স্টাফ রিপোর্টার ::
জেলা শহরের একটি চিহ্নিত চক্র ড্রেজার মেশিন দিয়ে সুরমা নদী থেকে অবৈধভাবে মাটি উত্তোলন করছে। হাইড্রোলিক চার্ট ব্যতীত এবং প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে অবৈধভাবে মেশিনে মাটি উত্তোলন করায় হুমকিতে পড়েছে সুরমা নদীর পাড়ের বিভিন্ন গ্রাম। এ ঘটনায় সদর উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ গতকাল শনিবার ড্রেজার মেশিন আটক করে বিক্ষোভ করেন। পরে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ড্রেজার মেশিনের চালকদের ডেকে এনে এই এলাকা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
জানা গেছে, সুনামগঞ্জ শহরের এক প্রভাবশালী পৌর কাউন্সিলর প্রায় মাস খানেক ধরে প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়া সদর উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের সুরমা নদী তীর থেকে দুটো মেশিনে দিনে-রাতে মাটি উত্তোলন করছেন। এমভি আলিফা ইসরাত নামের ওই ড্রেজার মেশিনসহ আরেকটি মেশিন দিয়ে প্রকাশ্যে অনুমতি ছাড়া মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। এ ঘটনায় এলাকার তরুণ সমাজ প্রতিবাদ করলে শহরের ওই জনপ্রতিনিধি তাদের হুমকি-ধমকি দেন। গত শুক্রবার তরুণরা সংগঠিত হয়ে এই এলাকায় মাটি উত্তোলন না করার জন্য ড্রেজার মেশিনের চালককে অনুরোধ জানান। কিন্তু অনুরোধ না মেনে শহরের ওই জনপ্রতিনিধির প্রভাবে চালকরা সাধারণ মানুষের প্রতিবাদকে তোয়াক্কা না করে মাটি উত্তোলন করতে থাকে। শনিবার সকালে আবারও এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ড্রেজার মেশিন আটক করে জয়নগর বাজার নিয়ে আসেন। এসময় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. নূরুল হক এলাকাবাসীকে শান্ত করে দ্রুত ড্রেজার মেশিন নিয়ে এই এলাকা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। জানা গেছে, এই নির্দেশ মেনে মেশিন সরিয়ে নিয়ে আসলেও মোহনপুর ইউনিয়নের শেষ সীমানায় সুরমা নদীর তীরে ড্রেজার মেশিন আবার নোঙ্গর করে রেখেছে। রাতে মাটি কাটার জন্য ওখানে মেশিন দুটো রাখা হয়েছে বলে এলাকাবাসী জানান।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মোহনপুর ইউনিয়নের সুরমা নদীর তীর হাইড্রোলিক চার্টে নেই। তাছাড়া এই ইউনিয়নের পৈন্দা, রহতপুর, বাণীপুর ও মোহনপুর গ্রামের অনেক ঘর-বাড়ি ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এই অবস্থায় গত এক মাস ধরে টানা অবৈধভাবে মাটি উত্তোলন করায় আরো ঝুঁকির মুখে পড়েছে এলাকায় বসবাসকারী লোকজন। এর প্রতিবাদে স্থানীয় যুবকেরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও সচিত্র ছবি দিয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
এলাকার প্রতিবাদী যুবক আলী আহমদ বলেন, আমাদের ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী প্রতিটি গ্রাম ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি এই ড্রেজার মেশিনের কোনো অনুমতি নেই এবং প্রশাসনের হাইড্রোলিক চার্টেও আমাদের এলাকার নাম নেই। তারপরও আমাদের এলাকার কয়েকজন দুষ্কৃতিকারীর সহায়তায় বহিরাগত লোকজন মাটি তুলে আমাদের ঝুঁকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। গত শুক্রবার আমরা প্রতিবাদ করেছি। শনিবার এলাকার মানুষ ড্রেজার মেশিন আটক করে নিয়ে আসার পর আমাদের চেয়ারম্যান মহোদয় তাদেরকে অবিলম্বে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহান বলেন, মোহনপুর ইউনিয়নসহ আশপাশের এলাকায়ও সুরমা নদী থেকে ড্রেজারে মাটি তোলার অনুমতি কারো নেই। এই এলাকা হাইড্রোলিক চার্টেও নেই। কিছু দুষ্কৃতিকারী রাতের আঁধারে বিভিন্ন এলাকায় এভাবে মাটি উত্তোলন করছে বলে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। তবে আমাদের অফিস আওয়ারের বাইরে তারা মাটি উত্তোলন করায় ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না। এ ক্ষেত্রে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ড্রেজার মালিকদের ডেকে এনে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করার চিন্তা-ভাবনা করছেন।