আজ সুনামগঞ্জ মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এইদিন পাকিস্তানি হায়েনাদের কবল থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধারা সুনামগঞ্জকে মুক্ত করেছিলেন। জয় বাংলা স্লোগানে মুখরিত হয়েছিল রাজপথ। পাকবাহিনীর পতনের পর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে মুক্তির উল্লাস। আজকের এই দিনে মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের প্রতি জানাই বিন¤্র শ্রদ্ধা।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা একদিনে আসেনি। এটা বাঙালি জাতির বহু ত্যাগ ও সংগ্রামের ফসল। শতাব্দী থেকে শতাব্দী বাংলাদেশের এই ভূখ-ে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষ তাদের স্ব-স্ব ধর্ম-কর্ম, সংস্কৃতি, আচার-অনুষ্ঠানসহ শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করে এসেছে। এই সহাবস্থানমূলক বসবাসের মাধ্যমে এদেশের মানুষ গড়ে তুলেছে সমৃদ্ধশালী ঐতিহ্য। তবে যুগে যুগে এই ভূখ-ের জনগণ বিদেশি শাসক শোষকদের হাতে শোষিত-নিপীড়িত এবং লুণ্ঠিত হয়েছে। ব্রিটিশদের সুদীর্ঘ দু’শো বছরেরও বেশি সময় শোষণ এখনো অনেকের স্মৃতিতে দুঃস্বপ্নের মতই জেগে আছে। একইভাবে জমিদারী প্রথার মাধ্যমেও নি®েপষিত হয়েছে এই ভূখ-ের জনগণ। সর্বশেষ, ভারত বিভক্তি এবং তারই ফলে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে পাকিস্তানের জন্ম হয়। ব্রিটিশ রচিত ঔপনিবেশিক আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা বহাল রেখে পাকিস্তানের উঠতি পুঁজিবাদী গোষ্ঠী, বিশেষ করে সামরিক এবং বেসামরিক আমলাগোষ্ঠী এ অঞ্চলের জনগণের উপর বিমাতাসূলভ আচরণ এবং শোষণ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখে। ফলে এ অঞ্চল থেকে যায় অনগ্রসর, অবহেলিত এবং নিগৃহীত। নিগৃহীত জনগণের অভাব-অনটন, হতাশা ও বিক্ষোভ ক্রমঃশই পুঞ্জীভূত হতে থাকে এবং ধীরে ধীরে ধূমায়িত হতে হতে ১৯৭১ সালে একটি প্রবল আগ্নেয়গিরির মতই উদগীরণ ঘটে। এই উদগীরণই পরবর্তিতে স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপ নেয়। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রাম হচ্ছে বাঙালি জাতির ধারাবাহিক মুক্তি আন্দোলনেরই একটি স্বতঃস্ফূর্ত এবং সক্রিয় রূপ। যুগ যুগ ধরে বাঙালি জাতি দেশি বিদেশি শাসক-শোষকের বিরুদ্ধে নিরবচ্ছিন্নভাবে লড়াই করে এসেছেÑকখনও করেছে সংঘবদ্ধভাবে। নিরবচ্ছিন্ন লড়াইয়ের মধ্যে লালিত মুক্তি পাগল বাঙালি জাতি সর্বযুগেই শোষকদের কবর রচনা করেছে এবং আন্দোলনের ধারার অব্যাহত রেখেছে। ১৯৭১ সালের গণঅভ্যুত্থান ছিল একটি যুগান্তকারী গৌরবময় অধ্যায়। এ অধ্যায় রচনা করতে অসীম ত্যাগ-তিতিক্ষার শিকার হতে হয়েছে। প্রাণ দিয়েছে লক্ষ লক্ষ দামাল সন্তান, তাজা রক্ত ঝরেছে অঢেল, ইজ্জত নষ্ট হয়েছে অগণিত মা-বোনের। স্বপ্ন ছিল স্বাধীন-মুক্ত হওয়া। দেশ শত্রুমুক্ত হলে এদেশে কায়েম হবে একটি শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থা। খাদ্যে-বস্ত্রে দেশ হবে স্বয়ংস¤পূর্ণ। কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য সুষ্ঠুভাবে বিকশিত হবে। গড়ে উঠবে স্বাধীন জাতির পুঁজি। মানুষের মান সম্মান এবং জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। দেশে থাকবে আইনের শাসন। মর্যাদার দিক হতে সকল জনগণ হবে সমান। বাঙালি জাতি বিশ্বে লাভ করবে একটি সুখী, স্বাধীন, সমৃদ্ধ সার্বভৌম জাতি হিসেবে Ñ এটাই ছিল প্রত্যাশা। কিন্তু স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র ক্ষমতায় থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আঘাত হানে। ইতিহাস বিকৃত করে। তবে বর্তমান সময়ে স্বাধীনতার পক্ষের সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশে নবজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আজ বিশ্বের বুকে উন্নয়নের রোল মডেল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে। নতুন প্রজন্মের কাছে মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে।