সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
গ্রাম পুলিশের চাকরিকে জাতীয় বেতন কাঠামো অনুসারে কেন চতুর্থ শ্রেণির স্কেলের সমমর্যাদা কেন দেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাই কোর্ট। আইন অনুসারে চাকরির সকল সুবিধাসহ আবেদনকারী গ্রাম পুলিশদের চাকরি সরকারের রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না- তাও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
এক রিট আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের হাই কোর্ট বেঞ্চ রোববার এই রুল জারি করে।
চার সপ্তাহের মধ্যে স্থানীয় সরকার, অর্থ, জন প্রশাসন, স্বরাষ্ট্র , আইন সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শকসহ ৩২ বিবাদীকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদে দফাদার ও মহলদার হিসেবে দায়িত্বরত গ্রাম পুলিশের সদস্যদের পক্ষ থেকে সরকারকে একটি উকিল নোটিস পাঠানোর পর তার জবাব না পেয়ে গত ২৭ নভেম্বর ধামরাইয়ের টুপিরবাড়ীর হাটকুশারা এলাকার বাসিন্দা গ্রাম পুলিশ লাল মিয়াসহ ৫৫ জন গ্রাম পুলিশ হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট আবেদন করেন।
রোববারের শুনানিতে রিটকারীদের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবির পল্লব; রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন।
হুমায়ুন কবির পল্লব পরে গণমাধ্যমকে বলেন, দফাদার ও মহলদার মিলে সারাদেশে গ্রাম পুলিশের সংখ্যা প্রায় ৪৬ হাজার। এদের মধ্যে দফাদারদের মাসিক বেতন ৩ হাজার ৪০০ টাকা। আর মহলদারদের বেতন ৩০০০ টাকা। গ্রাম পুলিশের চাকরি সরকারের রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় এই বেতনের অর্ধেক দেয় ইউনিয়ন পরিষদ, বাকিটা যায় সরকারের কোষাগার থেকে।
“বর্তমানে সরকারি কাঠামোতে যেখানে একজন শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ৫ হাজার ৩০০ টাকা, সেখানে গ্রাম পুলিশরা সেই সর্বনি¤œ মজুরিও পাচ্ছে না। এটা অমানবিক এবং অন্যায্য। এ কারণেই হাই কোর্টে এই রিট আবেদন করা হয়েছে এবং আদালত রুল জারি করেছে,” বলেন পল্লব।
তিনি বলেন, ব্রিটিশ আমল থেকে এ বাহিনী বিভিন্ন আইনের অধীনে কাজ করে আসছে। সর্বশেষ ২০০৯ সালে তাদের স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইনের আওতায় নেওয়া হয়। এ আইনের অধীনে ২০১৫ সালে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) গ্রাম পুলিশ বাহিনীর গঠন, প্রশিক্ষণ, শৃঙ্খলা ও চাকরির শর্তাবলী সম্পর্কিত বিধিমালা তৈরি করা হয়। কিন্তু ওই বিধিতে তাদের কোনো শ্রেণি নির্ধারণ করা হয়নি। এক দাবির প্রেক্ষিতে ২০০৮ সালের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় গ্রাম পুলিশদের চতুর্থ শ্রেণির স্কেল নির্ধারণে অর্থ বিভাগকে চিঠি দেয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
গত জুলাইয়ে জাতীয় সংসদে এক নোটিসের জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, দফাদার ও মহলদারদের বেতন সর্বশেষ ২০১৫ সালে বাড়ানো হয়। পাঁচ বছর পরপর তাদের বেতন পর্যালোচনা করা হয়। সে অনুযায়ী ২০২০ সালে আবার বেতন-ভাতা বাড়ানো হতে পারে।
২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি এক আদেশে দফাদারদের অবসরভাতা এককালীন অনুদান ৬০ হাজার টাকা এবং মহলদারদের ৫০ হাজার টাকা ঘোষণা করা হয়। এর অর্ধেক টাকাও সরকার এবং বাকিটা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দেওয়ার কথা।
বেতনের বাইরে গ্রাম পুলিশের সদস্যরা দুই ঈদে উৎসব ভাতা পান। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে গ্রাম পুলিশের জন্য সরকারের বরাদ্দ ছিল ১৩০ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরে বাড়িয়ে ১৩৫ কোটি টাকা করা হয়।
চাকরি রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্তি, সরকারি বেতন কাঠামোর চতুর্থ শ্রেণির সমমর্যাদা, মানসম্মত পোশাক, অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতো রেশন চালু ও ঝুঁকি ভাতা প্রদান, প্রত্যেক বিভাগে একটি করে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন এবং সন্তানের জন্য সরকারি চাকরিতে কোটা সংরক্ষণের দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরেই বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে গ্রাম পুলিশরা।