মোসাইদ রাহাত ::
অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় মৎস্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভেসে গেছে পুকুর, দিঘি ও মৎস্য খামার। জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এবারের প্লাবনে মৎস্য সম্পদে মোট ক্ষতির পরিমাণ ৮৩ লক্ষ টাকা।
বিস্তীর্ণ নিম্নাচল বানের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গ্রামাঞ্চলের জমির ফসল কৃষকরা যেমন হারিয়েছেন ধান ঠিক তেমনই মৎস্য খামারিরা হারিয়েছেন মাছ। ঢলের পানিতে মৎস্য খামারের পুকুরগুলো ভেসে যাওয়াও খামারিরা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
সদর উপজেলার জানিগাঁও এলাকার মনির হোসেন বলেন, ৫টি পুকুরে এ বছর চিতল, পাবদা, শি, কই তেলাপিয়া চাষ করেছিলাম। বিনিয়োগ করেছিলাম প্রায় ৪ লক্ষ টাকা। আর দুই মাস পরেই মাছ বিক্রি করতে পারতাম ১২ লাখ টাকার কিন্তু হঠাৎ বন্যায় আমার সব নিয়ে গেছে। আমি পথে বসে গেছি। সন্তান লেখাপড়ার খরচ অনেক এনিয়েও চিন্তিত আছি।
একই এলাকার আরেক মৎস্যচাষী নুরুল হক বলেন, ব্যাংক ঋণ নিয়ে এক একর জায়গার উপর মাছের খামার করেছিলাম। কিন্তু অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে আমার সকল মাছ ভেসে গেছে। আমি এখন অসহায় হয়ে পড়েছি।
মৎস্য খামারি মাসুক মিয়া বলেন, বৃষ্টিতে আমার সকল মাছ পানিতে নিয়ে গেছে। শেষ সম্বল ছিল আমার। ছেলে মেয়ে বউ নিয়ে এখন পথে বসার অবস্থা।
খামারি সাইমুল ইসলাম শামীন বলেন, খামারিদের বাঁচাতে হলে সরকারি সহায়তায় প্রয়োজন, তাদেরকে জরুরি ভিত্তিতে ব্যাংক ঋণ হলে তারা ঘুরে দাড়াতে পারবে।
সংশ্লিষ্ট তথ্য মতে, গত ১১ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে জেলার প্রায় ১৭৭টি পুকুর, দিঘি ও খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে সুনামগঞ্জ সদরে ৩১টি, দোয়ারবাজারে ৩০টি, তাহিরপুরে ১৭টি, বিশ্বম্ভরপুরে ১৫টি, ছাতকে ৩৪টি, জগন্নাথপুরে ৯টি, দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ১৯টি ও জামালগঞ্জে ২২টি পুকুর, দিঘি ও খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে জেলায় ৩৬.৮৪৩ মেট্রিক টন মাছ ও ৯.৪৫ লক্ষ পোনা পানিতে ভেসে যায়। টাকার পরিমানে মাছ ভেসে গেছে ৫৭লাখ ও পোনার ভেসে গেছে ১৪লাখ টাকার। জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এবছর পুকুর মালিক, দিঘি ও খামারিদের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১৪১ জন।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সুনামগঞ্জ সদর ও দোয়ারাবাজার ও ছাতক উপজেলার খামারিরা।
জেলা মৎস্য অধিদপ্তর কর্মকর্তা শংকর রঞ্জন দাশ বলেন, খামারিদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি আমরা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। যদি সরকার থেকে সাহায্য প্রদান করা হয় তাহলে সুনামগঞ্জের খামারিরা তা পাবে।