মেয়েশিশু ও নারীদের জীবন মান উন্নয়নে বাংলাদেশ দারুণ অগ্রগতি সাধন করেছে। মা ও শিশু মৃত্যুহার অনেকাংশে কমেছে এবং নারীরা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মেরুদণ্ড তৈরি করছে। দেশের বৃহত্তম রপ্তানি ক্ষেত্র তৈরি পোশাক খাত চল্লিশ লক্ষ বাংলাদেশীর কর্মসংস্থান করেছে যাদের বেশির ভাগই নারী।
প্রতিনিয়ত পত্রিকা খুললে আমরা যেমন নারীর উন্নয়ন তথা সাফল্যের খবর দেখতে পাই, তেমনি পাই নির্যাতন, ধর্ষণসহ নানাভাবে লাঞ্ছিত ও হত্যাকাণ্ডের খবর। যা দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য প্রতিবন্ধক। আশ্চর্য হতে হয়, বিভিন্ন সময়ে স্কুল-কলেজের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে অনেক নারী। আমরা মনে করিÑ নারী-পুরুষ উভয়েই পরিবার ও সমাজের জন্য অনিবার্য। একটি পরিবার টিকিয়ে রাখার জন্য যেমন নারী-পুরুষের সম্মিলিত উদ্যোগ, পরিকল্পনা, ত্যাগ ও সংযমের প্রয়োজন, একইভাবে সামাজিক স্থিতিশীলতা ও ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থে নতুন সমাজ বিনির্মাণের জন্য উভয়েরই ভূমিকা ও অবদান সমভাবে প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের এ চাওয়ার সফল বাস্তবায়ন পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে কোথাও চোখে পড়ছে না।
১৯৯৩ সালের ২৫ নভেম্বর জাতিসংঘ ‘নারী নির্যাতন দূরীকরণ ঘোষণা’ প্রকাশ করে। ১৯৯৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর জাতিসংঘ ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রের খসড়া অনুমোদন করে প্রতিবছর ২৫ নভেম্বরকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন দূরীকরণ দিবস’ হিসেবে গ্রহণ করেছে। দিনটিকে কেন্দ্র করে নারীর প্রতি সহিংসতা অবসানের বিষয়টি বিশ্বের সব দেশে মনোযোগ ও গুরুত্ব পাচ্ছে। নারীর প্রতি সহিংসতা দূর করতে দিবসটির মূল চেতনা হচ্ছে নারীর প্রতি যাতে সকল প্রকার সহিংসতা দূর হয়ে নারী ফিরে পায় একটি সহিংসতামুক্ত নির্মল জীবন।
তাই নারীর প্রতি সহিংসতা রোধের জন্য আইন ছাড়াও আমাদের প্রয়োজন ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনই নারীর প্রতি সহিংসতার প্রতিরোধ করতে পারবে যার মাধ্যমে নারী পাবে সহিংসতার প্রতিকার, গড়ে উঠবে নারী সহিংসতা মুক্ত একটি সুন্দর সমাজ। তাই নারীদের প্রতি এই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে পরিবার ও সমাজ তথা সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। নারীদেরও সোচ্চার হতে হবে নিজ অধিকার আদায়ে।