1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০১:০১ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

দেওয়া হোক জগৎজ্যোতির প্রতিশ্রুত বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব : সাঈদ চৌধুরী টিপু

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৭

‘কেউ কথা রাখেনি’ তেত্রিশ বছর কেটে যাওয়ার পর এমন আক্ষেপ করেছিলেন কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। জগৎজ্যোতি দাসের জন্য সে আক্ষেপ পঁয়তাল্লিশ বছরের। ৪৫ বছরের প্রতীক্ষার পরও জগৎজ্যোতি দাসকে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ই বেতারবার্তায় জগৎজ্যোতিকে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব প্রদানের ঘোষণা দেওয়া হলেও ৪৫ বছরেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
দেশের জন্য প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন অসীম সাহসী বীর জগৎজ্যোতি দাস। প্রাণ দিয়ে প্রাণ এনে দিয়েছিলেন তিনি মুক্তির সংগ্রামে। ইথারে তখন ভেসে এসেছিল- স্বাধীন বাংলাদেশে কেউ যদি সর্বোচ্চ মরণোত্তর খেতাব পান, তবে তাঁর প্রথম দাবিদার জগৎজ্যোতি দাস। অসীম সাহসিকতা আর অনন্য বীরত্বের জন্য অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) পক্ষ থেকেই এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
জগৎজ্যোতি তখন সব চাওয়া-পাওয়া, সব হিসাব-নিকাশের ঊর্ধ্বে চলে গিয়েছিলেন। তিনি কোনো প্রতিদানের আশায় প্রাণ দেননি। ইথারের ঘোষণায় তাঁর কিছু যাওয়ার-আসার ছিল না। তবে হয়তো তাঁর অবিনশ্বর প্রাণ শান্তি পেয়েছিল এই ভেবে যে, মা তাঁকে চরণ থেকে বুকে তুলে নিয়েছেন।
জগৎজ্যোতি মানে পৃথিবীর আলো। তাই বোধ হয় সবার জন্য আলো জ্বেলে দেওয়ার দায় নিজের কাঁধেই তুলে নিয়েছিলেন জগৎজ্যোতি দাস। একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশমাতৃকার জন্য আগুন হয়ে জ্বলেছিলেন হবিগঞ্জের জলসুখা গ্রামের এ খ্যাপা তরুণ। তাঁর অসীম তেজের সামনে বারবার পরাজিত হচ্ছিল পাকিস্তানি বাহিনী। জগৎজ্যোতির নেতৃত্বাধীন দাস পার্টি মানেই পাক হানাদারদের রাতের ঘুম হারাম। তাঁর মুখোমুখি হওয়া মানে পাক বাহিনীর আরও একটি ব্যর্থতার গল্প। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত জগৎজ্যোতি ছিলেন উত্তর-পূর্ব রণাঙ্গনে ভরসার কেন্দ্রস্থল।
১৯৭১ সালের ১৬ নভেম্বর হবিগঞ্জের বাহুবলের পথে বদলপুরে পাকিস্তানি বাহিনীর দোসরদের ফাঁদে পড়ে সম্মুখযুদ্ধে প্রাণ হারান একাত্তরের এ বীর সেনানী। রাজাকাররা তাঁর নিথর দেহটি ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুঁচিয়ে বিবস্ত্র করে ভাসিয়ে দেয় ভেড়ামোহনা নদীর জলে। জগৎজ্যোতির আত্মত্যাগের সংবাদটি সে সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, অল ইন্ডিয়া রেডিওসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশ হয়। তাঁর অসীম সাহসিকতার প্রতি সম্মান জানিয়ে অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার তাঁকে মরণোত্তর সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় খেতাব প্রদানের ঘোষণা দেয়। এ ঘোষণা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ও অল ইন্ডিয়া রেডিওতেও প্রচার হয়। কিন্তু প্রতিশ্রুত সে খেতাব আজও মেলেনি জগৎজ্যোতির। অবশ্য পরবর্তীতে সান্ত¦না হিসেবে ১৯৭২ সালে বীরবিক্রম খেতাব দেওয়া হয় জগৎজ্যোতিকে। ঘোষণা দিয়েও কেন জগৎজ্যোতিকে মরণোত্তর সর্বোচ্চ খেতাব ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ সম্মানে ভূষিত করা হলো না সে প্রশ্ন আজও অমীমাংসিত। এ নিয়ে ক্ষোভ আছে অনেক মুক্তিযোদ্ধারও। বীরপ্রতীক খেতাব বর্জনকারী মুক্তিযুদ্ধে ৪নং সেক্টরের সাব কমান্ডার সদ্যপ্রয়াত মাহবুবুর রব সাদী এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমি নিজে অন্তত তিনজনকে জানি যাদের বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব পাওয়া উচিত ছিল। …এদের একজন জগৎজ্যোতি। …মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহসী বীরত্ব প্রদর্শন করেও যারা যথাযথ মূল্যায়ন ও খেতাব পাননি তাদের আত্মার প্রতি সম্মান দেখাতেই আমি খেতাব ও সম্মান বর্জন করেছি।
জগৎজ্যোতি আমাদের জন্য আলো জ্বেলে চলে গেছেন। কোনো খেতাবেরই তার আর প্রয়োজন নেই। কোনো খেতাবের লোভে তিনি যুদ্ধও করেননি। দেশ-মাটি-মায়ের সম্মান বাঁচাতেই তিনি অস্ত্র হাতে তুলেছিলেন। মায়ের জন্য সোনালি ভোর আনতে গিয়ে নিজেই লীন হয়েছেন। কিন্তু আমরা তার সম্মান রাখতে পারিনি। জগৎজ্যোতিকে প্রতিশ্রুত সম্মান কেন দেওয়া হলো না? ৪৫ বছরেও এ প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। [সংকলিত]
লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com