প্রতিবন্ধীদের জীবনমান উন্নয়নের বর্তমান সরকারের উদ্যোগ বরাবরই সাধুবাদ পেয়েছে। একসময় প্রতিবন্ধীদের বোঝা মনে করা হলেও প্রতিবন্ধীরা এখন সমাজের মূলধারায় চলে আসতে শুরু করেছে। এজন্য বর্তমান সরকারের অবদান অনস্বীকার্য। প্রতিবন্ধীদের সমাজের মূলধারায় স¤পৃক্ত করতে বিশেষায়িত স্কুলের পাশাপাশি সাধারণ স্কুলে লেখাপড়ার সুযোগ দানের ক্ষেত্রটি তৈরি হয়েছে বর্তমান সরকারের বিশেষ উদ্যোগের ফলেই। বর্তমানে প্রতিবন্ধীরা যেমন রাষ্ট্রীয়ভাবে মর্যাদা পাচ্ছে তেমনি সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসছে।
গতকাল ৩ ডিসেম্বর বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস পালিত হয়েছে। এ দিনটি বিশ্বের সর্বত্র প্রতিবন্ধী ও অপ্রতিবন্ধীদের মধ্যে সখ্য গড়ে তোলার দিন। প্রতিবন্ধী মানুষের প্রতি সমাজের সকল স্তরের পূর্ণ সহযোগিতা ও মমত্ববোধ আর সামাজিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক পুনর্বাসনের পটভূমিকায় প্রতিজ্ঞা ও প্রতিশ্রুতিতে দিনটি উৎসর্গীকৃত।
সরকারি নীতিতে প্রতিবন্ধীদের অর্থনৈতিক পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হল কর্মসংস্থান। যা তাঁদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের পক্ষে এক মাইল ফলক। কিন্তু একই পদে খুব বেশি শূন্যস্থান না থাকায় শূন্যপদে আসন সংরক্ষণ প্রতিবন্ধীদের জীবনে পরিহাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার নতুন পদ সৃষ্টি করে সেখানে প্রতিবন্ধীদের নিয়োগের সংখ্যা গোটা দেশে অতি নগণ্য। ফলে কর্মবিনিয়োগ কেন্দ্রগুলো থেকে ক’জন প্রতিবন্ধী কর্মপ্রার্থী চাকরি পেয়েছেন তা হাতে গুনে বলা যাবে। তাই, শূন্যপদে আসন সংরক্ষণ না করে সরকারি, বেসরকারি সমস্ত বিভাগীয় দপ্তরে মোট কর্মীর পদের থেকে যদি আসন সংরক্ষণ করা হয়, তাহলে সারাদেশের প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থানে এক উৎকৃষ্ট সহায়তা মূলক পরিবেশ সৃষ্টি হয়। যার ফলে বহু সংখ্যক প্রতিবন্ধী স্বনির্ভরতার সন্ধান পেয়ে তাঁদের সহ¯্র মাইল পথ চলার পদক্ষেপ এখান থেকেই শুরু করতে পারতেন।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, একজন প্রতিবন্ধী দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলেও সামান্য সহযোগিতার জন্য কেউ হাত বাড়াতে চায় না। এর কারণ, বহুভাবে প্রতারিত হওয়ার পর পরস্পরের প্রতি মানুষের অবিশ্বাস বেড়েই চলেছে। প্রতিবন্ধীদের ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করে ভিক্ষাবৃত্তিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকা-ের ফলে তাদের প্রতি মানুষের সহমর্মিতাও অনেক কমে গেছে। এসব সমস্যার সমাধানে রাষ্ট্রকে ভূমিকা রাখতে হবে। প্রতিবন্ধীদের নামে বরাদ্দ অর্থ ও অন্যান্য সহযোগিতা নিয়ে যেন দুর্নীতি না হয়, সেদিকেও কঠোর দৃষ্টি রাখতে হবে।