বিশেষ প্রতিনিধি ::
তাহিরপুর উপজেলার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের নবম শ্রেণির জনৈক ছাত্রী গত ২৩ জানুয়ারি বাল্যবিয়েকে লাল কার্ড দেখিয়েছিল। তাহিরপুরের এই ছাত্রীসহ ১৫ হাজারেরও অধিক শিক্ষার্থী শপথ করেছিল ‘বাল্যবিয়ে করবো না, বাল্যবিয়ে দেব না’। ঠিক একইভাবে তার বড় ভাই তাহিরপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. বুরহান উদ্দিন গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর ‘তাহিরপুর উপজেলা বাল্যবিয়ে মুক্ত ঘোষণায়’ অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিজেও শপথ করেছিলেন বাল্যবিয়ে বিরোধী। এর আগে ইউনিয়ন পর্যায়ে সকল জনগণের সামনে তার ইউনিয়নকে বাল্যবিয়ে মুক্ত ঘোষণার অঙ্গীকার করেছিলেন তিনি। কিন্তু সেই শপথ ভেঙে নিজের অপ্রাপ্ত বয়স্ক স্কুল পড়ুয়া ছোট বোনের বিয়ের আয়োজন করে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছেন তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. বুরহান উদ্দিন।
জানা গেছে, ইউপি চেয়ারম্যান মো. বুরহান উদ্দিন শপথ ভঙ্গ করে তাহিরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের নবম শ্রেণি পড়ুয়া বোনের বৃহস্পতিবার ধুমধাম করে বিয়ের আয়োজন করেন। বোনের অমতে দিরাই উপজেলার শ্যামারচরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সোহেল মিয়াকে বর হিসেবে নির্বাচিত করেন। বিয়ের আগে তিনি বোনের বিদ্যালয় যাওয়া বন্ধ করে দেন। বুধবার পারিবারিকভাবে ঘটা করে বোনের গায়ে হলুদ সম্পন্ন করেন। বৃহস্পতিবার বিয়ের দিন উপলক্ষে তোরণ নির্মাণ করে পুরো বাড়িটি বিয়ের জন্য আলাদাভাবে দৃষ্টিনন্দনভাবে সাজান। জনগণের সামনে প্রকাশ্য বাল্যবিয়ের শপথকারী স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত এই জনপ্রতিনিধি শপথ ভেঙ্গে নিজের বোনের বিয়ের আয়োজন করায় ক্ষুব্ধ ও হতাশ হন এলাকাবাসী। চেয়ারম্যান নিজেই নিজের পরিবারের লোককে বাল্যবিয়ে দিচ্ছেন এই খবর এলাকার সচেতন মহলে ছড়িয়ে পড়লে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাৎক্ষণিক পুলিশ পাঠিয়ে বিয়ে ভেঙ্গে দেওয়ার নির্দেশনা দেন। প্রশাসনের বাধার মুখে ইউপি চেয়ারম্যান মো. বুরহান উদ্দিন সংশ্লিষ্টদের জানান, বরযাত্রীদের খাইয়ে তিনি তাদের বিদায় করে দিবেন। বিয়ে সম্পন্ন করবেন না। তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বরযাত্রীদের পাঠিয়ে দিলেও আইনি জটিলতা এড়াতে তিনি আপাতত কাবিনের বদলে মোল্লা দিয়ে বিয়ে পড়িয়ে কয়েকদিন পরে বোনকে বরের কাছে গোপনে পাঠিয়ে দিবেন। অবস্থা সম্পন্ন এই পাত্রকে কিছুতেই হাতছাড়া করতে চাচ্ছেন না তিনি।
তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. বুরহান উদ্দিনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
তাহিরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক ইয়াহিয়া তালুকদার বলেন, আমার বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণি পড়–য়া এক ছাত্রী মাস দুয়েক ধরে বিদ্যালয়ে আসছেনা। আজ (বৃহস্পতিবার) তাকে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে আমরা জানতে পারি। ওই ছাত্রী গত ২৩ জানুয়ারি সুনামগঞ্জ জেলাকে বাল্যবিয়ে মুক্ত ঘোষণার দিন লালকার্ড দেখানোয় স্থানীয়ভাবে অংশ নিয়েছিল বলে তিনি জানান।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বাল্যবিয়েবিরোধী কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নিজেই শপথভঙ্গ করবেন এটা আমরা মেনে নিতে পারিনি। আমরা পুলিশ পাঠিয়ে তাৎক্ষণিক বিয়ে বন্ধ করেছি। তবে তারা যদি বাধা না মেনে গোপনে বিয়ে সম্পন্ন করে তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।