1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০২৩, ০৫:৫৯ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

পিলখানা হত্যাকাণ্ড ছিল সার্বভৌমত্বের ওপর প্রত্যক্ষ হুমকি : হাইকোর্ট

  • আপডেট সময় রবিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৭

সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
পিলখানা হত্যা মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, এ হত্যাকাণ্ড ছিল স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের ওপর প্রত্যক্ষ হুমকি। তৎকালীন নবগঠিত সরকারকে অস্থিতিশীল করার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা এবং বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করাই ছিল এ ষড়যন্ত্রের উদ্দেশ্য।
রোববার সকাল ১০টা ৫৬ মিনিটে এ মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিলের রায় পড়া শুরু করেন বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বৃহত্তর হাইকোর্ট বেঞ্চ। বেঞ্চের অন্য দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার। বিকেলে রায় পড়ে শোনানো মুলতবি করেন আদালত। আজ সোমবার সকাল সাড়ে দশটা থেকে আবারও রায়ের পর্যবেক্ষণ উপস্থাপন শুরু হবে। পর্যবেক্ষণ উপস্থাপন শেষে রায়ের মূল অংশ পড়বেন বিচারপতিরা।
রায়ের পর্যবেক্ষণ পড়ে শোনানোর শুরুতেই আদালত বলেন, মামলার নথিতে সংরক্ষিত কাগজপত্র, বিজ্ঞ কৌঁসুলিদের যুক্তিতর্ক, প্রচলিত ও বিধিবদ্ধ আইনের ব্যাখ্যা, প্রজাতন্ত্রের সার্বভৌমত্ব ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় সাংবিধানিকভাবে আইনের শাসন সমুন্নত রাখা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মামলাটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনায় এটি একটি ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী রায়। যার প্রেক্ষিত হবে প্রজাতন্ত্রের ভবিষ্যত স্থিতিশীল সমাজ বিনির্মাণে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সর্বস্তরে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সর্বজনীন টেকসই ও নির্মোহ দৃষ্টান্ত।
এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ রাইফেলস এর সদর দফতর ঢাকা পিলখানায় সংঘটিত ইতিহাসের জঘন্যতম ও বর্বরোচিত ঘটনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৫৭ জন মেধাবী ও প্রতিভাবান অফিসারসহ ৭৪ জন নিরস্ত্র মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
বিদ্রোহীদের নৃশংসতার কথা তুলে ধরে আদালত বলেন, নারী, শিশুসহ গৃহকর্মীকেও পাশবিকতা থেকে রেহাই দেওয়া হয়নি। অভিযুক্তরা বিদ্রোহের জন্য অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, নৃশংস হত্যাকাণ্ড, অমানবিক নির্যাতন, বাড়ি ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ, অস্ত্রাগার ও ম্যাগাজিন ভেঙে অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুণ্ঠন, গ্রেনেড বিস্ফোরণ, সশস্ত্র মহড়ার মাধ্যমে সন্ত্রাস ও জনজীবনে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি, লাশ গুম, রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও স্থিতিশীলতা বিনষ্টের চক্রান্তসহ নানাবিধ জঘন্য অপরাধকর্ম সংঘটিত করে।’
আদালত বলেন, অত্র মামলার ভয়াবহতা, নৃশংসতা, পৈশাচিকতা, বিদ্রোহীদের বিশৃঙ্খলা, রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা বিনষ্টের চক্রান্ত ও সামাজিক নিরাপত্তাসহ সামগ্রিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এটি রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফৌজদারি মামলা হিসেবে দেশের প্রচলিত আইনি কাঠামোয় ফরিয়াদি, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার, দণ্ড ও সাজাপ্রাপ্ত আপিলকারীগণের আইনানুগ অধিকার সংরক্ষণসহ ব্যতিক্রমধর্মী মামলাটির বিশালত্ব, গুরুত্ব ও গাম্ভীর্যতা বিবেচনায় নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা ও পর্যবেক্ষণ অপরিহার্য।
আদালত বলেন, দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়াসহ স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের ওপর প্রত্যক্ষ হুমকির বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে এই নারকীয় নৃশংস ও বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় সৃষ্টির মাধমে নিজেদের ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করেছে, এই কলঙ্কের চিহ্ন তাদের বহুকাল বহন করতে হবে।
আদালত তার পর্যবেক্ষণে আরও বলেন, অন্যদিকে, আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা, দেশের সার্বভৌমত্ব, আর্থ-সামাজিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় প্রশিক্ষিত, দক্ষ ও সুশৃঙ্খল প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী ও নৌবাহিনী দেশের সংবিধান ও গণতন্ত্রের প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও অবিচল আস্থা রেখে চরম ধৈর্যের সঙ্গে উদ্ভূত ভয়ংকর পরিস্থিতি মোকাবিলার মাধ্যমে পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়ে তারা দেশবাসীর ভালোবাসা ও সুনাম অর্জন করেছে।
এরপর আদালত তার পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশে রাইফেলসের ২১৮ বছরের বর্ণাঢ্য ইতিহাস সংক্ষেপে উপস্থাপন করেন।
আদালত বলেন, ২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহের মূল লক্ষ্য ছিল সেনা কর্মকর্তাদের জিম্মি করে যেকোনও মূল্যে দাবি আদায় করা; বাহিনীর চেইন অব কমান্ড ধ্বংস করে এই সুশৃঙ্খল বাহিনীকে অকার্যকর করা; প্রয়োজনে সেনা কর্মকর্তাদের নৃশংসভাবে নির্যাতন ও হত্যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে সেনা কর্মকর্তাদের বিডিআরে প্রেষণে কাজ করতে নিরুৎসাহিত করা; বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বিডিআরকে সাংঘর্ষিক অবস্থানে দাঁড় করিয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নবনির্বাচিত একটি গণতান্ত্রিক সরকারকে অস্থিতিশীলতার মধ্যে নিপতিত করা, দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করা; বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ক্ষতিগ্রস্ত করা।
পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহ মাত্র ৪৮ দিনের নবনির্বাচিত সরকারকে মারাত্মক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করে; যা ছিল গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের জন্য প্রচণ্ড হুমকিস্বরূপ। বিডিআর সদস্যরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে বিদ্রোহের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়, যার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটে ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯.৩০ মিনিটে বিডিআর সদর দফতর পিলখানার দরবার হলে। উক্ত বিদ্রোহে হত্যাকাণ্ড ছাড়াও নানাবিধ জঘন্যতম অপরাধ সংঘটিত হওয়ার মধ্য দিয়ে মূলত দেশের এই সুশৃঙ্খল আধাসামিরক বাহিনীর অস্তিত্ব বিপর্যয়ে নির্বাসিত হয়।
এরপর আদালত পিলখানায় অবস্থিত দরবার হলের ওই দিনকার পরিস্থিতি বর্ণনা করেন।
আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য কিছু লাশ ম্যানহোলের ভেতর, কিছু লাশ স্যুয়ারেজ লাইনের ভেতর ও অধিকাংশ লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে বিডিআরের হাসপাতালের মরচুয়ারিতে ও এমটি গ্যারেজের পাশে গণকবর দেওয়া হয়। সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করেই বিদ্রোহীরা ক্ষান্ত হয়নি। বরং লাশের চেহারা পাল্টে দেওয়ার জন্য মৃতদেহে পেট্রল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। বেয়নেট দ্বারা আঘাত করে লাশের চেহারা বিকৃত করে। ওইসব মৃতদেহ ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়। আসামিরা সেনা অফিসার ও তাদের স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের মৃতদেহের প্রতি কোনও প্রকার শ্রদ্ধা না দেখিয়ে সামাজিক ও ধর্মীয় অনুশাসন প্রতিপালন না করে পুরুষ ও মহিলাদের লাশ অর্ধউলঙ্গ অবস্থায় একত্রে মাটি চাপা দেয়। ভবিষ্যতের কথা ভেবে ঠাণ্ডা মাথায় বিডিআর বিদ্রোহীরা গণকবরের ওপর ইট, কাঠ, গাছপালা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে ক্যামোফ্লেজ সৃষ্টি করে, যাতে সেখানে গণকবর আছে তা বোঝা না যায়।
আদালত এ সময় এই ঘটনায় নিহত ৭৪ জনের নাম পড়ে শোনান। পরে বিচারিক আদালতের রায় তুলে ধরেন হাইকোর্ট।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com