থেকেই আমাদের রপ্তানী আরো ব্যাপক হারে আসবে। আমাদের আর অন্য কোনদিকে তাকাতে হবে না এবং আমাদের ছেলে-মেয়েরা এ ব্যাপারে যথেষ্ট মেধাবী।
এ খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য এই বছর থেকে রপ্তানিতে ৫ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, চলতি অর্থবছরে সফটওয়্যার রপ্তানি থেকে আয় ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। আশা করা হচ্ছে, ২০২১ সালের মধ্যে এ আয় ৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে এবং জিডিপিতে সফটওয়্যার ও আইসিটি সেবাখাতের অবদান ৫ শতাংশে উন্নীত হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি জেলায় হাইটেক বা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। সেইসাথে ১শ’ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হয়েছে। বেসরকারি উদ্যোক্তরা বিনিয়োগ করতে এলে এসব জায়গাতেও প্লট বরাদ্দ করা হবে।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং আইসিটি মন্ত্রণালয় স¤পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ইমরান আহমেদ এবং বাংলাদেশ সফটওয়্যার ইনফর্মেশন সার্ভিসেস (বেসিস) সভাপতি ও বিজয় সফটওয়্যারের প্রবক্তা মোস্তফা জব্বার। আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সচিব সুবীর কিশোর চৌধুরী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে দেশের তথ্য প্রযুক্তি খাতের অগ্রগতি নিয়ে একটি ভিজ্যুয়াল প্রেজেন্টেশনও পরিবেশিত হয়। কয়েকটি আইটি সংগঠনের সহযোগিতায় আইসিটি বিভাগ ও বেসিস ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১৭’-এর আয়োজন করেছে। ‘রেডি ফর টুমরো’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আয়োজিত এবারের ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে দেশী-বিদেশী প্রায় ৪শ’ আইসিটি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করছে।
প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক ছেলে-মেয়ে আমাদের শ্রমবাজারে আসছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের জন্য চাকরির সুযোগ তৈরি করার পাশাপাশি নিজেরাও যেন তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তা হতে পারে সে ব্যাপারেও আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, দেশজুড়ে গড়ে তোলা হচ্ছে ২৮টি হাইটেক ও সফটওয়্যার টেকনোলজী পার্ক। এর মধ্যে ঢাকার কারওয়ান বাজার ও যশোরে সফটওয়্যার পার্কের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ ছাড়া ১২টি বেসরকারি সফটওয়্যার পার্কও গড়ে উঠেছে। এসব পার্কে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করার জন্য ১০ বছরের আয়কর মওকুফ ও শতভাগ রিপেট্রিয়েশনসহ বিবিধ সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ছেলে-মেয়েকে ঘরে বসে ট্রেনিং দেওয়া এবং বিভিন্ন ভাষায় শিক্ষা দেয়ার জন্য ইতোমধ্যে ১০টি ভাষায় অ্যাপ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে এবং তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘লার্নিং এন্ড আর্নিং’ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। পোস্ট অফিস ডিজিটাল করে দেয়া হয়েছে। ইউনিয়নে ইউনিয়নে রয়েছে ডিজিটাল সেন্টার। গ্রামে নিজের ঘরে বসে ছেলে-মেয়রা এখন বিদেশ থেকে টাকা উপার্জন করতে পারছে।
তিনি বলেন, এটাকে আরো উন্নত করে দেয়া হবে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফ্রি-ল্যান্সিং সাইট আপওয়ার্ক, ইল্যান্স এবং ফ্রি-ল্যান্সারের প্রথম দশটির মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে আমাদের ফ্রি-ল্যান্সাররা। বিশ্বে ফ্রি-ল্যান্সারের সংখ্যার দিক থেকে আমরা রয়েছি দ্বিতীয় স্থানে। আমরা প্রথমস্থানে উঠবো ইনশাল্লাহ। আমরা আশা করছি, ২০২১ সাল নাগাদ আমাদের ২০ লাখ তরুণ-তরুণী তথ্য প্রযুক্তির পেশার সঙ্গে যুক্ত হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আমাদের নিজস্ব ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন বানানো শুরু করেছি। এই খাতে উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে চলতি বছর থেকে আমরা ৯৪টি উপকরণের ওপর শুল্ক প্রতীকী ১ শতাংশ করে দিয়েছি। ফলে কেবল দেশীয় উদ্যোক্তারা নয়, বিশ্ববিখ্যাত নির্মাতারাও এখানে কারখানা তৈরিতে আগ্রহী হবে। ইতোমধ্যে স্যামসং-এর মত কো¤পানি ঢাকার অদূরে কারখানা স্থাপন করেছে। এ খাতে বিনিয়োগকারীকে আমরা সর্বোতভাবে সহায়তা দেওয়ার নিশ্চয়তা দিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের সংযোগ ও বেসরকারি খাতে ৬টি ইন্টারন্যাশনাল টেরিস্ট্রিয়াল কেবলের সুবিধা দিয়েছি। যার ফলে দেশব্যাপী ১০ গুণেরও বেশি ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ ব্যবহার বেড়েছে। ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ রপ্তানিও হচ্ছে। যে ব্যান্ডউইথ এর দাম ২০০৭ সালে ছিল ৭৬ হাজার টাকা তা এখন ৫০০ থেকে ১০০০ টাকায় নেমে এসেছে। ফলে ই-গভর্নেন্স, ই-হেলথ, ই-কমার্স, ই-লার্নি, মোবাইল এপ্লিকেশনসহ ইন্টারনেটের বহুবিধ ব্যবহার সহজলভ্য হয়েছে।
আগামী কিছুদিনের মধ্যে ফোর জি (৪এ) প্রযুক্তি চালু কর করা হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তথ্য প্রযুক্তি খাতের বিকাশে উদ্ভাবন সক্ষমতা ও গবেষণার কোন বিকল্প। তিনি বলেন, এ জন্য আইসিটি বিভাগের আওতায় গবেষণা ফেলোশীপ, বৃত্তি প্রদান এবং উদ্ভাবন কাজের জন্য অনুদান প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া ‘ইনোভেশন ডিজাইন এন্ড এন্টারপ্রেনারশীপ একাডেমী’ স্থাপন এবং গড়ে তোলা হয়েছে নতুন প্ল্যাটফর্ম ‘স্টার্টআপ বাংলাদেশ’।
তিনি বলেন, উদ্যোক্তাদের ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ঋণসহ বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ এর উদ্যোগে ‘ইই ফান্ড’র ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
আমাদের তরুণদের সক্ষমতা আজ বিশ্বজুড়ে নজরও কাড়ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাপানের মত উন্নত দেশের ১০ হাজার এপার্টমেন্টকে স্মার্ট করার কাজটা তাঁরা আমাদের তরুণদের হাতে তুলে দিয়েছে। তারা এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
এই খাতটিকে আরো যোগ্য করে গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমেরিকা, ইউরোপ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের প্রায় ৫০টিরও বেশি দেশে বাংলাদেশের তৈরি সফটওয়্যার ও আইটি সেবা আমরা সরবরাহ করছি। বেসরকারিখাতের প্রতিষ্ঠানকেও আমরা সহযোগিতা করছি। আমাদের কো¤পানিগুলো এখন আফ্রিকাতেও পদচারণা করতে সক্ষম হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে ইনশাল্লাহ। যে বাংলাদেশের স্বপ্ন জাতির পিতা দেখেছিলেন, যে লক্ষ্যে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল সেই লক্ষ্য আমরা অর্জন করতে চাই। অর্থাৎ বাংলাদেশ আর কারো কাছে হাত পেতে চলবে না, ভিক্ষা করে চলবে না, নিজের পায়ে দাঁড়াবে। মর্যাদার সাথে বিশ্বব্যাপী মাথা উঁচু করে চলবে।
’৭৫ এর পর স্বৈরশাসন এবং পরবর্তীতে জামায়াত-বিএনপি’র দুঃশাসনে দেশের পিছিয়ে পড়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা অর্জনের ৪৬ বছরের মধ্যে ৩০টি বছর আমাদের জীবন থেকে হেলায় হারিয়ে গেছে। দুর্ভাগ্য এই ৩০টি বছর যদি হারিয়ে না যেত এই ৩০টি বছর যদি আমরা দেশের জন্য কাজ করার সুযোগ আমরা পেতাম বাংলাদেশ অনেক আগেই বিশ্বে উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে পারতো। সময় অনেক চলে গেছে আর সময় আমরা নষ্ট করতে চাইনা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর কালক্ষেপণ যেন না হয় সেজন্য আমরা লক্ষ্য স্থির করেছি। ‘ভিশন-২০২১’। অর্থাৎ ২০২১ সালে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করবো। সে সময়ে বাংলাদেশ হবে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত, সমৃদ্ধ দেশ। আর ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হিসেবে আমরা মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হব, ইনশাল্লাহ আমরা সেটা অর্জন করতে পারবো, সে বিশ্বাস আমার
আছে। কারণ, আমরা এখন যেটা করে যাচ্ছি- আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য। শুধু বর্তমান নয়, আমাদের ভবিষ্যতকে দেখতে হবে। শুধু আজকে নয়, আমরা আগামী দিনকে দেখতে চাই।
ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের প্রতিপাদ্য ‘রেডি ফর টুমরো’র সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নট টুডে ফর টুমরো, আমরা বাংলাদেশকে তৈরি করতে চাই। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ কিভাবে তৈরী হবে সেটাই আমরা দেখতে চাই, সেভাবেই আমরা করতে চাই।
তিনি বলেন, হয়তো আমরা দেখেও যেতে পারবো না কিন্তু আমার দৃঢ় বিশ্বাস-একবার যখন উন্নয়নের চাকা গতিশীল হয়েছে এটা ভবিষতে আর কেউ থামিয়ে রাখতে পারবে না। এটা আমার বিশ্বাস। সেটাই আমরা আগামী প্রজন্মের হাতে তুলে দিয়ে যেতে চাই। সব সময় আমাদের তৈরি থাকতে হবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা নতুন প্রজন্মের কাছে আহ্বান জানান, ‘রেডি ফর টুমরো।’
মেলায় বক্তৃতা পর্ব শেষে বর্ণাঢ্য লেজার শো অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী মেলায় আগত হংকংয়ের হ্যানসেন রোবটিক্সের বানানো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্বলিত সোশ্যাল রোবট ‘সোফিয়া’র সঙ্গেও কথপোকথনে অংশ গ্রহণ করেন। পরে মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com