সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
সিলেট থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক সিলেটের ডাক’ পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করে জেলা প্রশাসকের দেওয়া নোটিশ তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। এর ফলে পত্রিকাটির প্রকাশনা আবার শুরু করতে কোনও বাধা থাকলো না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
বুধবার এক আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এএম আমিন উদ্দিন। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী আব্দুল হালিম কাফী। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।
পরে আব্দুল হালিম কাফী সাংবাদিকদের জানান, গত ১৫ জুন পত্রিকাটির মালিক-প্রকাশক রাগীব আলীর দ- হওয়ার কারণে এক নোটিশের মাধ্যমে পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করা হয়। পরে সেই নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হয়। রিটের শুনানি নিয়ে আদালত রুল জারি করেন।
তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি পত্রিকাটির মালিক-প্রকাশক রাগীব আলী হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন। এছাড়া, তার দ-ের বিরুদ্ধে আপিল বিচারাধীন আছে। বিষয়টি আদালতকে অবহিত করে আরেকটি আবেদন করা হয়। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত পত্রিকাটির ডিক্লারেশন বাতিলে জেলা প্রশাসকের দেওয়া নোটিশ তিন মাসের জন্য স্থগিতের আদেশ দেন।
উল্লেখ্য, সিলেটের ডাক পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি রাগীব আলী ফৌজদারি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হন। এ অবস্থায় চলতি বছরের ১৫ জুন সিলেট জেলা প্রশাসক ডিক্লারেশন বাতিল করে পত্রিকা প্রকাশ না করার কথা জানিয়ে চিঠি দেন। এর বৈধতা নিয়ে রাগীব আলী রিট করেন। যার শুনানি নিয়ে গত ১৭ জুলাই হাইকোর্ট রুল দেন। পরে ফৌজদারি ওই মামলায় তিনি গত ২৯ আগস্ট হাইকোর্ট থেকে জামিন পান। পরবর্তী সময়ে ২৪ অক্টোবর তা আপিল বিভাগে বহাল থাকে। এ অবস্থায় পত্রিকাটির প্রকাশনা বাতিলবিষয়ক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করা হয়। এতে সাড়া না পেয়ে রাগীব আলী একটি আবেদন করেন। যার ওপর গতকাল বুধবার শুনানি শেষে ওই আদেশ হয়।
৩৩ বছরের পুরোনো সিলেটের ডাক সিলেটের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক। জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন রাগীব আলীর ছেলে আবদুল হাই। দেবোত্তর সম্পত্তির তারাপুর চা-বাগান দখলের মামলার আসামি হওয়ার পরপর আবদুল হাইয়ের বদলে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয় অন্য একজনকে। পরে মামলার রায়ে সাজাপ্রাপ্ত হলেও রাগীব আলীর নাম পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি হিসেবে রেখে পত্রিকার প্রকাশনা অব্যাহত রাখা হয়। এ ব্যাপারে একাধিক নোটিশ জারি করার পর পত্রিকা প্রকাশনা বাতিল ঘোষণা করা হয়।
সিলেট নগরের পাঠানটুলায় দেবোত্তর সম্পত্তি তারাপুর চা-বাগান ভুয়া সেবায়েত সেজে ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক (চিঠি) জাল করে দখল করা হয়। ১৯৯৯ সালের ২৫ আগস্ট ভূমি মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তারাপুর চা-বাগান পুনরুদ্ধারের সিদ্ধান্ত হলে ২০০৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সিলেটের তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম আবদুল কাদের বাদী হয়ে দখলদার রাগীব আলী, তাঁর ছেলেসহ পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের রায়ে মামলা দুটি পুনরুজ্জীবিত করে বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশ দেওয়া হয়।