জেলাজুড়ে ইয়াবা’র রমরমা ব্যবসা। শহর ছাড়িয়ে এখন গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ছে ইয়াবা। প্রায়ই জেলায় পুলিশি অভিযানে গ্রেফতার হচ্ছে ইয়াবা সেবনকারীরা ও খুচরা বিক্রেতারা। তবে মূল হোতারা রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
‘বাবা’, ‘গুটি’, ‘পিল’, ‘ভল্টার’ হিসেবে পরিচিত মাদক ইয়াবা। গত ঈদুল ফিতরের পর থেকেই আলোচনায় আসে শহরে ইয়াবায় আসক্ত তরুণদের বিষয়টি। সদর থানার পুলিশের একটি দল নতুন কোর্ট এলাকা থেকে তেঘরিয়ার রাব্বী ও বিলপাড়ের অপুকে ইয়াবাসহ গ্রেফতার করে। এর কয়েকদিন পরই বাঁধনপাড়ার সাঈদকে ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয়। গত সপ্তাহে শহরের তেঘরিয়া লম্বাহাটি এলাকা থেকে পুলিশি অভিযানে ইয়াবাসহ এলাকার মৃত রইছ আলীর ছেলে আব্দুল মালেক (৩৫)-কে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তার দেহ তল্লাশী করে ৭ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগের দিন দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার শান্তিগঞ্জ বাজারে ইয়াবাসহ দুই জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়া গত শুক্রবার সন্ধ্যায় তাহিরপুর সীমান্তে ৩৫ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, মোটরসাইকেলসহ একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত রইসুল ইসলাম (২০) উপজেলার শ্রীপুর (উত্তর) ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী কলাগাঁও গ্রামের মাইজহাটি মোড়ের পল্লী চিকিৎসক আবদুল মান্নানের ছেলে।
গত বছর থেকেই সুনামগঞ্জে ইয়াবার বিস্তার ঘটতে থাকে। পরিবহন সহজলভ্য হওয়ায় দ্রুত মাদক হিসেবে ইয়াবা জনপ্রিয় হয়ে উঠে যুব সমাজের কাছে। সেবন ছাড়া বিক্রিতে লাভ হওয়ায় অনেক তরুণ এই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। সুনামগঞ্জ সদর ও তাহিরপুর উপজেলায় ইয়াবার বিস্তার বেশি ঘটেছে। এসব ইয়াবা আবার ‘সেভেন’ ও ‘চম্পা’ হিসেবে পরিচিত। সুনামগঞ্জ সদরে সিলেট থেকে ও তাহিরপুর উপজেলায় ভৈরব থেকে ইয়াবা ঢুকছে। জেলার বাইরের কিছু মাদক ব্যবসায়ী সুনামগঞ্জে ইয়াবা ঢুকিয়ে লাখ লাখ টাকা আয় করছে। এই দুই উপজেলায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সবচেয়ে বেশি ইয়াবাসেবী ও বিক্রেতা আটক হচ্ছে। তবে ইয়াবার বড় ডিলারদের ধরতে পারছে না পুলিশ।
ইয়াবার মরণ ছোবলে তরুণ সমাজ আজ ধংসের পথে। তাই ইয়াবাসহ সব মাদকদ্রব্য পাচার বন্ধে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীকে কঠোর মানসিকতার পরিচয় দিতে হবে। ইয়াবা পাচারকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে নজির স্থাপন করতে হবে। ইতোমধ্যে যারা ইয়াবার আসক্তিতে ভুগছেন তাদের নৈতিকভাবে বুঝিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে হবে এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। মাদকাসক্তিমুক্ত, সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশ তৈরি করতে এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনিক কার্যক্রম জোরদার করতে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি সমাজের সচেতনমহলও বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সর্বস্তরের মানুষের মাদক প্রতিরোধ আন্দোলনের মাধ্যমে ইয়াবাসহ মাদকমুক্ত দেশ গড়া সম্ভব হবে।