বিশেষ প্রতিনিধি ::
সুনামগঞ্জে আওয়ামী রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি হয়েছে। একপক্ষ ঈমানী ঐক্য ভেঙে চলে গেছেন অন্যপক্ষে। আরেক পক্ষ দীর্ঘদিনের বিরোধ মিটিয়ে হাত মিলিয়েছেন প্রতিপক্ষের সঙ্গে। গতকাল শনিবার এনিয়ে শহরে ছিল নানা আলোচনা-সমালোচনা।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল হুদা মুকুট ও পৌর মেয়র আয়ূব বখত জগলুল ছিলেন একপক্ষে। এই তিন নেতার মধ্যে সুসম্পর্ক সৃষ্টি জেলা পরিষদ নির্বাচনের সময়। দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মতিউর রহমান ও পৌর মেয়র আয়ূব বখত জগলুল অবস্থান নেন স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল হুদা মুকুটের পক্ষে। নির্বাচনের আগে ও পরে এই তিন নেতা নিজেদের সম্পর্ককে ‘ঈমানী ঐক্য’ বলে ঘোষণা দেন। সব সময় ঈমানী সম্পর্ক থাকবে বলেও তারা ঘোষণা দেন। কিন্তু সে ঐক্য একবছর হতে না হতেই ভেস্তে গেছে।
অন্যদিকে গত জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েও হেরে যান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমন। তার পরাজয়ের জন্য তিনি মতিউর রহমান ও আয়ূব বখত জগলুলের বিরোধিতাকে দায়ী করেছিলেন। পরবর্তীতে মতিউর রহমান, নুরুল হুদা মুকুট ও আয়ূব বখত জগলুলের সঙ্গে চরম বিরোধিতা শুরু হয় ব্যারিস্টার ইমনের। তীর্যক মন্তব্য ও মামলার ঘটনাও ঘটে।
কিন্তু সম্প্রতি সুনামগঞ্জ-৪ (সদর-বিশ্বম্ভরপুর) আসনের মনোনয়নকে কেন্দ্র করে বিরোধে জড়িয়ে যান মতিউর রহমান ও আয়ূব বখত জগলুল। একজন আরেকজনকে নাম উল্লেখ না করে আকারে-ইঙ্গিতে নানা মন্তব্য করতে থাকেন। এমন অবস্থায় গত কয়েকদিন ধরেই আওয়ামী নেতা-কর্মীদের মাঝে গুঞ্জন চলেÑ ঈমানী ঐক্যে ভাঙন ও নয়া মেরুকরণের।
দলীয় সূত্র জানায়, মতিউর রহমান ও নুরুল হুদা মুকুটের সঙ্গে মতদ্বন্দ্ব হওয়ায় ‘ঈমানী ঐক্য’র বলয় থেকে বেরিয়ে যান আয়ূব বখত জগলুল। অন্যদিকে ঈমানী ঐক্য ভেঙে দীর্ঘদিনের ‘প্রতিপক্ষ’ ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমনের সঙ্গে হাত মেলান মতিউর রহমান ও নুরুল হুদা মুকুট।
শনিবার জেলা প্রশাসন আয়োজিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ইউনেস্কোর “মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টার”-এর অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে “বিশ্বপ্রামাণ্য ঐতিহ্য”-এর স্বীকৃতি লাভ উপলক্ষে আয়োজিত কর্মসূচিতে নয়ামেরুকরণের বিষয়টি প্রকাশ পায়। চার নেতা এক মঞ্চে থাকলেও মতিউর রহমান, নুরুল হুদা মুকুট ও ব্যারিস্টার ইমনকে একসঙ্গে আনন্দ মিছিল, পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে দেখা যায়। তাদের সঙ্গে ছিলেন পৌর মেয়র আয়ূব বখত জগলুল। অপরদিকে, জগলুল পৌর আওয়ামী লীগের ব্যানারে শনিবার বিকেলে আনন্দ শোভাযাত্রা বের করেন।
এদিকে, শনিবার সকালে সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় অনেক বক্তা ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য রাখেন।
বাংলাদেশ আ.লীগ জাতীয় কমিটির সদস্য ও পৌর মেয়র আয়ূব বখত জগলুল বলেন, আজকে যারা আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, মুক্তিযোদ্ধারা যাঁরা এখনো বেঁচে আছেন আজকে আমাদের কষ্ট হয় যখন আমরা দেখি আমাদের প্রতিনিধিত্ব করতে চায় সেই রাজাকার-আল বদরের দোসররা। আমি মনেকরি একজন মুক্তিযোদ্ধা বেঁচে থাকতে রাজাকার আল-বদরের কোনো প্রতিনিধিকে আগামীতে যেন মনোনয়ন না দেওয়া হয়। তিনি আরো বলেন, আজকে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী এই যুদ্ধাপরাধীদের খুঁজে বের করে বিচার করছেন। অনেক যুদ্ধাপরাধী ঘাপটি মেরে আপনার পাশে, আমার পাশে লুকিয়ে আছে। এদেরকে ধরিয়ে দিতে হবে।
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল হুদা মুকুট বলেন, আপনাদের অনেকেরই জানা নাই ৭৫-এর পরে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয় তখন সুনামগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর নাম নেওয়ার মতো কোনো লোক ও মানুষ ছিল না। তখন আমাদের জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান সাহেব কাসেম হোটেলের একটা ছোট্ট রুমে থেকে আওয়ামী লীগকে, ছাত্রলীগকে, যুবলীগকে সংগঠিত করেছেন। আমরা মতিউর রহমানের কাছে কৃতজ্ঞ। তিনি আরো বলেন, আজকে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। সুনামগঞ্জ আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ। আওয়ামী লীগের হয়ে বিরোধিতা করলে তাদেরকে চিহ্নিত করা হবে, তাদের পিঠের চামড়া তুলে নেওয়া হবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান বলেন, ৭ মার্চের ভাষণ নিজের কানে শুনেছিলাম। মুক্তিযুদ্ধে আমি স্বয়ং অংশগ্রহণ করেছিলাম। তিনি আরো বলেন, ’৭১ পরে যারা পরীক্ষা দিয়েছে ও ২০০৮ সালে বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে জেলে রাখে তখন যারা ছিল সুনামগঞ্জের আওয়ামী লীগে আমি তখনো এই আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে ছিলাম।