বিশেষ প্রতিনিধি ::
হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং অসময়ের ঢলে গত চৈত্র মাসে সুনামগঞ্জসহ ৬ জেলার হাওরের সম্পূর্ণ ফসল তলিয়ে যায়। হাওরের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে মানবিক সহায়তা দিতে তাৎক্ষণিক এগিয়ে আসে সরকার। গত ২৩ এপ্রিল থেকে সুনামগঞ্জসহ ৬ হাওর জেলার ৩ লাখ ৮০ হাজার কৃষক পরিবার তিন মাসের জন্য প্রতি মাসে ৩০ কেজি চাল ও ৫শ টাকা দেওয়ার প্রণোদনা (বিশেষ ভিজিএফ) দেয়। খাদ্যসংকটের সময়ে সরকারি সহায়তা পেয়ে প্রাণ ফিরে পায় হাওরের ফসলহারা কৃষক। কিন্তু গত জুলাই মাসে মেয়াদ শেষ হওয়ায় আবার অন্ধকার দেখেন হাওরবাসী। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে প্রণোদনার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য মানববন্ধন, সভা, সমাবেশসহ স্মারকলিপি প্রদান করে ‘হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলন’। অবশেষে সরকার ফসলহারা কৃষকের সহায়তার মেয়াদ আরো তিনমাস বাড়িয়েছে। এই সহায়তা আগামী অক্টোবর পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। ইতোমধ্যে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকসহ ৬ জেলা প্রশাসককে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর থেকে বরাদ্দপত্র পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, সুনামগঞ্জের শতভাগ ফসল তলিয়ে যাওয়ার পর তাৎক্ষণিক ১৭ এপ্রিল সুনামগঞ্জে ছুটে আসেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি ফসলহারা কৃষকের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে সরকারকে দ্রুত সহায়তা প্রদানের আহ্বান জানান। পরে ১৯ এপ্রিল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোয়াজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ৬ জেলার ফসলহারা প্রান্তিক, ক্ষুদ্র ও দরিদ্র চাষীকে সহায়তার জন্য ১০০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এই তালিকায় সুনামগঞ্জ জেলার দেড়লাখ কৃষক পরিবার রয়েছে। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৩০ এপ্রিল সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় হাওরের ফসলহারা কৃষককে সহায়তা দিতে এসে মৎস্যজীবীদেরও সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে সুনামগঞ্জ জেলার প্রায় ১৮ হাজার মৎস্যজীবীকে সহায়তা দেওয়া হয়। এদিকে ১০০ দিনের সহায়তা (৩০ কেজি চাল ও ৫০০টাকা) কর্মসূচি গত জুলাই মাসে শেষ হয়ে যায়। এখন সরকারি সিদ্ধান্তে আবার সুনামগঞ্জ জেলার দেড় লাখ কৃষক পরিবার অক্টোবর পর্যন্ত এই সহায়তা পাবে।
এদিকে ফসলহারা কৃষকদের প্রণোদনা বৃদ্ধির খবরে উচ্ছ্বসিত হয়েছেন সুনামগঞ্জের চাষীরা। তারা সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান বলেন, আমরা সরকারি প্রণোদনা বৃদ্ধির জন্য মানববন্ধন, সমাবেশসহ প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছিলাম। ফসলহারা কৃষকের সহায়তা বৃদ্ধির এই আহ্বানে সরকার সাড়া দেওয়ায় আমরা খুশি। কৃষকের জন্য অন্যান্য সহায়তা প্রদানেরও আহ্বান জানান তিনি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম বলেন, সুনামগঞ্জের হাওরের ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় দেড় লাখ কৃষক পরিবারের সহায়তা আরো তিন মাস বৃদ্ধি করা হয়েছে। আগামী অক্টোবর মাস পর্যন্ত এ জেলাসহ অন্য ছয় জেলার কৃষকরা প্রতি মাসে ৩০ কেজি চাল ও ৫শ টাকা পাবেন। দুর্গত মানুষের পাশে সরকারের হয়ে মাঠপ্রশাসন হিসেবে আমরাও কাজ করছি।