ত্যাগ, শান্তি আর আনন্দের অনাবিল বার্তা নিয়ে প্রতিবার আসে পবিত্র ঈদুল আজহা। তবে এবার ভিন্ন প্রেক্ষাপটে হাওরপাড়ের মানুষ ঈদ উদ্যাপন করবেন। বলা যায়, নিরানন্দের ঈদ। দুর্নীতিবাজ পাউবো কর্মকর্তা, ঠিকাদার এবং পিআইসি’র কারণে হাওরের বাঁধ ভেঙে ফসলহানির পর হাওরজুড়ের যে হাহাকার শুরু হয় তা এখনো থামেনি। পরবর্তীতে পাহাড়ি ঢল, অতিবর্ষণ, ঘূর্ণিঝড়, নিম্নাঞ্চলে প্লাবন ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ জনজীবনকে করেছে বিপর্যস্ত। এমন পরিস্থিতিতে আগামী ২ সেপ্টেম্বর শনিবার পবিত্র ঈদুল আজহা উদ্যাপিত হবে। আশা করি দুর্যোগ-দুর্ভোগের মধ্যে থেকেও উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে এবং ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশে ত্যাগের মহিমায় এ উৎসব পালিত হবে।
আমরা জানি, প্রতি বছর হিজরি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী জিলহজ মাসের ১০ তারিখ পবিত্র ঈদুল আজহা হাজির হয় পশুত্ব প্রবৃত্তির কুরবানি করে মনুষ্যত্বকে জাগ্রত করার মহান বার্তা নিয়ে। ত্যাগের আনন্দে উদ্ভাসিত পবিত্র ঈদুল আজহা মানুষকে মানবিক চেতনায় পুষ্ট হয়ে জগতের সকল সৃষ্টির কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করার শিক্ষা দেয়। উৎসাহ জোগায় একটি সাম্যপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সামিল হতে।
কোরবানির মূল উদ্দেশ্য যেহেতু নিজেদের পশুত্বপ্রবৃত্তির কোরবানি করে মনুষ্যত্বকে জাগ্রত করা সেহেতু এই উদ্দেশ্যকে পাশ কাটিয়ে নিজেদের গৌরব-মর্যাদার প্রতীক হিসেবে কোরবানিকে বিবেচনা করা উচিত নয়। বর্তমান সময়ে অনেকেই কোরবানির মাধ্যমে নিজের আর্থিক সামর্থ্য জাহির করার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। প্রকৃতপক্ষে এই প্রতিযোগিতাপ্রবণ কোরবানির কোনো মূল্য নেই সৃষ্টিকর্তার কাছে। মহান আল্লাহ কেবল ওই কোরবানিকেই কবুল করে থাকেন, যেটা কেবলই তাঁরই প্রেম-ভালবাসায় হয়ে থাকে।
মানবহৃদয়ের পশুত্ব মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথে প্রধান বাধা। তাই পশু কোরবানির পাশাপাশি নিজেদের পশুত্বকে কোরবানি দিতে হয় তাকওয়ার শাণিত ইচ্ছার মাধ্যমে। আর তখনই প্রতীকী পশুর কোরবানি সার্থক হবে।
পবিত্র ঈদুল আজহা হাওরবাসীর জীবনে বয়ে আনুক শান্তি ও কল্যাণের বার্তা। দুর্নীতিবাজ পাউবো কর্মকর্তা, ঠিকাদার ও পিআইসি’র অন্তরে মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত হোক; হাওরপাড়ের মানুষ আবার ঘুরে দাঁড়াক; হাওর অঞ্চলের সমস্যার স্থায়ী সমাধানে দীর্ঘমেয়াদী টেকসই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক Ñ এই প্রত্যাশা।