1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১০:০৭ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

প্রাইভেটের নামে বাজারি শিক্ষাবাণিজ্যের লাগাম টেনে ধরুন

  • আপডেট সময় শনিবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৭

দেশের সার্বিক শিক্ষাব্যবস্থা কোচিংয়ের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। অভিজাতদের জন্য রয়েছে বাণিজ্যনির্ভর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সেখানে কাড়ি কাড়ি টাকা ডোনেশন দিয়ে মর্যাদা দেখাতে সন্তানদের ভর্তি করেন তারা। সাধারণ পরিবারের শিক্ষার্থীদের নাগাল থেকে শিক্ষা অনেক আগেই হাতছাড়া হয়েছে। নিজের চেষ্টায় তারা কেবল গড়পড়তা শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছেন। এই ব্যবস্থার মধ্য থেকে মাঝে-মধ্যে যে কিছু মেধার ঝিলিক দেখা যায় তা তাদের নিজেরই প্রচেষ্টার ফসল। তবে বেশিরভাগ সাধারণ পরিবারের সন্তানদের উচ্চশিক্ষা কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছায়না। কারণ এখানে আছে প্রাতিষ্ঠানিক উদাসীনতা আর প্রাইভেট কোচিং-এর নামে শিক্ষাবাণিজ্যকরণের ব্যবস্থা। এই শিক্ষাবাণিজ্যের বিরুদ্ধে কার্যত কোন আন্দোলন গড়ে ওঠছেনা। ছাত্র সংগঠনগুলো শিক্ষা আন্দোলনে বদলে নিজেদেরকে ক্ষমতাকেন্দ্রিক আন্দোলনেই ব্যস্ত রেখেছে।
ঠিক এরকম ব্যবস্থার কারণে সুনামগঞ্জের এক মুক্তিযোদ্ধা কন্যার পরীক্ষা খারাপ হওয়ায় তার বাবা একাই অনশন করে জাতির টনক নাড়িয়ে দিয়েছেন। দেশ-বিদেশে তার এই বিরল অনশন নিয়ে কথা বলছেন সুধীজন শিক্ষাবিদ ও অ্যাক্টিভিস্টরা। তারা চলমান বাণিজ্যিক শিক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে এই নীরব আন্দোলন থেকে শিক্ষা নেওয়ার জন্য ছাত্র সংগঠন ও অভিভাবকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। শিক্ষকদের দায়িত্ব, কর্তব্য ও মহান পেশাটি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।
মুক্তিযোদ্ধা মালেক হুসেন পীরের বিরলতম অনশন নিয়ে গতকাল সুনামকণ্ঠে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। যেখানে তার অনশন, মেয়ের পরীক্ষা খারাপ হওয়ার বিস্তারিত উঠে এসেছে। সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও জেলা প্রশাসকের বক্তব্যও উঠে এসেছে। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আত্মপক্ষের সমর্থন নিয়ে ভিন্ন কথা শোনা গেছে। সেখানে শিক্ষক সংকটের কথাও উঠে এসেছে। তবে সেই বক্তব্যকে পুরোপুরি সমর্থন করার সুযোগ নেই। সরকারি কলেজে ক্লাস ফাঁকিসহ নানা অনিয়মের বিষয়ে গত দুই বছর ধরে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। তারা এ নিয়ে একাধিকবার স্মারকলিপিও দিয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
বাস্তবতা হলো দেশের প্রায় সকল সরকারি কলেজ ও বিদ্যালয়ে চরম শিক্ষক সংকট রয়েছে। যারা পাঠদানে জড়িত আছেন বিশেষ করে কঠিন বিষয়ের শিক্ষকরা দীর্ঘদিন আগ থেকেই পাঠদানের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। তারা কোচিংয়ের প্রতি ঝুকে পড়ায় নামকাওয়াস্তে পাঠদান করে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়তেই উদ্বুদ্ধ করেন বলে প্রায়ই খবর পাওয়া যায়। কিন্তু মালেক হুসেন পীরদের মতো দেশজয়ী নায়কদের সামর্থ্য না থাকায় সেই কঠিন বিষয়ে প্রাইভেট পড়ানোর ক্ষমতা তাদের নেই। তাই তারা সন্তানদের নিয়মিত পাঠদান করতে প্রতিষ্ঠানে যেতে সন্তানদের উদ্বুদ্ধ করেন। কিন্তু আশাহত তারা, শিক্ষক থাকার পরও ক্লাস না হওয়ায়।
একটা কথা আছে, কলেজে পাঠ্যবিষয় থাকবে কিন্তু শিক্ষক থাকবেন না। নিয়মিত মাসের পর মাস বেতন, পরীক্ষার ফি, কোচিংয়ের ফি কর্তৃপক্ষ নেবেন এটা কোনোভাবে কাম্য নয়। সে কথাই স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন আমাদের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তার অনশনের দাবিটি আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।
মালেক হুসেন পীরের এই প্রতিবাদের প্রতি আমরা পূর্ণ সমর্থন জানাই। কলেজে শিক্ষক থাকার পরও কেন নির্ধারিত বিষয়ে নিয়মিত পাঠদান হয়না তা খতিয়ে দেখার প্রশ্নটি মোটা দাগেই দেখতে হবে। তাছাড়া শিক্ষক সংকট থাকলে তারও সমাধান করতে হবে। শিক্ষাকে সাধারণ মানুষের কাছে ফিরিয়ে না আনলে বৈষম্য, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি বাড়বেই। প্রাইভেটের নামে বাজারি শিক্ষাবাণিজ্যের লাগাম টেনে ধরতে হবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মালেক হুসেন পীর তার মেয়ের পরীক্ষা খারাপের কারণে এই অনশন করলেও এটি সাধারণ পরিবারের শিক্ষার্থীদের উদ্বুব্ধ করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। তার এই বিরলতম প্রতিবাদের জন্য বিজয়ের এই মাসে অফুরান শ্রদ্ধা জানাই।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com