সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
দেশের স্বর্ণখাত জবাবদিহিতাহীন এবং কালোবাজার নির্ভর বলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে। রোববার ‘বাংলাদেশে স্বর্ণখাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা : একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে পটভূমি বিশ্লেষণ’ শীর্ষক গবেষণায় এ কথা বলা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করা গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের বাজারে বার্ষিক ১৮ থেকে ৩৬ মেট্রিক টন স্বর্ণের চাহিদা থাকার পরও এই চাহিদার সিংহভাগ চোরাচালানের মাধ্যমে পূরণ হচ্ছে। উচ্চ শুল্ক, অনুমোদনের ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াগত জটিলতা এবং ফ্রেইট ও ইন্স্যুরেন্সের অপ্রাপ্যতা ইত্যাদি কারণে স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা বৈধভাবে স্বর্ণ আমদানি না করে চোরাচালান করা স্বর্ণের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। বিগত চার অর্থবছরে বিমানবন্দরে আটক স্বর্ণের পরিমাণ ১ হাজার ৬৭৫ কেজি এবং বৈধ পথে আমদানি না হওয়ায় স্বর্ণখাতে সরকারের ন্যূনমত রাজস্ব ক্ষতি বছরে ৪৮৭ থেকে ৯৭৪ কোটি টাকা।
টিআইবি আরও জানায়, চোরাচালান চক্রের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একাংশ, সরকারি ও বেসরকারি বিমান সংস্থা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের একাংশ, সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাংশসহ বিমানে খাদ্য ও পানীয় সরবরাহকারী ও পরিচ্ছন্ন-কর্মীদের একাংশ জড়িত।
এসময় স্বর্ণখাত সংশ্লিষ্ট সব পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে একটি পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়ন করার সুপারিশও করেছে টিআইবি। সুপারিশে বলা হয়, কর প্রদান সাপেক্ষে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সব স্বর্ণ ও স্বর্ণালংকার ব্যবসায়ীকে তাদের প্রতিষ্ঠানের মজুদ সব স্বর্ণ ও স্বর্ণালঙ্কার নিবন্ধনের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে একটি বাস্তবসম্মত লাইসেন্স অনুমোদন পদ্ধতি ও ফি পুনর্নির্ধারণ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, চোরাচালান নির্ভর স্বর্ণব্যবসায় সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাংশ, স্থলবন্দর ও বিমানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশ এবং এদের সঙ্গে ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারীদের যোগসাজশের মাধ্যমে অবৈধতা এবং অনিয়ম অব্যাহত রয়েছে। এই চক্রটির একাংশই দেশে একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা বা বিস্তৃত আইন প্রণয়ন হোক সেক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অনেক সময় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।
স্বর্ণখাতকে একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে উল্লেখ করে ড. জামান আরও বলেন, স্বর্ণখাতের মতো একটি জনপ্রিয় ও জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট খাতে অনৈতিকতা এভাবে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করবে, চোরাকারবার নির্ভর ব্যবসা চিরজীবন চলতে থাকবে, এটা আমরা আশা করি না।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন টিআইবি’র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের।
গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন টিআইবি’র গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান। সংশ্লিষ্ট গবেষক দলের অপর দুই সদস্য টিআইবি’র গবেষণা ও পলিসি বিভাগের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. রেযাউল করিম এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রাম ম্যানেজার অমিত সরকারও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।