সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
প্রশিক্ষণ ও সহায়তা নিয়ে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের ‘স্বনির্ভর হয়ে ওঠার গল্প’ সরেজমিনে দেখে জাতিসংঘের কৃষি উন্নয়ন তহবিল আইএফএডির প্রতিনিধিরা বলেছেন, বিশ্বের অন্য দেশের জন্য ‘অনুকরণীয়’ হয়ে থাকবে বাংলাদেশ।
ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্টের (আইএফএডি) অর্থায়নে বাংলাদেশে চলমান বিভিন্ন প্রকল্প দেখতে গত ২৬ নভেম্বর পাঁচদিনের সফরে বাংলাদেশে আসে আইএফএডির নির্বাহী বোর্ডের ১১ সদস্য। এই সময়ে দারিদ্র্য দূরীকরণ, নারী কর্মসংস্থান ও ক্ষমতায়ন, প্রত্যন্ত অঞ্চলের খামারি ও কৃষকদের বাজারে প্রবেশের পাশাপাশি ব্যাংকসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক সেবার আওতায় আনা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষদের খাপ-খাওয়ানোর লক্ষ্যে পরিচালিত ছয়টি প্রকল্প ঘুরে দেখে প্রতিনিধি দলটি।
হাওরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় এসব প্রকল্প ঘুরে ওইসব এলাকার মানুষদের প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রমের প্রশংসা করেন আইএফএডির এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের পরিচালক হোনে কিম।
গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, “এভাবে ঘুরে দাঁড়ানো খুবই কঠিন, তারা শ্রম দিয়ে অল্প অল্প করে নিজেদের স্বনির্ভর করে তুলেছেন। আমরা মুগ্ধ, বাংলাদেশের মানুষ খুবই পরিশ্রমী। আইন মেনে চলে অল্প আর্থিক সহায়তা ও প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা এগিয়ে যাচ্ছে, যা আফ্রিকারসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জন্য অনুকরণীয়। বাংলাদেশকে আমরা উদাহরণ হিসেবে আমরা তুলে ধরব।”
কৃষিতে উন্নয়নের মাধ্যমে বিশ্বের মানুষের খাদ্য ঘাটতি কমানোর লক্ষ্য ১৯৭৭ সালে জাতিসংঘের অধীনে যাত্রা শুরু করা আইএফএডি প্রথম থেকেই বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থায়ন করে আসছে।
গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মানুষ, বেসরকারি সংস্থা ও সরকারের সঙ্গে মিলে কাজ করে আসা সংস্থাটির প্রতিনিধি দল এবারই প্রথম আনুষ্ঠানিক পরিদর্শনে এসেছে। প্রতি বছর ঋণ গ্রহীতা দেশগুলোর মধ্যে একটিকে ঠিক করে সেখানে যে ধরনের পরিদর্শনে যায় তারা।
পাঁচদিনের বাংলাদেশ সফরে তিনদিন সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন হাওর এলাকায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ও পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেওএসএফ) তত্ত্বাবধানে পরিচালিত বেশ কয়েকটি প্রকল্প ঘুরে দেখে প্রতিনিধি দলটি।
স্থানীয় সাংবাদিকদের একটি দলও প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সিলেট, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জের এসব প্রকল্প ঘুরে দেখে।
বিভিন্ন প্রকল্পে দেওয়া ঋণ সহায়তায় হাওরাঞ্চলের মানুষ ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেখে ভবিষ্যতেও বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন আইএফএডির প্রতিনিধি হোনে কিম।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ আমাদের পুরনো ঋণ গ্রহীতা দেশগুলোর একটি, ভবিষ্যতে এখানে সব ধরনের সহায়তা দিতে আইএফএডি আগ্রহী।”
আইএফএডি থেকে তৃতীয় সর্বোচ্চ ঋণ গ্রহণকারী দেশ বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নে কৃষিতে আরও জোর দেওয়া উচিত বলে মনে করছেন প্রতিনিধি দলে থাকা আইএফএডির স্ট্র্যাটেজি ও নলেজ বিভাগের সহযোগী সহ-সভাপতি পল উইন্টার।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের উচিত কৃষিতে আরও জোর দেওয়া, কারণ এই দেশের মানুষদের একটি বড় অংশ এখনও কৃষির উপর নির্ভরশীল। উন্নয়নে সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যাতে কেউ পিছিয়ে না পড়ে। টেকসই উন্নয়ন অর্জনের লক্ষ্যে এদেশে কৃষি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”