জগন্নাথপুর প্রতিনিধি ::
জগন্নাথপুর উপজেলার চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান বাবুল মাহমুদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় এলাকায় ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।
জানা গেছে, গত ২৫ জুন চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়ন পরিষদে ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জুয়েল মিয়া দরিদ্র লোকজনের মধ্যে ভিজিএফের চাল বিতরণ করছিলেন। এ সময় ভুক্তভোগীরা প্যানেল চেয়ারম্যান বাবুল মাহমুদের কাছে গিয়ে চাল ওজনে কম দেয়ার নালিশ করেন। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে প্যানেল চেয়ারম্যান বাবুল মাহমুদ স্থানীয় মহিলা ইউপি সদস্যকে নিয়ে সুবিধাভোগী লোকদের চাল কম না দিয়ে জুয়েল মিয়াকে সঠিক পরিমাণে চাল দেওয়ার অনুরোধ জানান। এ নিয়ে প্যানেল চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। ভুক্তভোগী লোকজন প্যানেল চেয়ারম্যানকে ইউপি সদস্য জুয়েল মিয়ার বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি ও নানা অনিয়মের অভিযোগ আনেন। ওই সময় সুবিধাভোগীদের তোপের মুখে পড়ে এক পর্যায়ে ইউপি সদস্য জুয়েল মিয়া রাগে-ক্ষোভে চাল বিতরণ না করেই চলে যান। অরক্ষিত চালগুলো পরে মহিলা ইউপি সদস্য ও স্থানীয় গণ্যমান্যদের নিয়ে সুবিধাভোগীদের মধ্যে প্রকাশ্যে বণ্টন করে দেন প্যানেল চেয়ারম্যান বাবুল মাহমুদ। এতে তারা খুশি হয়ে ফিরে যান। পরে ওই ইউপি সদস্য বাবুল মাহমুদের বিরুদ্ধে থানায় এসে অভিযোগ করলে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এই বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারও অবগত ছিলেন। এসময় জুয়েল মিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে লিখিত আবেদনও করেন। এই অভিযোগটি নিয়ে আলোচনায় বসার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ জুয়েল মিয়া প্রশাসনের আবেদনটিকে পাশ কাটিয়ে সোমবার থানায় ইউপি সদস্য বাবুল মিয়া মামলা দায়ের করেন। মামলাটি রেকর্ড করে পুলিশ তাৎক্ষণিক পৌর শহর থেকে এলাকায় প্রতিবাদী ও সৎ হিসেবে পরিচিত তরুণ জনপ্রতিনিধি বাবুল মাহমুদকে গ্রেফতার করে।
এদিকে, এলাকার জনপ্রিয় ব্যক্তি প্যানেল চেয়ারম্যান বাবুল মাহমুদ গ্রেফতার হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে জনমনে ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজন থানায় গিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্যানেল চেয়ারম্যান বাবুল মাহমুদের নেতৃত্বে এলাকার ৯ ইউপি সদস্য কিছুদিন আগে চেয়ারম্যান আরশ মিয়ার বিরুদ্ধে অনাস্থা অভিযোগের আবেদন করেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এলাকাবাসী জানান, প্যানেল চেয়ারম্যান বাবুল মাহমুদ সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়াত জাতীয় নেতা আবদুস সামাদ আজাদের পুত্র আজিজুস সামাদ ডন অনুসারী আ.লীগ নেতা। চেয়ারম্যান আরশ মিয়া ও মামলার বাদী ইউপি সদস্য জুয়েল মিয়া অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান অনুসারী আ.লীগ নেতা হিসেবে পরিচিত। তার গ্রেফতারের নেপথ্যে রাজনৈতিক ও সাম্প্রতিক অনাস্থা অভিযোগের আবেদনের ঘটনা সম্পৃক্ত বলে মনে করেন এলাকাবাসী।
গ্রেফতার হওয়ার পর প্যানেল চেয়ারম্যান বাবুল মাহমুদ জানান, আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করায় আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জগন্নাথপুর থানার এসআই কবির উদ্দিন জানান, সরকারি ভিজিএফ এর চাল বিতরণে বাধা, লুটপাট ও চুরির অভিযোগে আরেক ইউপি সদস্য জুয়েল মিয়া জগন্নাথপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার আলোকে প্যানেল চেয়ারম্যান বাবুল মাহমুদকে গ্রেফতার করে সুনামগঞ্জ জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার বরকতুল্লাহ খান বলেন, ইউপি সদস্য গ্রেফতারের বিষয়টি শুনেছি। অভিযোগ সত্য না মিথ্যা তদন্তে প্রমাণিত হবে। তবে কারো প্রতি অবিচার হবেনা বলে তিনি জানান।